এই মুহূর্তে




পুজোর ভ্রমণ: কলকাতার কাছেই আছে ‘বাংলার আলেপ্পি’- বেড়ি পাঁচপোতা




নিজস্ব প্রতিনিধি: করোনাকালে অনেকেই দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। এর ফলে কিন্তু বেশ কিছু লাভও হয়েছে। বাংলার অখ্যাত, স্বল্পখ্যাত বা একেবারেই অজানা কিছু জায়গার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে এই লকডাউনে। আর যেখানে সারাদিন কাটিয়ে আসা যায় অনায়াসে, আবার কোনও জায়গায় সপ্তাহান্তে ছুটি কাটিয়ে আসা যায়। বর্তমান সময়ে কেউ নিজের বাইক বা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন, আবার কেউ ট্রেন বা বাসে পৌঁছে যাচ্ছেন স্বল্পখ্যাত বা অজানা কোনও ডেস্টিনেশনে। এরকমই এক অখ্যাত, অথচ অনন্য সুন্দর এক জায়গার সন্ধান দেব আপনাদের। কেরলের অলেপ্পির নাম তো অনেকেই শুনেছেন, কিন্তু জানেন কি এই বাংলাতেই আছে সেরকম এক জায়গা? হ্যাঁ, আজ আপনাদের শোনাবো সেই জায়গা সম্পর্কে।

উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙা, কলকাতা থেকে খুব বেশি দূরে নয়। শিয়ালদা বা দমদম থেকে লোকাল ট্রেনে কমবেশি এক ঘন্টা। এই গোবরডাঙার কাছেই আছে একটি অশ্বখুরাকৃতি হ্রদ। ভারত-বাংলাদেশ-লাগোয়া বেড়ি পাঁচপোতা। যত দূর চোখ যায়, শুধুই সবুজের সমারোহ আর বিস্তৃর্ণ জলাভূমি। এক পলকেই চোখে জুড়িয়ে যায়। ওই অশ্বখুরাকৃতি একটি হ্রদটিকে স্থানীয়রা ডাকেন ‘বাওর’। দিগন্ত বিস্তৃত চপল জলরাশি। এলাকার বয়স্ক মানুষেরা বলেন, অতীতে বাওরটি ইছামতীর অংশ ছিল। পরে নদী দিক পরিবর্তন করে বাংলাদেশের দিকে চলে যায়। কিন্তু বাওরটি আজও আগের মতোই রয়ে গিয়েছে অশ্বখুরাকৃতি বাঁক নিয়ে। এই বাওর ঘিরে সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র যাতে হয়, এই দাবি দীর্ঘদিনের। এলাকাবাসীদের দাবি, শেষ পর্যন্ত মেনেছে জেলা প্রশাসন। অশ্বখুরাকৃতি এই হ্রদ ঘিরে ইকো ট্যুরিজম হাব গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে স্থানীয়রা ইতিমধ্যেই করেকটি হোম স্টে তৈরি করে ফেলেছেন। আবার এক সংস্থা ওই বাওরের পাশে কয়েকটি কটেজ তৈরি করছে। ফলে আগামীদিনে এই বেড়ি পাঁচপোতাই ‘বাংলার অলেপ্পি’ নামে বড় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে দেখা যাবে বলেই আশা এলাকাবাসীর।

স্থানীয় জনশ্রুতি, বহুকাল আগে এখানে একটি বন্দর বা পোতাশ্রয় ছিল। রাজা প্রতাপাদিত্য একসময় ইছামতী নদী ধরে এখানে এসেছিলেন। বেড়ি পাঁচপোতার বাওর ছাড়াও আশেপাশে রয়েছে ডুমোর বাওর, বলদেঘাটা বাওর, ঝাউডাঙা বাওর আর ইছামতী নদী। ওপারে বাংলাদেশ, এ পারে দাঁড়িয়ে দূর থেকে ও দেশের গাছ-গাছালি বাড়ি ঘর, হলুদে ভরা সর্ষে খেত দেখা যায়। রয়েছে প্রাচীন কালী মন্দির এবং রামকৃষ্ণ মিশন মঠ। তাই একদিনে ঘোরার প্রচুর রসদ বেড়ি পাঁচপোতায়।

