এই মুহূর্তে




অব্রাহ্মণ হয়েও পুরীধামের দয়িতাপতিদের এত ক্ষমতা এল কোথা থেকে ?




নিজস্ব প্রতিনিধি: পুরীর শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দিরে মহাপ্রভুর সেবায়েতের কথা উঠলেই সর্বাগ্রে উঠে আসে দয়িতাপতি সম্প্রদায়ের নাম। মহাপ্রভুর সেবক বলতেই দয়িতাপতি। তবে, কী তাঁরা প্রধান পুরোহিত? না, তাঁরা মোটেই পুরোহিত নন। শুধু তাই নয়, জানলে অবাক হতে হবে, যে, তাঁরা ব্রাহ্মণও নন। অব্রাহ্মণ হওয়া সত্ত্বেও শ্রী মন্দিরের সেবাইত শ্রেণির মধ্যে দয়িতাপতি সেবকদের স্থান এতটাই বিশেষ যে, তাঁদের হাতে নির্দ্বিধায় সঁপে দেওয়া হয় জগন্নাথদেবের মহাপুজো ও অনন্য গোপন আচার-অনুষ্ঠানের দায়িত্ব। এমনকী মহাস্নান পূর্ণিমা থেকে রথযাত্রা পর্যন্ত প্রায় এক মাসের দীর্ঘ সময় শুধুমাত্র এই দয়িতাপতিরাই জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার পূজা-অর্চনা, পরিষেবা, অলংকরণ সবকিছু সুসম্পন্ন করেন। শুধু তাই নয়, নবকলেবরের সময় বা অনবসর অনুষ্ঠানেও তাঁদের ভূমিকা অপরিসীম, যেখানে অন্য ব্রাহ্মণ সেবকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠা অসম্ভব নয় যে, কী ভাবে এর প্রচলন হয়েছিল ? অব্রাহ্মণ হয়েও দয়িতাপতিদের এত ক্ষমতা এল কোথা থেকে ?

পুরাণ মতে, মহাপ্রভু শ্রী জগন্নাথ স্বয়ং রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নকে নির্দেশ দিয়েছিলেন শবররাজা বিশ্বাবসু ও ব্রাহ্মণ বিদ্যাপতির বংশধরদের ভবিষ্যতে তাঁর সেবায় নিয়োজিত করতে। স্কন্দপুরাণে এই কাহিনি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখিত। বিশ্বাবসুর বংশধরদেরই দয়িতা সেবক বলা হয়। ‘দয়িতা’ শব্দটির উৎপত্তি নিয়ে দুই ধরনের মত প্রচলিত। কেউ বলেন, ‘দৈত্য’ অর্থাৎ অরণ্যবাসী জাতি, যে শব্দের অপভ্রংশ ‘দয়িতা’; দৈত্য অর্থাৎ শবর, ভিল ইত্যাদি। আবার, কেউ কেউ মনে করেন, সংস্কৃত ‘দয়িত’ অর্থাৎ প্রিয় শব্দ থেকেই ‘দয়িতা’ শব্দের উদ্ভব। কারণ, জগন্নাথের ‘দয়িত’ বা প্রিয়জন হলেন এই দয়িতা সেবকরা।

এই দয়িতাপতিদের কাজ শুধুই আচারিক নয়; তাঁরা জগন্নাথের আত্মীয় হিসেবেও পরিচিত। জানা আবশ্যক যে – নবকলেবর অনুষ্ঠানের সময় পুরনো দারু বিগ্রহ থেকে নতুন দারু-বিগ্রহে ‘ব্রহ্ম পদার্থ’ স্থানান্তরের গোপন ও মহার্ঘ দায়িত্ব তাঁদেরই থাকে। এই ব্রহ্মতত্ত্বের স্থানান্তর এতটাই গোপন যে, দয়িতাপতি ছাড়া অন্য কারও প্রবেশ সেখানে নিষিদ্ধ।

পতি মহাপাত্ররা হলেন বিদ্যাপতির বংশধর, যাঁরা মন্দিরের আচার ও শাস্ত্রবিধি সংক্রান্ত কাজ করেন। অপরদিকে দয়িতাপতি সেবকরা বিশ্বাবসুর বংশের, যাঁরা প্রধানত দেহসেবার দায়িত্ব পালন করেন। তাঁদের হাতে জগন্নাথদেবের অনবসর, স্নান, শয্যা, বস্ত্র পরিবর্তন প্রভৃতি সমস্ত গোপন ও ঘরোয়া কাজ সম্পন্ন হয়। ফলে জগন্নাথদেবের নিতান্ত নিকট আত্মীয় হিসেবেই তাঁদের মর্যাদা স্বীকৃত।

এইভাবে দয়িতাপতি সেবকগণ ব্রাহ্মণ না হয়েও পুরীধামের রথযাত্রা ও নবকলেবরের মতো গোপনতম ও গুরুত্বপূর্ণ আচার-অনুষ্ঠানে তাঁদের অসীম অধিকার ও কর্তৃত্ব বজায় রেখেছেন শতাব্দীর পর শতাব্দী। তাঁদের ভূমিকা ছাড়া জগন্নাথ উপাসনা পূর্ণতা পায় না। এর থেকে নিঃসন্দেহেই বোঝা যায়, একমাত্র মহাপ্রভু শ্রী জগন্নাথ ব্রাহ্মণদের থেকে উচ্চে স্থান দিয়েছেন অব্রাহ্মণদের। যা, বর্তমানে বিভিন্ন নীচ সম্প্রদায়ের উচ্চ পদে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ নজির রাখে। জয় জগন্নাথ।




Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

দিনহাটার বাসিন্দা উত্তম কুমার ব্রজবাসীকে NRC নোটিশ, ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী

ভূত তাড়ানোর নামে মাকে পিটিয়ে মারল ছেলে

তামিলনাড়ুতে রেললাইন পার হওয়া স্কুলবাসে ট্রেনের ধাক্কা, ৩ শিশুর মৃত্যু

কালের ন্যায়চক্রে শ্রীরামের পূর্বপুরুষকে হত্যা করার ফলই পেতে হয়েছিল রাবণকে

ডাইনি অপবাদে পূর্ণিয়ায় একই পরিবারের ৫ জনকে জ্যান্ত পুড়িয়ে খুন

পরকীয়ায় বাধা! প্রেমিকের সঙ্গে মিলে প্রতিবন্ধী স্বামীকে গলা টিপে খুন করলেন তিন সন্তানের মা

Advertisement




এক ঝলকে
Advertisement




জেলা ভিত্তিক সংবাদ