এই মুহূর্তে

WEB Ad Valentine 3

WEB Ad_Valentine

মা কালীর নয়টি রূপ সম্পর্কে জানুন

নিজস্ব প্রতিনিধি: ‘মুণ্ডমালা তন্ত্র’ অনুযায়ী দশমহাবিদ্যা হলেন তান্ত্রিকদের আরাধ্যা প্রধান দশ জন দেবী। এই দশ দেবী বা দশমহাবিদ্য়া হলেন শিবের অর্ধাঙ্গিনী দেবী পার্বতীর অবতার। এই দেবীরা হলেন কালী, তারা, ষোড়শী, ভৈরবী, ভুবনেশ্বরী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলা, মাতঙ্গী ও কমলাকামিনী। কালী যে দেবী পার্বতীর প্রধান এবং প্রথম অবতার তা নিয়ে কারও দ্বিমত নেই। শাক্ত বা শক্তিদেবীদের উপাসকরা মনে করেন মা কালীই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছেন। অপরদিকে ‘মহাকাল সংহিতা’ গ্রন্থে মোট নয় প্রকার কালীর পুজো করার বিধান রয়েছে। এঁরা হলেন দক্ষিণাকালী, গুহ্যকালী, শ্মশানকালী ,ভদ্রকালী, রক্ষাকালী, সিদ্ধকালী, মহাকালী, চামুণ্ডাকালী ও আদ্যাকালী। এবার জেনে নেওয়া যাক এই নয় প্রকার কালীর পরিচয়।

দক্ষিণাকালী-

আমরা যে ঘরে ঘরে বা বারোয়ারী মণ্ডপে কালীপুজো দেখি তা মূলত দক্ষিণাকালী মূর্তি। অর্থাৎ বাংলায় মা কালীর সবচেয়ে প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ মূর্তি হল দক্ষিণাকালী মূর্তি। দক্ষিণাকালীর প্রতিমায় দেবীর ডান পা অবস্থান করে শিবের বুকে, তাই দেবী কালিকার এই রূপের নাম দক্ষিণাকালী। আবার অনেক শাস্ত্রীয় পণ্ডিতের মতে দক্ষিণ দিকে যমের আবাস এবং যে কালী প্রতিমা দর্শনে যমও ভয়ে স্থানত্যাগ করেন তিনিই দক্ষিণাকালী। এই রূপে মা দিগম্বরী, মুক্তকেশী, করালবদনা ও চতুর্ভুজা। জিহ্বাটি মুখের বাইরে ঝুলে আছে এবং জিহ্বাকে ছুঁয়ে আছে উপরের পাটির দুধসাদা দাঁতের সারি। গায়ের রঙ ঘোর অমানিশার মতো কালো। তাঁর কণ্ঠে শোভা পায় ৫১ বা ১০৮ টি নরমুণ্ড দিয়ে গাঁথা মুণ্ডমালা। দেবীর নিম্নাঙ্গ ঢাকা থাকে নরহস্ত দিয়ে প্রস্তুত করা কটিবাস দিয়ে। দেবীর উপরের বাম হাতে থাকে শক্তির প্রতীক খড়্গ। খড়্গের বুকে একটি চোখ আঁকা থাকে। দেবীর নীচের বাম হাতে থাকে একটি নরমুণ্ড। উপরের ডান হাত ও নীচের ডান হাত থাকে বর ও অভয় মুদ্রায়। বাংলার বেশিরভাগ মন্দিরে দক্ষিণাকালীর পুজো করা হয়।

গুহ্যকালী-

মা কালীর অতীব ভয়ঙ্কর রূপ হলেন মা গুহ্যকালী। দেবী দ্বিভুজা, গায়ের রঙ ঘন কালো মেঘের মতো। মাথায় জটা, সেই জটার ওপর অবস্থান করছে অর্ধচন্দ্র। জিহ্বাটি মুখের বাইরে অবস্থান করছে। মা গুহ্যকালীর গলায় শোভা পায় পঞ্চাশটি নরমুণ্ড দিয়ে গাঁথা মালা। দু’টি কান থেকে ঝুলছে দু’টি শবদেহ। মায়ের কোমরে ঘনকালো কটিবাস। মায়ের কাঁধ থেকে পৈতার মতো ঝুলে আছে সাপ। এমনকি মাকে চারদিক থেকে ঘিরে আছে ফণা তোলা সাপের দল। মায়ের বাম কঙ্কণে বিরাজ করছে তক্ষক ও ডান কঙ্কণে নাগরাজ। গৃহস্থ বাড়িতে মা গুহ্যকালীর পুজো হয় না। সাধারণত সাধকরাই এই কালীর আরাধনা করে থাকেন।

