নিসর্গ নির্যাস: কাঁচা বয়সে পুষ্পাঞ্জলির দিন হয়ে ওঠে প্রেম দিবস। অনেকদিনের মধ্যে বুকে পোষা ইচ্ছেটা চাগাড় দিয়ে ওঠে পুষ্পাঞ্জলির দিন। হ্যাঁ পুজোর কটা দিন পুষ্পাঞ্জলি রোজই হয়। তবু মহাষ্টমী’র দিনেই ঢল নামে এই উপাচারের। আর পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার ছলেই ফুল গিয়ে পড়ে কাঙ্খিত মানুষটির খোলা চুল, মুখ বা পিঠে। এবারেও হলো তাই।
ঘটনা মেদিনীপুরের রবীন্দ্র নগরের। বড় পাড়া। গজিয়ে উঠেছে অনেক ফ্ল্যাট। সেরকমই এক ফ্ল্যাটে থাকে কোনও এক সুন্দরী। তবে ছেলে বেপাড়ার, থাকে বিধাননগরে। অল্প বয়সে প্রেমের ইচ্ছে মধুর হলেও পরিবারের কাছে তা অপরাধ! কিন্তু হৃদয় কি আর শোনে! মুখ ফুটে প্রিয় মানুষটিকে বলতেও পারছিল না মনের কথা। ছেলেটার বয়স মেরে কেটে ১৭। আর তার মনের মানুষের বয়স ওই সতেরোই। একই কোচিংয়ে পড়ে ওরা, তবে অন্য ব্যাচ।
পুষ্পাঞ্জলির সময়ে প্রেমের টানে নিজের পাড়া ছেড়ে ছেলে ছুটে গিয়েছিল তার প্রিয় মানুষটির পাড়ায়। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরে দেখা পেয়েছিল সাধের মানুষের। বুকে ইচ্ছে নিয়ে ছেলেটি দাঁড়িয়ে পড়েছিল মেয়েটির পেছনে, একটু দূরেই।
পুষ্পাঞ্জলি হয় ৩বার। আর শেষ বার ফুল ছাড়া করজোড়ে প্রার্থনা। প্রথম দু’বারে সাহস পায়নি প্রেমিক। তবে শেষবারে অনেকটা শ্বাস নিয়ে ফুল ছুঁড়ে দিলো প্রিয়তমার দিকে। পুজোর ফুল তাই ছিল না গোলাপ। বরং গাঁদা, অপরাজিতা ফুলের সঙ্গে ছিল এক টুকরো বেল পাতাও। নিখুঁত লক্ষ্য প্রেমিক পুরুষের। সেই ফুল সোজা লাগল প্রেমিকার গালে। তখনও অবশ্য পুরোহিত বলে চলেছেন, ‘পুজোর ফুল ছুঁড়বেন না, ঝুড়িতে ফেলুন’। অন্যদিকে, চোরা চাহনিতে ফুল ছুঁড়েই মুখ লোকাল প্রেমিক। তবে তা চোখ এড়ায়নি যৌবনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা হবু নারীর। একে বেশ চেনে সে। কত বার যে তার সাইকেলের পিছু নিয়েছে!
প্রথম দিকে কপট বিরক্তি নিয়ে তাকালেও, হেসে ফেলেছিল শিউলি (নাম পরিবর্তিত)। বীর প্রেমিক পালিয়েছিল এক ছুটে। মণ্ডপের বাইরে দাঁড়িয়েছিল কিছুক্ষণ। হঠাৎ দেখে উল্টো দিক থেকে তারই দিকে এগিয়ে আসছে প্রিয় মানুষ। পালাতে চেয়েছিল সে। তবে তার নাম ধরে দাঁড়াতে বলেছিল মেয়েটির পাশে থাকা বান্ধবী। একটু পরেই হাসি ফুটেছিল ওদের। আর তারপর দুজনেই মোবাইল বার করেছিল ওরা। নম্বর নিল কি অরণ্য? (নাম পরিবর্তিত)। বছরের পর বছর আসে আধুনিকতা। তবে বদলায় না প্রেমের এই পর্যায়টুকু।
গোঁড়া ধার্মিকরা বলবেন, এ ঘোর অন্যায়। কিন্তু আজও তো সকলের গুলিয়ে যায়, কোনটা প্রেম (LOVE) আর কোনটা পুজো (PUJA) পর্যায়ের গান। এই প্রেম কাহিনী’র শুরুর নাম দেওয়া যায় ‘শরৎ-বসন্ত’।