কৌশিক দে সরকার: তিনি ঘন ঘন শিবির বদলান। পাল্টি মারতে তাঁর মতো ওস্তাদ আর কেউ নেই। কিন্তু তাঁর এই পাল্টিবাজ মানসিকতাই তাঁকে এখন দেশে তৈরি হওয়া বিজেপি(BJP) বিরোধী জোট INDIA-তে কার্যত একঘরে করে দিয়েছে। এমনকি তিনি যে যে কোনওদিন জোট ছেড়ে চলে যেতে পারেন, সেটাও ভেবে নিয়েছেন বাকি জোট শরিকেরা। এটাই এখন কোনঠাসা নীতীশ কুমারের(Nitish Kumar) দশা। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী এবং নিজ দল JD(U)’র মাথা হওয়ার পরেও এখন নিজ কর্মগুণে তিনি তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে বসে আছেন। তবে ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, নীতীশের এহেন দশার জন্য সব থেকে বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর মমতা বিরোধিতার নীতি। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল(TMC) সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) নীতীশ বিরোধী না হলেও নীতীশ একাধিক বার নানা ইস্যুতে মমতা ও বাংলার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। আর সেই মমতা বিরোধিতারই এখন মাশুল গুনছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী।
জেডিইউ সুপ্রিমো নীতীশ যেমন পাল্টিবাজ, ঠিক তার উল্টো মমতা। বাজপেয়ীর জমানায় তিনি বিজেপির হাত ধরলেও তখনকার সেই দলের স্বভাব চরিত্র কোনওটাই মোদি জমানার বিজেপির সঙ্গে মেলে না। মোদি জমানায় বিজেপির সব থেকে বড় ও বিশ্বাসযোগ্য বিরোধী দল হিসাবে গোটা দেশের মধ্যেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে তৃণমূল। আর সেটা সম্ভব হয়েছে মমতার জন্য। কেননা বিজেপি এখনও তাঁকে কিনে নিতে পারেনি। তাঁর বিজেপি বিরোধিতায় কোনও ফাঁক নেই। কোনও ভেজাল নেই বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে। সেই লড়াই তাঁকে দেশের মধ্যে প্রধান মোদি ও বিজেপি বিরোধী মুখ হিসাবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। একই সঙ্গে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক নেত্রী হওয়ার সুবাদে তিনি তুলনায় তরুণ প্রজন্মের নেতাদের সমর্থনও আদায় করে নিচ্ছেন। সেই দলে যেমন অখিলেশ সিং যাদব আছেন, তেজস্বী যাদব আছেন, তেমনি আছেন উদ্ধব ঠাকরে, অরবিন্দ কেজরিওয়ালরাও। দক্ষিণের স্ট্যালিন ও কানিমোঝিরাও তাঁকে খুব পছন্দ করেন। কার্যত অঘোষিত ভাবে মমতাই এখন INDIA’র সর্বগ্রহণযোগ্য মুখ হয়ে উঠেছেন। সেই মমতার বিরোধিতা শুরু করতেই নীতীশ সকলের বিষ নজরে পড়ে গিয়েছেন।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী থাকলেও একক ক্ষমতার জোরে নীতীশ পদ পাননি। তাঁকে সমর্থন দিচ্ছে কংগ্রেস এবং লালু প্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দল। নীতীশ ও লালুর মধ্যে বোঝাপড়া অনুযায়ী চলতি মাসেই বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি ছেড়ে দিতে হবে নীতীশকে। সেই জায়গায় আসবেন লালুপুত্র তেজস্বী যাদব। কিন্তু এখন নীতীশ সেই পদ ছাড়তে নারাজ। উল্টে তলে তলে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন যাতে লালুর দল তাঁর দিকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে যেন তিনি সরকার চালিয়ে যেতে পারেন। আর সেই খবর সামনে আসতেই INDIA’র অন্দরে নীতীশকে নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। সেই কারণেই মমতা ও তৃণমূল নীতীশকে INDIA জোটের আহ্বায়ক করতে আপত্তি জানায়। কার্যত নীতীশের দল ছাড়া সবাই তা মেনেও নেয়। মমতা আরও বেশি করে নীতীশের নাম নিয়ে আপত্তি জানান এই কারণে যে মমতা INDIA জোটের বৈঠকে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের নাম প্রস্তাব করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য। সেই নামে বিরোধিতা করেন নীতীশ। তাই এবার আর মমতা ঝুঁকি নেননি। গতকাল মমতা ও তৃণমূলের অনুপস্থিতিতেই মমতার প্রস্তাবেই শিলমোহর দিয়েছে INDIA জোট। খাড়গে হয়েছে জোটের চেয়ারপার্সন। নীতীশ খালি হাতেই থেকেই গেলেন মমতা বিরোধিতা করে। পাশে কেউ নেই বললেই চলে।