নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রয়াত কিংবদন্তী অভিনেতা শশী কাপুর (Shashi Kapoor) একবার বলেছিলেন যে, তাঁর মা রামসারণী কাপুর তাঁকে ‘ফ্লুকি’ বলে ডাকতেন। কারণ তিনি তাঁর মায়ের অপরিকল্পিত সন্তান ছিলেন। তাঁর মা সেই সময়ে গর্ভধারণ বন্ধ করার চেষ্টা করলেও তা হয়ে ওঠেনি। ১৯৯৫ সালে একটি পুরানো সাক্ষাৎকারে, শশী স্মরণ করেছিলেন যে, যখন তাঁর মা জানতে পেরেছিলেন, তিনি গর্ভবতী ছিলেন তখন তিনি বেশ বিব্রত হয়েছিলেন। তিনি অনাগত সন্তানের গর্ভপাতের জন্য ‘সাইকেল থেকে পড়ে যাওয়ার মতো একাধিক প্রানহানির পদক্ষেপ’ নিয়েছিলেন। কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি।
কারণ শশীর আগে তাঁর দিদি ঊর্মিলার জন্ম হয়। আর ইচ্ছে অনুযায়ী যেহেতু মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়েছিল তাঁদের, সেই কারণে তাঁর মা রামসারনি এবং বাবা অভিনেতা পৃথ্বীরাজ কাপুর বেশ খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু শশীর জন্ম পুরোটাই অপরিকল্পিত ছিল। শশী, ১৮ মার্চ, ১৯৩৮ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনিই ছিলেন পৃথ্বীরাজ এবং রামসারনির কনিষ্ঠ পুত্র। তাঁর দুই ভাই – অভিনেতা রাজ কাপুর এবং শাম্মি কাপুর – এবং একটি বোন – ঊর্মিলা সিয়াল। তবে পৃথ্বীরাজ এবং রামসারনির আরও দুই পুত্র ছিল, দেবিন্দর এবং রবিন্দর, যারা শারীরিক জটিলতার কারণে এক সপ্তাহের ব্যবধানে মারা যান। তাঁরা দুজনেই শশীর থেকে বড় ছিলেন।
একটি বেসরকারি সংবাদমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে শশী বলেছিলেন, “আমার মা আমাকে ফ্লুকি বলে ডাকতেন কারণ আমি অপরিকল্পিত ছিলাম। তাঁর সেই মুহূর্তে অলরেডি চারটি ছেলে ছিল। ছেলের পর আমার মা এবং আমার বাবা একটি মেয়ের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। সেই ইচ্ছে তাঁদের পুর্ণ হয় ১৯৩৩ সালে, উর্মিলার জন্ম হওয়ার পর। তখন আমাদের পরিবার একেবারেই সম্পূর্ণ হয়েছিল। আমার বাবা-মা বেশ খুশি ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ, পাঁচ বছর পর, আমার মা আবিষ্কার করলেন যে তিনি আবারও গর্ভবতী হয়েছেন। যা আমার মায়ের জন্যে খুবই বিব্রতকর ছিল। তিনি গর্ভপাত করার জন্যে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই সময়ে সমাজ এতটাও উন্নত ছিল না। গর্ভপাতের মতো কোনো ব্যবস্থা ছিল না। সে সাইকেল থেকে পড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে সিঁড়ি দিয়ে পড়ে যাওয়া, কুইনাইন খাওয়া, সবকিছুর চেষ্টা করেছিলেন যাতে তাঁর সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু শশী কাপুরের জন্ম হয়। তাই আমি একজন ফ্লুক অভিনেতা, একজন ফ্লুক তারকা এবং একজন ফ্লুক ব্যক্তি।”
রাজ কাপুর পরিচালিত আগ (1948) চলচ্চিত্রে শিশু অভিনেতা হিসেবে শশী তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। প্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ছিল যশ চোপড়ার ধর্মপুত্র (1961)। অভিনেতা তাঁর কেরিয়ারে কন্যাদান (1968), রোটি কাপড়া অউর মাকান (1974), প্রেম কাহানি এবং দিওয়ার (1975), চক্কর পে চক্কর এবং কাভি কাভি (1976), সত্যম শিবম সুন্দরম, তৃষ্ণা এবং হীরালাল পান্নালের মতো অনেক ছবিতে জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ২০১৭ সালে ৪ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।