এই মুহূর্তে

WEB Ad Valentine 3

WEB Ad_Valentine

পুজোর ভ্রমণ: পাহাড়-জঙ্গল-নদীর মেলবন্ধন সুন্দরী সারান্ডা

নিজস্ব প্রতিনিধি: অচেনা-আজানা জায়গার রূপ, রস, গন্ধ চেটেপুটে উপভোগ করতেই মানুষ ঘুরতে যায়। আর এই নেশা যার একবার চেপে ধরে তাঁকে ঘরের কোনে আটকে রাখা অসম্ভব। আর বাঙালি জাতির পায়ের তলায় সর্ষে তো বরাবরই আছে। ফলে সামান্য ছুটি পেলেই ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়া বাঙালির কাছে জলভাত। পুজোর কটা দিন সিংহভাগ বাঙালি পরিবার বেরিয়ে পড়েন অজানার উদ্দেশ্যে। কেউ বেছে নেন পাহাড়, কেউ সমুদ্র আবার কেউ জঙ্গল। আর যদি আপনি যদি পাহাড়-জঙ্গল-নদীর মেলবন্ধন খুঁজতে চান, তবে আপনাকে যেতে হবে সুন্দরী সারান্ডায়। ছোটনাগপুর মালভূমির রানী হল সারান্ডা। আমাদের পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডে এই জঙ্গলে গেলেই আপনি পাবেন পাহাড়-জঙ্গল-নদীর স্বাদ। লালমাটির ক্যানভাসে সবুজ অরণ্য এবং লাল-হলুদ ফুলের সমারোহ এই জঙ্গলকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে।

ঝাড়খণ্ড-ওড়িশা সীমান্তের সিংভূম জেলার আদিবাসী অধ্যুষিত এই বনাঞ্চল। আদিম অরণ্য বলতে যা বোঝায় তাই। এখনও আধুনিক সভ্যতার অনেক কিছুই এখানে প্রবেশ করেনি। সারান্ডা শব্দের অর্থ সাতশো পাহাড়ের দেশ। এখানে গভীর অরণ্য় ছাড়াও রয়েছে ছোট-ছোট অসংখ্য পাহাড়ের সারি। বেশিরভাগই অবশ্য টিলা। এই অরণ্য়ে আছে হাতি, বাইসন, ভাল্লুক, সম্বর, চিতা বাঘের মতো বন্যপ্রাণ। আর আছে অসংখ্য নাম না জানা পাখির ঝাঁক। বিভিন্ন ঋতুতে মন মাতানো ফুল ও প্রজাপতি। কিন্তু এখানকার আদিবাসী জনজাতির মানুষজনের ব্যবহার ও সারল্য আপনাকে আলাদাভাবেই মুগ্ধ করবে। সারান্ডার জঙ্গলের মধ্যে দিয়েই বয়ে চলেছে সুন্দরী কোয়েল নদী। ফলে এখানে এলে একসঙ্গে অনেক কিছুই পাওয়া যাবে।

সারান্ডার জঙ্গলে মনোহরপুরে আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, শাল, সেগুন, মহুয়া, পিয়াল গাছের জঙ্গলে ঘেরা শান্ত নির্জন বন বিশ্রাম ভবন এবং কয়েকটি গেষ্ট হাউস আছে এই জঙ্গলে। এতটাই শান্ত ও নির্জন প্রকৃতি যে নিজের হার্টবিট পর্যন্ত উপলব্ধি করতে পারবেন। এই গেস্ট হাউসগুলির আশেপাশেই আছে প্রচুর ভেজষ উদ্ভিদের গাছ। আর আছে তেজপাতা, গোলমরিচ, দারচিনি ও এলাচ গাছ। এখানে আসলেই বুঝবেন নিখাদ ভ্রমণরসিক ও শান্তিপ্রিয় ব্যক্তিদের কাছে এই এলাকা একান্তই স্বর্গরাজ্য। কলকাতা থেকে দুপুর দুপুর এখানে পৌঁছে যাওয়া যায়। দুপুরের আহার সেরে একটু বিশ্রাম নিয়ে পায়ে হেঁটেই ঘুরে আসতে পারেন আশেপাশের এলাকা ও জঙ্গল।

লালমাটি চিরে কালো পিচের প্রলেপ দেওয়া রাস্তা এঁকেবেঁকে চলে গিয়েছে জঙ্গলের মধ্য়ে দিয়ে। পথের দুধারে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে লম্বা লম্বা গাছ। আশেপাশের জনবসতি বলতে লালমাটির ঘর। লালমাটির জমিতে সবুজ ফসল। প্রতিটি বাড়ির উঠোনে ফলের গাছ, চালে লতিয়ে উঠেছে কুমড়ো, লাউ বা পুঁই শাক। কোথাও আবার মাচায় ঝুলছে ঝিঙ্গে। একটু এগোতেই দেখবেন প্রাচীন এক গির্জা। আরেকটু এগোতেই চোখে পড়বে অনুচ্চ এক টিলা। তার মাথায় উঠলেই গোটা মনোহরপুর আপনার চোখের সামনে। দেখবেন প্রকৃতি তাঁর ক্যানভাসকে আপন হাতেই রাঙিয়েছে।

সন্ধ্যে নামার আগেই ফিরে আসুন অস্থায়ী ঠিকানায়। রাত যত বাড়বে ততই মন মাতানো পরিবেশ পাবেন। ঘন জঙ্গলে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। বহু কীটপতঙ্গের অচেনা শব্দের সঙ্গে বহুদূর থেকে ভেসে আসা মাদলের শব্দ আপনাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে রূপকথার দূনিয়ায়। রাত যত বাড়বে ততই বন্যপ্রাণীর ডাক ও মাদলের তাল বাড়বে। হাড়িয়া ও মহুয়ার নেশায় তখন রঙ ধরেছে। এই অপার নিস্তব্ধতায় আপনি নিজেকেই খুঁজে পাবেন আনমনে। পরদিন সকালে ঘুম ভাঙাবে পাখিরা। কতরকম যে পাখির ডাক শুনবেন তার ইয়াত্তা নেই।

প্রাতঃরাশ সেরে বেরিয়ে পড়ুন আশেপাশে লোকালয়ের উদ্দেশ্যে। গেস্ট হাউস থেকে কিছুটা এগোতেই পেয়ে যাবেন ছবির মতো সুন্দর মনোহরপুর রেল স্টেশন। সেখানে কিছুটা সময় কাটালেই বুঝবেন এখানে কোনও শহুরে ব্যস্ততা নেই। রেললাইন ধরেই একটু এগোলে একটি সেতু পাবেন। এটাই কোয়েল নদীর উপর রেলসেতু। তার পাশ দিয়ে নেমে গিয়েছে ছোট্ট পায়ে হাঁটা একটি লালমাটির রাস্তা। সেটা ধরে নেমে আসুন নদীর কাছে। আরেকটু এগোলেই পাবেন কোয়েল ও কয়না নদীর সঙ্গম। মিলবে না মিলবে না করেও দুটি নদী আপন খেয়ালে সঙ্গমে মিলিত হয়েছে। কোয়েলের পান্না সবুজ জল আর কয়না নদীর লালমাটির ঘোলা জল মিলেমিশে একাকার। ইচ্ছে হলে কোয়েলের জলে অবগাহন করে একটু ছেলেবেলায় ডুব দিতে পারেন। এরপর গেস্ট হাউসে ফিরে এসে জঙ্গলের সৌন্দর্যে ডুব দিন।

পরদিন একটি গাড়ি ভাড়া করে বেরিয়ে পড়ুন সারান্ডার জঙ্গল ও আশেপাশের কয়েকটি এলাকা দেখতে। যেমন গন্তব্যে রাখতে পারেন দুরদুরি, মালাই, ছোটনাগরা, কিরিবুরু ও মেঘাতুবুরু পাহাড়। ঝাড়খণ্ডের খণিজ সমৃদ্ধ অঞ্চল এই কিরিবুরু ও মেঘাতিবুরু এলাকা। সবুজ বনাঞ্চল ভেদ করে সরু রাস্তা চলে গিয়েছে বহুদূর। একসময় এই জঙ্গল ছিল অতি গভীর। এখানে ঢুকতেই নাকি বুক দুরুদুরু করতো এলাকার মানুষজনের। তার থেকেই এই জঙ্গলের নাম দুরদুরি। এই জঙ্গলে হাতি, ভাল্লুক ও চিতাবাঘের আনাগোনা বিস্তর। গাড়ি আরও এগিয়ে গেলেই দেখবেন গাছের আকার ও চরিত্র পাল্টে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। এবার আর বড় বৃক্ষের দেখা মিলবে না। বরং বহেরা, গামার, পল্লব, পুইমান জাতীয় ঝোপ গাছ বেশি। বুঝবেন ছোটনাগরা এলাকায় পৌঁছে গিয়েছেন আপনি। টিলার মতো উঁচু পাহাড়ের মাথায় উঠলে বিস্তৃর্ণ বনভূমির মাঝে সাদা ফিতের মতো কোয়েল নদীর আঁকাবাঁকা পথ দেখতে দারুণ লাগবে।

এই এলাকা ছেড়ে আমাদের গন্তব্য বিখ্য়াত কিরিবুরু পাহাড়ের দিকে। স্থানীয়দের কাছে শুনবেন কেন এই পাহাড়ের নাম কিরিবুরু। একসময় এখানে প্রচুর পোকামাকর ছিল। তাই এর নাম এরকম। আসলে স্থানীয় ভাষায় কিরি শব্দের অর্থ পোকা আর বুরু শব্দের অর্থ পাহাড়। জঙ্গলের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে পাকদণ্ডী রাস্তা বেয়ে পোকার পাহাড়ে উঠে পরবেন কোন ফাঁকে। আর উপরে উঠলেই বুঝবেন মনের রঙ, পাহাড়ের রঙ, জলের রঙ, খেতের রঙ ও প্রকৃতির রঙ মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। পাশেই দাঁড়িয়ে মেঘাতুবুরু পাহাড়। পাহাড়ের মাথার কাছে মেঘ জমে থাকে বলে এই নাম। এর মাথায় স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া একটি নজর মিনার তৈরি করিয়েছে। তাতে চড়লেই এই অরণ্যভূমিকে উপলব্ধি করতে পারবেন। প্রকৃতির কত রঙ, বিভিন্ন ধরণের গাছ-গাছরা, লালমাটির পাহাড় ও নীল আকাশের এক অসাধারণ কোলাজ। এই ছবি মনের মনিকোঠায় বহুদিন ধরা থাকবে। এবার ফিরে আসুন মনোহরপুরের অস্থায়ী ঠিকানায়। পরদিন ট্রেন ধরে একরাশ টাকটা বাতাস আর আদিম অরণ্য়ের গন্ধ নিয়ে ফিরে চলুন কংক্রিটের জঙ্গলে।

কিভাবে যাবেন এবং কোথায় থাকবেন?

সারান্ডার প্রবেশদ্বার হল বড়মাজদা। হাওড়া থেকে কয়েকটি ট্রেন আসে এই পথে। হাওড়া-টাটা ও হাওড়া-বরবিল জনশতাব্দী এক্সপ্রেস ধরে টাটা হয়েও এখানে আসা যায়। আবার হাওড়া-টিটলাগড় ইস্পাত এক্সপ্রেস ধরেও সরাসরি চলে আসা মনোহরপুর। সকাল ৬.৫৫ মিনিটে হাওড়া থেকে ইস্পাত এক্সপ্রেস ধরলে দুপুর একটার মধ্য়ে এখানে চলে আসবেন। এছাড়াও হাওড়া-জগদলপুর এক্সপ্রেস রাত ৯.৩০ মিনিটে ছেড়ে পরদিন ভোর চারটে নাগাদ মনোহরপুরে নামিয়ে দেবে।

সারান্ডায় থাকার জন্য ঝাড়খণ্ড বন বিভাগের বন বিশ্রাম ভবন রয়েছে মনোহরপুরে। যোগাযোগের জন্য http://forest.jharkhand.gov.in/booking/ অথবা https://tourism.jharkhand.gov.in/wheretostay/171 এই দুটি লিঙ্কে ক্লিক করতে পারেন। এছাড়া ইন্টারনেট ঘেঁটে কয়েকটি গেস্ট হাউস পাবেন এই জঙ্গলে।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

পুজোয় কাছেপিঠে ঘুরতে যেতে চান, তালিকায় রাখুন এই তিনটি জায়গা

পুজোতে ঘুরতে যেতে চান, পরিকল্পনা কী করে ফেলেছেন, রইল কিছু ভ্রমণ তালিকা

কোথাও ‘ভিলেন’ রাবণকে পোড়ানো হয়, আবার কোথাও হয় ‘হিরো’ দশাননের পুজো

পুজোর ছুটিতে বাড়িতে থাকতে চান না! তাহলে ঘুরে আসুন বনলক্ষী, ঝিলিমিলি, কাঁকসার গড় জঙ্গল থেকে

দেবী দুর্গার আরাধনা করেন মুসলিম পুরোহিত

পুজোর ছুটিতে দূরে যেতে চান না, তাহলে ঘুরে আসুন বাংলার এই ৫ টি ডেস্টিনেশন থেকে

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর