নিজস্ব প্রতিনিধি: বলিউডের প্রবীণ অভিনেত্রী জয়া প্রদার কষ্ট দিনের পর দিন বাড়ছে। উত্তরপ্রদেশ আদালত অভিনেতা-রাজনীতিবিদ জয়া প্রদাকে ১৭ নভেম্বর ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের সময় আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘনের মামলায় বারবার হাজির হতে বললেও অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ। এই কারণে মাস কয়েক আগেও তাঁর বিরুদ্ধে অ-জামিনযোগ্য পরোয়ানা জারি হয়েছিল।প্রসিকিউশন অফিসার অমরনাথ তিওয়ারির কথায়, অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য পরোয়ানা জারি করা সত্ত্বেও ৮ নভেম্বর আদালতে হাজির হননি। তাঁর অনুপস্থিতির কারণে, বিশেষ এমপি এমএলএ আদালত জয়াপ্রদার বিরুদ্ধে এনবিডব্লিউ ওয়ারেন্ট জারি করেছিল। সূত্রের খবর, গতকাল, জয়া প্রদার আইনজীবী NBW ওয়ারেন্ট খারিজ করার জন্য আদালতকে অনুরোধ করেছিলেন।
শুনানি শেষে আদালত আপিল খারিজ করে দেন। এর প্রেক্ষিতে আদালত বলছে যে, অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে জারি করা NBW ওয়ারেন্ট অক্ষত থাকবে। পরবর্তী শুনানি হবে ১০ জানুয়ারি। জয়াপ্রদার বিরুদ্ধে সোয়ার থানা এবং কেমরি থানায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের মামলা সাংসদ বিধায়ক আদালতে বিচারাধীন হলেও পুরো ঘটনায় জয়াপ্রদার বক্তব্য এখনও রেকর্ড করা হয়নি। শুনানির জন্য আদালতে হাজির হচ্ছেন না জয়াপ্রদা। আর জয়াপ্রদার এই আচরণে রীতিমতো ক্ষুব্ধ আদালত। ২০১৯ সালে, বিজেপি প্রার্থী জয়া প্রদা রামপুর থেকে নির্বাচনে হেরেছিলেন। নির্বাচনে জয়াপ্রদার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এসপি প্রার্থী আজম বিজয়ী হয়েছিলেন। এরপর জয়াপ্রদা রামপুরের লোকসভায় প্রতিনিধিত্ব করে দুবার এসপির টিকিটে নির্বাচনে জিতে। গতকাল জারি করা অ-জামিনযোগ্য পরোয়ানা বাতিল করতে আদালতে পৌঁছেছিলেন জয়ার আইনজীবীরা। যুক্তিতর্ক শুনানির পর আদালত আপিল খারিজ করে আবারও জামিন অযোগ্য পরোয়ানা জারি করেছেন। আগামী ১০ জানুয়ারি জয়াপ্রদাকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
এদিকে গত সেপ্টেম্বর মাসে পুরনো একটি মামলায় ছয় মাসের জন্যে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন অভিনেত্রী তথা সমাজবাদী পার্টির প্রাক্তন সাংসদ জয়া প্রদা, সঙ্গে ৫০০০ টাকা জরিমানা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। অভিনেত্রীর সঙ্গে মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন তাঁর দুজন ব্যবসায়িক অংশীদার রাম কুমার এবং রাজা বাবুও। আসলে জয়া প্রদা এবং তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদাররা মিলে চেন্নাইতে একটি সিনেমা থিয়েটার কিনেছিলেন। কিন্তু লোকসানের কারণে কয়েক বছর আগেই সিনেমা হলটি তাঁরা বন্ধ করে দেন। কিন্তু হল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থিয়েটারে কাজ করা স্টাফ সদস্যদের উপযুক্ত বকেয়া দেননি অভিনেত্রী এবং তাঁর সহযোগীরা। এমনকী তাঁদের বেতন থেকে ESI কেটে নিলেও তা পরিশোধ করেননি অভিনেত্রী, তাই জয়া প্রদার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন হলকর্মীরা। শ্রম সরকারী বীমা কর্পোরেশনের অধীনে জয়া প্রদা, রাম কুমার এবং রাজা বাবুর বিরুদ্ধে চেন্নাইয়ের এগমোর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন তাঁরা। এরপরই বিচারে দোষী প্রমাণিত হন জযা এবং তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদাররা। আদালত মামলার শুনানি করে তাঁদের ছয় মাসের জন্যে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছিল। এরপরই জয়া প্রদা তাঁর অপরাধ স্বীকার করে থিয়েটার কর্মীদের সমস্ত বকেয়া পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে অভিনেত্রী তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া মামলাটি খারিজ করার জন্য আদালতের কাছে আবেদনও করেছিলেন। কিন্তু আদালত তাঁর আপিল প্রত্যাখ্যান করে তাঁকে ৫০০০ টাকা জরিমানাসহ ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছিল।
বলিউডের ৭০-৮০ দশকের একজন প্রথম সারির অভিনেত্রী হলেন তিনি। একাধিক সুপারস্টারের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। দক্ষিণী ছবির নায়িকা হয়েও বলিউডে বেশ পসার জমিয়েছিলেন তিনি। একাধিক ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্র রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। বিশেষ করে জিতেন্দ্রর সঙ্গে তাঁর জুটি বেশ পছন্দের ছিল সকলের। তবে কেরিয়ারের মধ্যগগনেই অভিনয়কে বিদায় জানান অভিনেত্রী। এরপর বিয়ে করেন, তারপর রাজনীতিতে নাম লেখান অভিনেত্রী। যদিও বিয়ে এবং রাজনীতি উভয় ক্ষেত্রেই অসফল তিনি।অভিনেত্রীর সেরা কিছু কাজের মধ্যে রয়েছে, সিরি সিরি মুভভা, সরগাম, সিন্দুর, মা, ওরিকি মোনাগাদু। সত্যজিৎ রায়ের মতো বিখ্যাত পরিচালকরা জয়া প্রদার সঙ্গে করেছেন। তাঁকে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরী মহিলা করা হয় এখনও।