নিজস্ব প্রতিনিধি: বিশ্ব উদ্বিগ্ন। কারণ শুরু হয়েছে যুদ্ধ। রাশিয়া(Russia) আর ইউক্রেনের মধ্যে। কার্যত এই যুদ্ধ যাতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে রূপান্তরিত না হয় তার জন্য হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র(USA) ও ন্যাটো। আর সেই সুযোগেই ইউক্রেনে চূড়ান্ত আগ্রাসন চালিয়ে তা দখল করার পথে হাঁটা দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। যার চূড়ান্ত লক্ষ্য সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নকে আবার ফিরিয়ে আনা। রাশিয়ার এই আধিপত্যবাদকে বিশ্বের অনেকেই সমর্থন করছেন না, কিন্তু কেউ বাধা দিতেও পারছেন না। ইউক্রেনকে ঘিরে যখন এই উদ্বেগ বিশ্বজুড়ে, ঠিক তখন কার্যত নিঃশব্দে আরও একটা যুদ্ধের দামামা বাজানোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে উত্তর পূর্ব এশিয়ায়। সূত্রের দাবি, যে কোনও মুহুর্তে তাইওয়ানে(Taiwan) হামলা চালাতে পারে চিন(China)। লক্ষ্য একটাই তাইওয়ান দখল। আর যদি সেটা হয় তাহলে, এক্ষেত্রেও গোটা বিশ্বকে কার্যত দেখতে হবে আরও এক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অবলুপ্তি। হয়ত এই সময়টার জন্যই অপেক্ষা করছিল বেজিং, যখন তাঁর আগ্রাসনকে কেউ রোধ করতে এগিয়ে আসবে না।
চিন আর রাশিয়া। বিশ্বের দুই বৃহৎ শক্তিধর দেশ। এখন তাঁরাই কার্যত নয়া উপনিবেশবাদ শুরু করেছে। রাশিয়ার নজরে সাবেক সোভিয়েতে থাকা এলাকাগুলি আর চিনের নজরে মূল চিনা ভূখণ্ড থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া এলাকাগুলি। পুতিন যেমন চাইছেন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নকে ফের খাড়া করতে তেমনি বেজিং চাইছে এশিয়ায় তাঁদের আধিপত্যবাদকে চূড়ান্ত রূপ দিতে। দুই রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই অবশ্য প্রধান বাধা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মূলত ওয়াশিংটনের উপস্থিতির জন্যই রাশিয়া ও চিনকে দীর্ঘকাল হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হয়েছে। আমেরিকার ক্ষমতাই এই দুই রাষ্ট্রের আগ্রাসন নীতিকে এতদিন ধরে আটকে রেখেছিল। কিন্তু কোভিডে ধ্বস্ত মার্কিন অর্থনীতি এখন ওয়াশিংটনকে বাধ্য করেছে হাত গুটিয়ে চুপ করে বসে থাকতে। চুপ করে গিয়েছে ন্যাটোও। আর এই দুই দিক থেকেই কোনও চ্যালেঞ্জ আসবে না বুঝে নিয়েই ইউক্রেনে(Ukraine) চূড়ান্ত আগ্রাসন চালাচ্ছে রাশিয়া, থুড়ি পুতিন। সাবেক সোভিয়তের সম্রাট হওয়ার বাসনা যার।
চিন দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে তাইওয়ান চিনের মূল ভূখণ্ডেরই অংশ। তাই তাইওয়ানের স্বাধীনতা তাঁরা মানে না। বস্তুত বিগত কয়েক বছর ধরেই চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং বার বার তাইওয়ানের রাষ্ট্রনেতাদের প্রকাশ্যেই কড়া বার্তা দিয়েছেন যে তাঁরা যেন দ্রুত চিনের অধীনতা স্বীকার করে নেন। কিন্তু প্রতিবারই চিনের সেই হুমকির সামনে মাথা ঝোঁকাতে অস্বীকার করেছে তাইওয়ান। তাঁরা পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবেই থাকতে বদ্ধ পরিকর। আর তাঁদের এই সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমর্থন। ওয়াশিংটন শুধু তাইওয়ানকে সমর্থনই করছে তাই নয়, সামরিক ও আর্থিক সাহায্যও তারা দিয়ে চলেছে ক্রমাগত। কিন্তু ইউক্রেনের ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন ঠিক কতটা অসহায়। তাঁরা রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর পাশাপাশি মৌখিক ভাবে হুমকি ধমকি দিয়ে চলেছে। কিন্তু তার বেশি কিছুই করছে না। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন রুখতে চূড়ান্ত ব্যর্থ মার্কিন যুক্ত্ররাষ্ট্র। এই ঘটনাই কার্যত বলে দিচ্ছে চিন যে কোনওদিন তাইওয়ান আক্রমণ করলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে যাওয়ার দোহাই দিয়ে কার্যত হাত গুটিয়ে বসে থাকবে ওয়াশিংটন। রাশিয়ার সামনে এখন যেমন আর কোনও বাধা নেই, ঠিক তেমনিই চিনের সামনেও আর ওয়াশিংটনের কোনও পাঁচিল নেই। তাই চিনের তাইওয়ান দখলও এখন সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করা হচ্ছে। এখন যেমন ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন বিশ্ব দেখছে হাত গুটিয়ে বসে, ঠিক তেমনি চিনের তাইওয়ান গ্রাসও বিশ্ব দেখবে হাত গুটিয়ে বসে। আর সেটা খুব দ্রুত হতে চলেছে।