শ্মশান কালী-

শ্মশানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন শ্মশান কালী। শ্মশানকালীর গায়ের রং কাজলের মতো কালো, চোখদুটি রক্তপিঙ্গল বর্ণের, ও কেশরাশি আলুলায়িত। মায়ের কপালে শোভা পায় অর্ধচন্দ্র এবং শরীরে নানান অলঙ্কার। দেবীর ডান হাতে নরমুণ্ড ও বাম হাতে নরকরোটি নির্মিত পানপাত্র। মা দাঁড়িয়ে আছেন শবরূপী মহাদেবের ওপর। গৃহস্থবাড়িতে শ্মশান কালীর পুজো হয় না। তান্ত্রিকেরা মদ ও মাংস দিয়ে শ্মশান কালীর পুজো করে থাকেন। জানা যায় প্রাচীনকালে ডাকাতেরা ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে শ্মশান কালীর পুজো করে দেবীর সামনে নরবলি দিত। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগ শ্মশানে শ্মশানকালীর পুজো করা হয়।

ভদ্রকালী-

মা কালীর মঙ্গলময়ী রূপ হল ভদ্রকালী। মার্কণ্ডেয় পুরাণ মতে মহিষাসুরমর্দিনী দেবী চণ্ডী এবং ভদ্রকালী একই দেবী। ভদ্রকালীর বাহনও সিংহ। তবে ভদ্রকালীর ষোলটি হাত। সেই হাতে মা ধারণ করে আছেন শূল, চক্র, খড়্গ, শঙ্খ, বাণ, শক্তি, বজ্র, দণ্ড, খেটক, চর্ম্ম, চাপ, পাশ, অঙ্কুশ, ঘণ্টা, পরশু, মুশল। ভদ্রকালীর গায়ের রঙ অতসীফুলের মতো। মাথায় জটা, জটার ওপর বিরাজ করে মুকুট ও অর্ধচন্দ্র। ত্রিনয়ন থেকে নির্গত হয় অতীব উজ্জ্বল জ্যোতি। আবার কোনও মতে সরস্বতীকেও ভদ্রকালী বলা হয়। অপরদিকে তন্ত্রমতে ভদ্রকালী হলেন পাতালের দেবী। তন্ত্রসার গ্রন্থে দেবী ভদ্রকালীর একটি রূপের বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে অতীব ভীষণা মা ভদ্রকালী মুক্তকেশী, দুই হাতে মা ধারণ করে আছেন অগ্নিপাশ।

রক্ষাকালী-

অনেক শাস্ত্রজ্ঞ বলে থাকেন মা রক্ষাকালী আসলে দক্ষিণাকালীরই গৃহস্থ রূপ। প্রাচীনকালে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, মহামারী, দুর্ভিক্ষ থেকে গ্রাম ও নগরের রক্ষা করার জন্য মা রক্ষাকালী পূজা করা হত। মা রক্ষাকালী কখনও দ্বিভুজা, কখনও চতুর্ভুজা। ঘোর অমানিশার মতো গায়ের রঙ। নয়নদুটি রক্তবর্ণ, গলায় ঝোলে মুণ্ডমালা ও নাগহার। পরনে ব্যাঘ্রচর্ম নির্মিত কটিবাস। ডান হাত দুটিতে থাকে খড়্গ ও নীলপদ্ম। বাম হাত দুটিতে ধরে থাকেন খর্পর এবং অসি। বাম পা শবদেহের বুকে ও ডান পা থাকে সিংহের পিঠে। এই কালীর পুজো গৃহস্থের বাড়িতে হয়।

সিদ্ধকালী-

গৃহস্থের বাড়িতে সিদ্ধকালীর পূজা করার নিয়ম নেই। আসলে মা সিদ্ধকালী হলেন সাধকদের আরাধ্যা দেবী। কালীতন্ত্র অনুযায়ী মা সিদ্ধকালী মুক্তকেশী, দিগম্বরা, ত্রিনয়নী ও সালঙ্কারা। মাথায় মুকুট, নীলপদ্মের মতো গায়ের রঙ। দেবীর দুই কানে শোভা পাচ্ছে চন্দ্র ও সুর্য্যের মতো উজ্জ্বল কর্ণকুণ্ডল। দ্বিভুজা দেবীর ডান হাতে খড়্গ এবং বাম হাতে নরকরোটি নির্মিত অমৃতের পাত্র। খড়্গ দিয়ে চাঁদের বুক বিদীর্ণ করে চাঁদ থেকে ঝরে পড়া অমৃত পান করছেন দেবী। এই দেবীর আরাধনা পদ্ধতি বেশ জটিল। কঠিন পথ ধরে, বছরের পর বছর মা সিদ্ধকালীর সাধনা করে, সিদ্ধিলাভ করেন সাধকেরা।

