এই মুহূর্তে

দুর্গার দেওয়া তৈজস সামগ্রী দিয়ে আজও পুজো হয় মালদার সেন বাড়িতে

নিজস্ব প্রতিনিধি:  প্রায় পাঁচশো বছরের পুজো। কথিত আছে, পুজোয় ব্যবহৃত তৈজস সামগ্রী স্বয়ং দেবী দুর্গার দেওয়া। পুরাতন মালদার সেন বাড়িতে আজও সেই পুষ্প পাত্র, কাঁসার গাড়ু, কলস, পানসাজি দিয়েই পুজো হয়। পুরাতন মালদার বাচামারি এলাকায় পুজোর সূচনা করেছিলেন জমিদার মহেশচন্দ্র সেন।

সেনদের তিনটি পরিবার মিলে এই পুজোর আয়োজন করত। তাই এলাকাবাসীর কাছে এটি সেন বাড়ির পুজো নামেই খ্যাত। বর্তমানে অবশ্য সেই বংশের আর কেউ নেই। এখন এই পুজো আয়োজন করে আসছেন দাশগুপ্ত পরিবার। দাশগুপ্তদের পাঁচটি পরিবার মিলে করে এই পুজো। আজও প্রথা মেনে নিয়ম পালন করেই পুজো হয়। প্যান্ডেলের আড়ম্বরতা বা আলোর ঝলকানি হয়তো নেই৷ কিন্তু এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে অদ্ভুত এক ইতিহাস।

দাশগুপ্ত পরিবারের এক সদস্যা তনুশ্রী দাসগুপ্ত। তিনি জানান, অব্রাহ্মণ জমিদার মহেশচন্দ্র সেন বাড়ির শালগ্রাম শিলা একরাতের জন্য পরিবারের পুরোহিতের বাড়িতে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেইমতো সন্ধে নামার পর মহানন্দার ঘাট যখন শুনশান হয়ে পড়ে, ঠিক সেই সময় গোধুলি বেলায় শালগ্রাম শিলা হাতে পুরোহিত নদীর ঘাটে যান। রীতি মেনে জমিদারবাড়ির শালগ্রাম শিলাকে এই লগ্নেই নদীতে স্নান করাতে হয়৷ তারপর সেই শালগ্রাম নিয়ে পুরোহিত চলে যান নিজের বাড়িতে৷ পরদিন ভোরে নারায়ণ ফের ফিরে যান জমিদারবাড়িতে৷

একবছর জমিদার বাড়ির শালগ্রাম শিলা নদীতে স্নান করাতে গিয়ে পুরোহিত দূর থেকে নদীর ঘাটে নৌকা বাঁধা দেখে খানিকটা আশ্চর্য হয়ে পড়েছিলেন। ঘাটে পৌঁছে তিনি দেখেন, ওই নৌকা থেকে নেমে আসছেন এক সুন্দরি রমণী৷ সঙ্গে দুই ছেলে, দুই মেয়ে৷ ওই রমণী পুরোহিতের কাছে জমিদার বাড়ির রাস্তা জানতে চান৷ কিন্তু হাতে নারায়ণ নিয়ে কথা বলা নিষেধ৷ তাই পুরোহিত ইঙ্গিতে ওই মহিলাকে জমিদারবাড়ির রাস্তা দেখিয়ে দেন৷ এরপর শালগ্রামকে স্নান করিয়ে বাড়ি চলে যান তিনি৷ তবে তাঁর মনে সন্দেহ জাগে, ভরসন্ধেয় একা ছেলেমেয়ে নিয়ে নৌকায় ওই সুন্দরী রমণী কেন জমিদার বাড়িতে যেতে চান? এমন প্রশ্নও জাগে তাঁর।