গাইঘাটায-গোবরডাঙ্গা এলাকার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া দিগন্ত বিস্তৃত মনোরম জলরাশি দেখতে ইতিমধ্যেই দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন ভিড় করতে শুরু করেছেন। সাড়ে সাত কিলোমিটার লম্বা বিল ও চারপাশের প্রান্তর দেখে মনে হবে যেন এক টুকরো কেরল। স্থানীয় লোকজন এই জলাশয়ে মাছ চাষ করেন। ফলে টাটকা মাছের স্বাদ চেটেপুটে উপভোগ করতে পারবেন। এখানে এসে দরদাম করে চেপে বসুন কোনও একজনের নৌকায়। তাঁরাই আপনাকে বাওরের এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত ঘুরিয়ে দেখাবেন। নৌকাই এই অঞ্চলের মানুষের একমাত্র ভরসা। চাইলে ইছামতি নদী পর্যন্ত চলে যাওয়া যায় নৌকায় চেপে। তবে সঙ্গে অবশ্যই রাখবেন সচিত্র পরিচয়পত্র। কারণ বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী হওয়ায় বিএসএফ যখন তখন পরিচয়পত্র পরীক্ষা করতে পারে।

যে দিকে তাকানো যায় জল আর সবুজের সমারোহ। শান্ত নির্জন পরিবেশে নৌকার বৈঠার ছলাৎ ছলাৎ শব্দ আপনাদের পৌঁছে দেবে অলেপ্পি বা ভেনিসে। ঘুরে দেখুন প্রাচীন কালী মন্দির ও রামকৃষ্ণ মিশন মঠটি। এই মঠের বহু আশ্রমিক আজ বিদেশে প্রতিষ্ঠিত। তাঁরাই অর্থ সাহায্য করে সুন্দর করে সাজিয়েছেন রামকৃষ্ণ মঠটি। এখানে ঢোকার নির্দিষ্ট সময় আছে, তাই মাঝিদের কাছে জেনে নেবেন মঠ খোলা আছে কিনা। দিনভর নৌকা বিলাস করে দিনের শেষে স্থানীয় মানুষদের তৈরি লোভনীয় মাছের পদ চেখে বেলাশেষে ফিরে চলুন নিজের বাসায়। ইউটিউব বা সোশ্যাল মিডিয়ায় বেড়ি পাঁচপোতার বাওর ইতিমধ্য়েই জনপ্রিয় হয়েছে। চাইলে সার্চ করে দেখে নিন। আর পুজোর ছুটিতে একদিনের জন্য বেরিয়ে পড়ুুন প্রিয় মানুষটির হাত ধরে। রোমান্টিক পরিবেশে নৌকা বিহার ও সবুজের সমারোহ আপনাকে নিরাশ করবে না।

কিভাবে যাবেন?

উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সদর বারাসত থেকে দূরত্ব মাত্র ৫০ কিলোমিটার, কলকাতা থেকে ৭৮ কিলোমিটার। ট্রেনপথে শিয়ালদা-বনগাঁ শাখার গোবরডাঙা স্টেশনে নামবেন। স্টেশনের বাইরেই পেয়ে যাবেন টোটো, অটো ও ম্যাজিক ভ্যান। দরদাম করে চেপে বসুন কোনও একটায়। শেয়ার অটো বা ম্যাজিক ভ্যানের ভাড়া ১৫-২০ টাকা। টোটো রিজার্ভ করে যেতে হয়, ভাড়া কমবেশি ২০০ টাকা। তবে টোটোতে গেলে গ্রাম বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার বাড়তি সুযোগ পাবেন। নামতে হবে পাঁচপোতা বাজারে। এখান থেকে হাঁটা পথেই পৌঁছে যাবেন বাওরে।




Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

শতবর্ষ প্রাচীন কাশিমবাজার রাজবাড়ির দুর্গাপুজো সকলের আকর্ষণের কেন্দ্র

পুজোর ছুটিতে পাহাড়ে যেতে চান, আবার কম খরচে, ঠিকানা দেবে এই ‘অফবিট’গুলি

ধান্যকুড়িয়ার সাউ বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধুঁকছে, সরকারের দিকে তাকিয়ে বর্তমান শরিকরা

পুজোয় ঘুরে আসতে পারেন হিমাচলের এই অজানা জায়গায়

ধান্যকুড়িয়ার গাইন বাড়ির ইতিহাস জ্বলজ্বল করলেও দুর্গাপুজোর জৌলুস অনেকটাই ফিকে

পাহাড়ের গুহায় পূজিত হন লালজলের ‘দেবীদুর্গা’, রোমহর্ষক সেই উৎসবের অজানা কাহিনী

Advertisement

এক ঝলকে
Advertisement




জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর