নিজস্ব প্রতিনিধি: দক্ষিণ বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের শেষ সীমানা রানিবাঁধ ব্লকের ঝিলিমিলি। এই ট্যুরিস্ট স্পটটি সৌন্দর্য ও নির্জনতার জন্য বিখ্যাত। তবে আসল আকর্ষণ হল গাছবাড়ি। সেই গল্পই আজ বলবো। লালমাটির পাহাড় আর সবুজের হাতছানি রয়েছে এই পথে। পুজোর কয়েকটা দিন অনায়াসে কাটিয়ে দেওয়া যায় এই ঝিলমিলিতে। পথেই পরে তালবেড়িয়া ড্যাম। পথের দু’পাশে কিছুদূর পরপর পড়বে স্থানীয় গ্রাম্য জনজাতির জীবনযাত্রার চিত্র, আর বাকি পথটি অসম্ভব নিঝুম নিস্তব্ধতা। সবুজের সমারোহের মাঝে হলুদের কোলাজ অর্থাৎ সর্ষে ক্ষেতের হাতছানি। তবে এখানকার আসল ইউএসপি হল হরেক রকম পাখির হরবোলা আর পাতায় পাতায় খসখসের শব্দ। তাই ঝিলমিলি বেরাতে এলে হাড় জিড়জিড়ে কংক্রিটের সভ্যতা থেকে অনেকখানি দূরে শাল পিয়ালের রোদ ঝলমলে জঙ্গলের মাঝখানে নিজেকে খুঁজে পাবেন।
ঝিলিমিলিতে রাত্রিবাসের মূল আকর্ষণ হল রিমিল ইকো ট্যুরিজম রিসর্ট। কেরালার ট্রি- হাউসের আদলে গড়ে তোলা শাল-পিয়ালের জঙ্গলের মাঝে বাংলার গাছবাড়ি। এখানে দুটো দিন থাকলেই আপনি খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করতে পারবেন অরণ্য়ের দিন-রাত্রি। আর যদি তখন পূর্ণিমার রাত থাকে তবে তো কথাই নেই। ওই একটি রাতই আপনার আজন্ম মনের মনিকোঠায় জায়গা করে নেবে।
গাছবাড়ির ব্যালকনিতে বসেই দেখবেন শাল-পিয়ালের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই। জঙ্গলের নিকষ অন্ধকারের উপর চাঁদের উপস্থিতির সঙ্গে অজস্র ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শুনতে শুনতে আপনি কখন পৌঁছে যাবেন আদিম জীবনে সেটা বুঝতেই পারবেন না। ঝিলমিলির রিমিল ইকো ট্যুরিজম রিসর্টের রেস্তরাঁটিও বেশ ভালো। এখানে একদিকে যেমন আছে বাঙালি থালি অন্যদিকে চাইনিজ খাবারের বাহারি আইটেম। ফলে ভ্রমণপ্রিয় মানুষের সঙ্গে ভোজনপ্রিয় বাঙালির অবশ্য গন্তব্য হওয়া উচিত এই ঝিলমিলি।
একদিন গাড়ি ভাড়া করে আশেপাশে ঘুরে দেখতে পারেন তালবেড়িয়া ড্যাম, সুতান লেক কিংবা মুকুটমণিপুর। শাল-পিয়ালের ঘন জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে ফিতের মত বয়ে চলা আঁকাবাঁকা রাস্তায় সেই যাত্রা সত্যিই মনমাতানো। বর্ষার আগে পরে ঝিলিমিলি ভ্রমণের সুবিধা হল রাস্তার দুধারে সবুজের সমারোহ পেরিয়ে জঙ্গলের ভরপুর সবুজ এবং তালবেড়িয়ার ড্যামের টইটম্বুর জল। শীতে এখানে ভিড় করে অসংখ্য পরিযায়ী পাখি। ফলে সেটাও পড়ে পাওয়া চদ্দো আনা। তবে ঝিলমিলি ট্যুরিস্ট লজটি বারো মাইল জঙ্গলের মধ্যেই। গাছের উপরেই রয়েছে ঘরগুলি। এই গাছবাড়িতে রাত্রিবাস এক অনন্য অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে। এখানে বসে যতক্ষণ ইচ্ছে ততক্ষণ পাখিদের কলতান শুনুন। কেউ বারণ করবে না।
কীভাবে যাবেন এবং কোথায় থাকবেন?
বাঁকুড়া শহর থেকে ৭০ কিমি দূরে ঝিলমিলি। কলকাতার ধর্মতলা থেকে সরাসরি বাসে করে পৌঁছে যাওয়া যায় বাঁকুড়া। এখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে ঝিলমিলি পৌঁছতে হবে। এছাড়া হাওড়া স্টেশন থেকে রূপসী বাংলা, আরণ্যক, পুরুলিয়া এক্সপ্রেস, হাওড়া-চক্রধরপুর ইত্যাদি ট্রেন আপনাকে বাঁকুড়া পৌঁছে দেবে। কলকাতা থেকে ঝিলমিলের দূরত্ব ২৩৮ কিলোমিটার। গাড়িতে গেলে মাত্র সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা লাগে। তাই সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লে বেলার মধ্যেই পৌঁছে যাবেন।
থাকার জন্য তো আগেই বলেছি রিমিল ইকো ট্যুরিজম রিসর্ট। এখানে গাছবাড়ির পাশাপাশি আছে এসি, গিজার সহ সমস্ত রকম আধুনিক সুবিধা তাঁবু। অরণ্যের গহীণে অভিনব রাত্রিবাসের ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে ঝিলমিলিতে। বীর, পিপিল, শাল, পিয়াল ইত্যাদি নামের গাছবাড়ি এবং তাঁবু গুলির ব্যালকনি থেকে অরণ্যের দিন-রাত্রি উপভোগের অভিজ্ঞতা এককথায় রোমাঞ্চকর। যোগাযোগের জন্য ক্লিক করুন https://www.bankuratourism.com/hotels/rimil-lodge-jhilimili/ এই লিঙ্কে।