এনিয়ে পুরোহিতকে পরদিন জমিদার বাড়িতে কাউকে প্রশ্ন করতে হয়নি৷ তার আগেই সবাই জেনে যায়, ওই রাতেই দেবীর স্বপ্নাদেশ পান জমিদার মহেশচন্দ্র সেন৷ স্বপ্নে দেবী তাঁকে আদেশ জানান, ছেলেমেয়েদের নিয়ে পৌঁছে গিয়েছেন তিনি৷ জমিদার যেন মন্দির নির্মাণ করে তাঁকে স্থাপন করেন৷ পুজোর কিছু সামগ্রী তিনি নিজেই সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন৷ সেসব নদীর ঘাটে রয়েছে৷ ওই সামগ্রীগুলি যেন ঘাট থেকে তুলে আনা হয়৷ স্বপ্নে দেবীর নির্দেশ পেয়ে ভোরেই ঘুম থেকে উঠে জমিদার লোকজন নিয়ে ছুটে যান নদীর ঘাটে৷ দেখেন, সত্যিই সেখানে পুজোর বেশ কিছু সামগ্রী ও খড়্গ পড়ে রয়েছে৷ সেসব বাড়িতে নিয়ে আসেন তিনি৷ এরপরেই তিনি বাড়ির পাশে মন্দির নির্মাণ করে পঞ্চমুণ্ডির আসন প্রস্তুত করেন৷

পুজো প্রবর্তনের ঠিক এই ইতিহাসই বলেন বর্তমানে এই পুজোর প্রধান সেবাইত, দাশগুপ্ত পরিবারের প্রবীণ সদস্য প্রলয়পতি দাশগুপ্ত৷ তিনি বলেন, ‘এই পুজো শুধু পুরাতন মালদা নয়, জেলার মধ্যে অন্যতম প্রাচীন৷ পুজো ৫০০ বছরে পা দিল৷ তবে সেনদের কোনও বংশধর এখন আর বেঁচে নেই৷ অনেক আগেই সেই বংশ নিশ্চিহ্ন হয়েছে৷ হয়তো পরবর্তীতে সেই বংশের মেয়েদের কোনও সন্তানের হাতে এই পুজোর ভার যায়৷ সেখান থেকে আমাদের হাতে এসে পৌঁছয়৷

তিনি জানিয়েছেন, এখন তাঁরাই পাঁচ পরিবার মিলে পুজো পরিচালনা করে আসছি৷ দেবীর স্বপ্নাদেশে জমিদারমশাই মহানন্দার ঘাটে পুজোর যে সমস্ত সামগ্রী পেয়েছিলেন, তার মধ্যে ছিল দু’টি পুষ্পপত্র, একটি গাড়ু, একটি পানের বাটা, পাঁচটি খড়্গ-সহ আরও বেশ কয়েকটি জিনিস৷ সেসব এখনও রয়েছে৷ শুরুর দিন থেকে প্রতি বছর পুজোয় এই জিনিসগুলিই এখনও ব্যবহৃত হয়৷ দেবীর আদেশ অনুযায়ী এখনও ডাকের সাজে প্রতিমা তৈরি হয়।’

তনুশ্রী দাসগুপ্ত জানান, ‘নিয়ম অনুযায়ী পঞ্চমীর দিন প্রতিমা বেদিতে ওঠেন৷ ষষ্ঠীতে কল্পারম্ভ৷ সপ্তমীর সকালে কলাবউ নিয়ে মহানন্দায় যাওয়া হয়৷ প্রাচীন রীতি মেনে আমাদের কলাবউ শাড়ি নয়, ঘাঘরা পরে নদীতে স্নান করেন৷ পুজোর বোধন শুরু হয় কৃষ্ণা নবমী তিথি থেকে ৷ পুজোয় বলিপ্রথা রয়েছে৷ আগে মহিষবলির প্রথা ছিল তা উঠে গিয়ে এখন পাঠাবলি হয়। সপ্তমীতে হয় সাদা পাঠাবলি,সন্ধিতে হয় কালো পাঠাবলি এবং মহানবমীতে হয় যে কোনও রঙের পাঠাবলি। অঞ্জলি হয় দশমীর দিনে।’

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

জলপাইগুড়ির রাজবাড়িতে মা দুর্গার ভোগে দেওয়া হল পাঁচ রকমের মাছ

দশমীতে মাকে গঙ্গার উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রদক্ষিণ করিয়ে দেওয়া হয় বিসর্জন….

মহিষাদল রাজবাড়ির অষ্টমী পুজো ঘিরে চরম উদ্দীপনা

বেঙ্গালুরুতে জমজমাট বনেদি পাল বাড়ির দুর্গাপুজো

জলপাইগুড়ির রাজবাড়ির পুজোয় আজও বলি হয় পায়রা

এই বনেদি বাড়িতে মহামায়াকে সোনার অলঙ্কার পরিয়েই বিসর্জনে পাঠানো হয়

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর