অখণ্ড মেদিনীপুরের পুজো মানেই অন্য ধরণ। প্রাচীন সেই সমস্ত পুজো চলে আসছে বছরের পর বছর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও জনশ্রুতির হাত ধরে। তেমনই এক পুজো পশ্চিম মেদিনীপুরের আনন্দপুর সংলগ্ন হেটলাপাড়ার দুর্গা আরাধনা (DURGA PUJA)।
হেটলাপাড়া নামের উৎস ‘হাট’। শোনা যায় এখানে হাট বসত বলে এই গ্রামের নাম হয়েছিল হাটুয়া। আর তা থেকেই হয়ে গিয়েছে হেটলা। এই হেটলা পাড়াতেই রয়েছে দুর্গা মন্দির। এখানের পুজো ২৫০ বছরেরও বেশি প্রাচীন।
শোনা যায়, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রথম রাজনৈতিক বন্দিনী (সম্ভবত) রানি শিরোমণি মাল বংশের পূর্বপুরুষদের দান করেছিলেন জায়গীর ও সম্পত্তি। এমনকি দেবী দুর্গার মন্দিরের পাশে কাটিয়ে দিয়েছিলেন পুকুর। এই মন্দিরেই আরাধনা হয় দেবী দুর্গার। এখানে দেবীর দুই হাত। তিনি পূজিতা হন ঘরের মেয়ে রূপে। তার এক হাতে থাকে পদ্ম আর অন্য হাতে থাকে বরাভয়। পুজো হয় দেবীর স্বামী বুড়োশিব এবং ‘মেয়ে-জামাই’- এর চার সন্তান-সন্ততির। প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে সকলেই থাকেন এক চালায়। বংশপরম্পরায় একই পরিবারের পুরোহিত এবং ঢাকি অংশ নেন এই পুজোয়।
কথিত আছে, হরিচরণ মাল করতেন মহাজনি কারবার। এই কাজের জন্যই ব্রিটিশদের সময়ে জেলে যেতে হয়েছিল তাঁকে। জেলবন্দি থাকাকালীন তিনি স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন দেবী দুর্গার আরাধনা করার। জেলমুক্তির পরে তিনি প্রচলন করেছিলেন এই পুজোর। তাঁর কোনও এক উত্তর পুরুষের পুত্র সন্তান হয়নি। একমাত্র কন্যা সন্তান ছিল। তাঁর নাম মান কুমারী। পূর্ণচন্দ্র দের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল মানকুমারীর। তখন থেকেই বংশপরম্পরায় দেবী আরাধনা করে আসে দে বংশ।
এই গ্রামেই রয়েছে তমাল নদী। এখানেই হয় মাটি পুজো। তারপর শুরু হয় প্রতিমা নির্মাণ। আর পুজো শুরু হয়ে যায় জন্মাষ্টমী থেকেই। বিজয়া দশমীর দিন কনকাঞ্জলীর পরে তমাল নদীতে সূর্যাস্তের আগে নিরঞ্জন করা হয় প্রতিমার। মন্দির থেকে নদী পর্যন্ত দেবীকে নিয়ে যাওয়া হয় কাঁধের ওপরে বাঁশে চাপিয়ে। তিনটি বাসে করে প্রতিমা বহন করেন মাঝিরা। বিসর্জনের পরে প্রতিমার কাঠামো রেখে দেওয়া হয় তমাল নদীর ধারেই। মাল এবং দে পরিবারের প্রতিমা নিরঞ্জনের পরে নিরঞ্জন হয় এলাকার অন্যান্য প্রতিমার।
- নিসর্গ নির্যাস