নিজস্ব প্রতিনিধি: মালদা শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে ইংরেজবাজার থানার রায়পুর গ্রাম। এখানেই রয়েছে এক অতি জাগ্রত মা কালীর মন্দির। কথিত আছে প্রায় ৩০০ বছর আগে উত্তরপ্রদেশের এক সাধক স্বপ্নাদেশ পেয়ে দেবী মা জহরার পুজো শুরু করেন। এমনকি একশো বছর আগেও এখানে ডাকাতরা পুজো দিতে আসতো। ডাকাত দল ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে ও পরে পুজো দিত জহরা কালী মন্দিরে। তবে আজ এই মন্দির সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির এক অনন্য নিদর্শনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। গ্রামীণ এই মন্দিরে কালীপুজোর সময়ে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চল ছাড়াও বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ সমবেত হন। এখানে কোনও প্রতিমা নেই, একটি মুখোশকেই দেবী রূপে পুজো করা হয়। যা এক কথায় অনন্য।
অন্যান্য কালীমন্দিরের মতো এখানে রাত্রিবেলা কোনও পুজো এখানে হয় না। সব পুজোই হয় দিনের আলো থাকাকালীন। সারা বছর প্রতি শনি আর মঙ্গলবারে পুজো হয়। এখানে কালীর এক রূপ চণ্ডী রূপে আরাধনা হয়। মন্দিরের গায়ে যে পাথরের ফলক আছে, তা থেকে জানা যায়, মোটামুটি ৩০০ বছর আগে উত্তরপ্রদেশের এক তান্ত্রিক সাধক এই গড়ে দেবী জহরা চণ্ডীর বেদি স্থাপন করেছিলেন। তিনি নাকি স্বপ্নাদেশ পেয়েই এখানে কালীর বেদি স্থাপন করেছিলেন। পরবর্তীকালে হীরারাম তিওয়ারি নামের আরেক সাধক দিব্যদর্শনে দেবীর রূপ প্রত্যক্ষ করেন। এবং পরবর্তীকালে তিনিই ওই বেদির উপর দেবীর মূর্তি স্থাপন করেন। তবে অনেকের মতে, সেন যুগের রাজা বল্লাল সেন এই অঞ্চলে অনেকগুলি মন্দির স্থাপন করেছিলেন। সেগুলির মধ্যে একটি হল এই জহরা কালী মন্দির।
এই কালী মন্দিরে মূল বিগ্রহ কিন্তু প্রচলিত মূর্তিগুলির মতো নয়। লাল রঙের ঢিবির ওপর রয়েছে এক মুখোশ। ঢিবির দু’পাশে আরও দু’টি মুখোশ দেখা যায়। এটাই দেবী চণ্ডী রূপে পুজো করা হয়। এছাড়া গর্ভগৃহে আছে শিব আর গণেশের মূর্তি। তবে কেউ কেউ মনে করেন, অনেক আগে দেবী জহরার পূর্ণাবয়ব বিগ্রহ ছিল এখানে। বিধর্মীদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য পুরোহিতরা সেই মূর্তিকে মাটি চাপা দিয়ে দিয়েছিলেন। স্থানীয় লোকশ্রুতি অনুযায়ী, এককালে এই এলাকা ছিল ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ। ফলে ডাকাতদের ছিল নিত্য আনাগোনা। তাঁরা ডাকাতি করে বহু মূল্যবান ধনরত্ন এনে এই মন্দিরে মাটির তলায় পুঁতে রাখতেন। সেই ধনরত্নের ওপরই দেবীমূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়। যেহেতু বিহার-ঝাড়খণ্ড লাগোয়া এই এলাকায় হিন্দি ভাষার চল রয়েছে। তাই দেবীর নাম হয়ে যায় জহরা বা জহুরা কালী মন্দির। কারণ ধনরত্নকে হিন্দিতে বলে ‘জওহর’।