মহাকালী-

তন্ত্রসার মতে মহাকালীর গায়ের রঙ ঘন নীল। তিনি দশভুজা এবং দেবীর তিরিশটি চোখ। তাঁর দশ হাতে খড়্গ চক্র, গদা, ধনুক, বাণ, পরিঘ, শূল, ভূসুণ্ডি, নরমুণ্ড ও শঙ্খ। আসলে এটি পার্বতীর অসুরবিনাশিনী ভৈরবী রূপ। শ্রী শ্রী চণ্ডীতে মা মহাকালীর আবির্ভাবকে সুন্দরভাবে বর্ণনা রয়েছে। শ্রীবিষ্ণুর কর্ণ থেকে জন্ম নিয়েছিল মধু ও কৈটভ নামে দুই শক্তিশালী অসুর। এই অসুরদ্বয় প্রজাপতি ব্রহ্মাকে আক্রমণ করলে ব্রহ্মা শ্রীবিষ্ণুর স্তব করেছিলেন। কিন্তু শ্রীবিষ্ণু তখন ছিলেন যোগনিদ্রায়। উপায় না দেখে ব্রহ্মা তখন আদিশক্তি মহাদেবীর স্তব শুরু করেন। তুষ্ট হলে মহাদেবী তখন শ্রীবিষ্ণুর যোগনিদ্রা ভঙ্গ করেছিলেন এই রুদ্র রূপ ধারণ করে।

চামুণ্ডা কালী-

এটিই মা কালীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রূপ। মার্কণ্ডেয় পুরাণ থেকে জানা যায়, চণ্ড ও মুণ্ড নামের দুই অসুরকে বিনাশ করার জন্য মা দুর্গার ললাট থেকে আবির্ভূত হয়েছিলেন মা চামুণ্ডা। তিনি চণ্ড ও মুণ্ডকে বিনাশ করেছিলেন, তাই তাঁর নাম চামুণ্ডা। দেবীর গায়ের রঙ অন্ধকার রাত্রির মতো। চুলের রঙ বাদামি। মুখের ভেতরে থেকে বেরিয়ে এসেছে বিশাল ও রক্তাভ জিহ্বা। দেবীর গলায় ঝোলে মুণ্ডমালা, দাঁতগুলি আকারে বড় ও অতীব ভয়ঙ্কর। দেবীর পরনে বাঘের ছাল।চতুর্ভুজা দেবী তাঁর ডানদিকের হাত দুটিতে ধারণ করে আছেন খট্টাঙ্গ ও বজ্র। বামদিকের হাত দুটিতে ধারণ করে আছেন পাশ ও নরমুণ্ড। মূলত দুর্গাপূজায় মহাষ্টমী ও মহানবমীর সন্ধিক্ষণে আয়োজিত সন্ধিপূজার সময় দেবী চামুণ্ডার পূজা করা হয়। চামুণ্ডা কালী মায়ের পূজার অধিকারী কেবল তান্ত্রিক এবং সাধকেরাই।

আদ্যাকালী-

এই দেবী কালস্বরূপা এবং আদিভূতা সনাতনী। তাই তিনি সবার মা। গৃহী থেকে সাধক, সবাই তাঁর পূজা করতে পারেন। আদ্যাকালীর গায়ের রঙ ঘন মেঘের মতো। মুখ থেকে জিভ সামান্য বেরিয়ে থাকে। চতুর্ভুজা আদ্যাকালী মায়ের চার হাতের বাম হাত দুটিতে থাকে অসি ও নরমুণ্ড। ডান হাত দুটি থাকে বরাভয় ও বরদা মুদ্রায়। কপালে চন্দ্রকে ধারণ করে থাকা ত্রিনয়নী মা রক্তবস্ত্র পরে রক্তপদ্মের ওপর বসে থাকেন। কোনও মূর্তিতে সামনের দিকে মাথা করে মহাদেবকে শুয়ে থাকতে দেখা যায় মায়ের পদতলে। মহাদেবের মাথার জটা দেখা যায়, কিন্তু মুখ দেখা যায় না।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

গন ভাইফোঁটার পরিকল্পনা নিয়েছে বসিরহাটের ‘নবোদয় সংঘ’

বনগাঁ থানার এবারের কালীপুজোর থিম ‘ কৈলাস পর্বতে মহাদেব’

বাঁকুড়ার সাঁতরা বাড়ির “বড় বৌমা” পূজিত হলেন মা কালীর রূপে

নৈহাটির বড়মার পুজোয় ভক্তদের ভিড়

তারাপীঠে সারারাত খোলা থাকছে গর্ভ গৃহের দরজা

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন উপবাস, নিজের হাতে রান্না করলেন ভোগ

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর