সুস্মিতা ঘোষ: কলকাতায় দুর্গাপূজা মানেই কু্মোরটুলির দুর্গামূর্তি বানানো। কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীদের বানানো দুর্গা মূর্তি দেশ-বিদেশেও পৌঁছয়। এদের দুর্গা প্রতিমা বানানো শুরু হয় রথের দিন থেকে। চলে চতুর্থী, পঞ্চমী পর্য্যন্ত। ঠাকুর বানাতে এরা ব্যবহার করেন এঁটেল মাটি ও বেলেমাটি দু’ধরনের মাটি। এঁটেল মাটি তাঁরা আনেন উলুবেড়িয়া থেকে আর বেলেমাটি আনেন বাগবাজার ঘাট থেকে। এমনকি আজকাল পলিফাইবার দিয়েও প্রতিমা বানাচ্ছেন কুমোরটুলির শিল্পীরা। প্রতিমার চুল তৈরী হয় দক্ষিণ ২৪ পরগণায়। কৃষ্ণনগরে তৈরী হয় প্রতিমার চালচিত্র।
অসমে দেবী দুর্গা বিভিন্ন নামে ও রূপে পূজিত হন। গুয়াহাটির নীলাচলে কামাখ্যা দেবী ও ভুবনেশ্বরী, সত্রাশালে মঙ্গলচণ্ডী, সাদিয়াতে কাচাইখাইকি, তামরেশ্বরী, ডিব্রুগড়ে মালিনী, ধুবুরিতে মহামায়া, গোয়ালপাড়ায় তির্থেশ্বরী, জোড়হাটে বুড়িগোঁসাই, মেঘালয়ের সেলাতে জয়ন্তেশ্বরী নামে পূজিত হন দুর্গা। এমনকি সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতে বিভিন্ন অদ্ভূত নামে দেবী দুর্গার পূজা হয়। এছাড়াও, বিভিন্ন উপজাতিদের নামও ভিন্ন। গারো জাতির মানুষেরা ‘ফাজু’-র পূজা করেন। খাসি জাতির মানুষেরা কামাখ্যার মতই ‘কাম-মিখা’-র পূজা করেন। অহম জাতির মানুষ দেবী দুর্গাকে পূজা করে ‘সুবাসনী’-রূপে।
ওড়িশার রাজধানি ভুবনেশ্বর থেকে ৮০ কি.মি. দূরে অবস্থিত মানিক গোড়া গ্রাম। এই গ্রামে দুর্গাপুজো হয় সমগ্র দেশ থেকে আলাদা রীতিতে। এই পুজোর ১৫ দিন আগে থেকে এখানকার বাসিন্দারা নিরামিষ আহার করেন। এছাড়াও এই পুজোয় হিন্দুদের পাশাপাশি মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষও হাতে দুশের আংটি পরে কাছা দিয়ে পাটের কাপড় পরে পুজো করেন। এই প্রথা চলে আসছে ১৫০০ শতাব্দী থেকে। এই দুর্গাপূজোর নাম কনক দুর্গা পূজা।
বিদেশেও দুর্গাপূজা প্রচলন বহুদিন ধরে। তার মধ্যে টরোন্টো, বঙ্গীয় পরিষদের দুর্গাপূজার বয়স এই বছর হবে ৩৯। ইউরোপের ওয়ালসের পুজার বয়স হবে ৩৮তম বছর। এছাড়া ইউরোপের Wembley-তে এবার দুর্গাপুজোর বয়স হবে ৩৩। এবছর বোষ্টনের বাংলা ও বিশ্ব-র দুর্গাপূজার বয়স হবে ৩১ বছর। তবে বিদেশের দুর্গাপূজার বিশেষত্ব, এখানে শুধুই শনি ও রবি ছুটির দিন পুজো হয়।
এছাড়া দিল্লীতে সম্ভবতঃ প্রথম দুর্গাপূজা শুরু হয় ১৮৪২ সাল থেকে। রাজসাহীর জনৈক মজুমদার পরিবার এই পুজো শুরু করেন। তবে এখানে সার্বজনীন পূজার প্রথম সূত্রপাত দিল্লী দুর্গাপূজা সমিতি, কাশ্মিরী গেট ১৯১০ সালে। কথিত আছে, ১৯৩৬ সালে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস এই পূজা উৎসবে অংশগ্রহণ করে ছিলেন। দুর্গাপূজার প্রায় একমাস আগে থেকেই দিল্লীতে প্রতি পাড়ায় পাড়ায় নাচ, গান, নাটক ইত্যাদির মহড়া শুরু হয়।
প্রতিবছর শরতকালে মা-দুর্গা তাঁর অসুর নাশিনী এবং মমতাময়ী মায়ের রূপনিয়ে পদার্পণ করেন। তাঁর আগমনে সবার মধ্যে পাপ, বিদ্বেষ, মিথ্যা, অহঙ্কার এবং সবকিছুর যেন অবসান ঘটে। সুতরাং আর কিছুদিনের অপেক্ষা। তারপরেই দেশ-বিদেশে থাকা সকল বাঙালী দেবীর আরাধনায় মাতবেন