নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: প্রাচীন রীতি মেনে মহালয়ার দিনেই জলপাইগুড়ির বৈকন্ঠপুর রাজ পরিবারের তপ্তকাঞ্চনবর্ণা দেবীর চক্ষুদান সম্পন্ন হল। বৈকন্ঠপুর রাজবাড়ির পুজো এবার পা দিল ৫১২ বছরে। নিয়ম করে মহালয়ার আগের রাতে কালীপুজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর বুধবার সকালে রাজবাড়ির মন্দিরে থাকা অষ্টধাতুর দেবীর মূর্তিতে পুজো দিয়ে প্রতিপদের ঘট বসছে। এই ঘট নবরাত্রি হিসাবে নাটমন্দিরেই পূজিত হবে। সপ্তমীর সকালে নবপত্রিকাকে স্নান করিয়ে মৃন্ময়ী মূর্তির পূজো আরম্ভ হবে।
প্রাচীন এই পুজোর ইতিহাস একদিকে যেমন রোমহর্ষক অন্য়দিকে ঐতিহ্যবাহী। জানা যায়, ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে এই পুজোয় নরবলি হয়েছে, এবং সেই রক্ত দেবী দুর্গাকে অর্পণ করা হত। তবে কালের নিয়মে নরবলি নিষিদ্ধ হলেও আজও চালের গুড়ো দিয়ে মানুষের প্রতিকৃতি তৈরি করে নর-ন্যায় বলি দেওয়া হয়। তাছাড়াও আটটি পায়রা বলি দিয়ে উৎসর্গ করা হয় মা দুর্গাকে। এছাড়া নবমীর দিন স্থানীয়রা এই পুজোতে পাঁঠা, হাঁস, চাল কুমড়ো এবং আখ বলি দেন মনস্কামনা পূর্ণ করার জন্য। কারণ কালিকা পুরাণ মতে মা দুর্গার পুজো করা হয় জলপাইগুড়ি রাজবাড়িতে। দেবী দুর্গা এখানে তপ্তকাঞ্চনবর্ণা।
দেবী দুর্গার পরিবারের পাশাপাশি এখানে পূজিত হয় ব্রম্ভা, বিষ্ণু, মহেশ্বর, জয়া ও বিজয়া বলে জানান রাজপরিবারের পুরোহিত শিবু ঘোষাল। তিনি জানান, পুজোর কয়েকটা দিন দেবী দুর্গার গলায় স্থাপন করা হয় নবরত্নের হার এবং মাথায় স্বর্ণমুকুট। দেবীর দশ হাতে রুপোর অস্ত্র শোভা পায়। অসুরের সঙ্গে একযোগে যুদ্ধ করে সিংহ ও বাঘ, তবে সিংহের গায়ের রঙ এখানে সাদা। ষষ্ঠীর বোধন, অষ্টমীর পুস্পাঞ্জালী, সন্ধিপুজো এবং দশমীর দিন সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠে পরিবারের সদস্যরা।