নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলায় পরিবর্তনের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) সার্বিকভাবে উদ্যোগী হয়েছিলেন রাজ্যের আর্থিক দুর্দশা ঘোচাতে, আমজনতার নিত্যদিনের জীবনযাপন বদলে দিতে। সেই সূত্রেই বাংলার বুকে গত এক দশকে তিনি একাধিক আর্থসামাজিক প্রকল্পের সূচনা ঘটিয়েছেন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা, জয় জোহর, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, কৃষকবন্ধু, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের মতন প্রকল্পগুলির মাধ্যমে বাংলার মানুষ সরাসরি আর্থিক সাহায্য পাচ্ছেন। পাশাপাশি গতিধারা, ঐক্যশ্রী, সবুজসাথী, স্বাস্থ্যসাথী, খাদ্যসাথী বাংলার মানুষের অনেক খাদ্য থেকে স্বাস্থ্যের সমস্যা মিটিয়েছে, দেখিয়েছে আয়ের পথ। আর এই সব আর্থসামাজিক প্রকল্পের দৌলতেই যে বাংলার আর্থিক হালে অনেকটাই বদলে গিয়েছে, মানুষের আয় বেড়েছে তা স্বীকার করেন দেশ-বিদেশের তাবড় তাবড় অর্থনীতিবিদরা। এর জেরেই মুখ্যমন্ত্রী এখন জোর দিয়েছেন রাজ্যের বুকে শিল্পোন্নয়নে। শিল্পপতিরা যাতে সহজে জমি পান, তাঁরা যাতে নিরুপদ্রব ভাবে শিল্প গঠন করতে পারেন তার দিকে জোর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। অথচ সেই ছবিটাই ধাক্কা খাচ্ছে হুগলি(Hooghly) জেলার সুগন্ধায়। সেখানে একটি মশারি কারখানার(Factory) দখল নিয়ে নিয়েছে গুন্ডারা। ঢুকতেই দেওয়া হচ্ছে না কারখানার মালিককে। আর এইসবই হয়েছে এক তৃণমূল(TMC) নেতার নির্দেশে। অন্তত এমনটাই অভিযোগ শিল্পপতির।
হুগলি জেলার চুঁচুড়া সদর মহকুমার পোলবা-দাদপুর(Polba Dadpur) ব্লকের সুগন্ধা(Sugandha) গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্বপাড়ায় রয়েছে একটি মশারির কারখানা। ওই কারখানার মালিক শিল্পপতি তাপস হালদার। এখন তাঁর অভিযোগ, স্থানীয় কিছু গুণ্ডা ওই কারখানার দখল নিয়েছে। তাঁকে কারখানায় ঢুকতেই দেওয়া হচ্ছে না। আর এইসবই নাকি হচ্ছে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার কথায়। কারখানা যাতে গুণ্ডাদের দখল মুক্ত হয় তার জন্য তিনি সরকারি ও শাসকদলের নানা মহলে তদ্বির করেও কোনও সমাধান পাননি। কারখানার দখলও ফিরে পাননি। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮ সালে রাজ্য শিল্পনিগমের কাছ থেকে তাপসবাবুর সংস্থা ২০ বছরের জন্য ১০ বিঘা জমি লিজে নিয়েছিল। ২০১২ সালে তাপসবাবু সেখানে মশারি বোনার কারখানা চালু করেন। স্থানীয় ৪০ জন বাসিন্দা সেখানে কাজও পান। কারখানা ভালোই চলছিল। কিন্তু কোভিডের কারণে লকডাউন হয়ে যাওয়ার পরেই কারখানায় মন্দা শুরু হয়। সম্প্রতি সেই কারখানা পুনরায় চালু করতে গিয়ে তাপসবাবু দেখেন, তা বেদখল হয়ে গিয়েছে। তারপর থেকে তিনি দোরে দোরে ঘুরেও কারখানার দখল আর পাননি।
খোদ মুখ্যমন্ত্রী যখন রাজ্যে শিল্প স্থাপনের ওপর জোর দিয়েছেন তখন সুগন্ধার এই কারখানার ছবি রাজ্যের সম্পর্কে ভুল বার্তা তুলে ধরছে। তাপসবাবু জানিয়েছেন, ‘সুগন্ধার পূর্বপাড়ায় আমার একটি মশারি তৈরির কারখানা আছে। শিল্পনিগমের থেকে জমি লিজ নিয়ে ওই কারখানা গড়ে তুলেছি। কিন্তু বর্তমানে একদল দুষ্কৃতী কারখানার দখল নিয়ে নিয়েছে। প্রতিবাদ করলে স্থানীয় এক নেতার নাম করে আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমি কারখানায় যেতেও পারছি না। উৎপাদনও বন্ধ রয়েছে। সমস্ত মহলে অভিযোগ করেও কোনও সুরাহা হয়নি।’ যদিও জেলা প্রশাসন থেকে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের মায় পুলিশও বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না। তাঁদের দাবি এই ধরনের কোনও ঘটনার কথা তাঁদের জানা নেই। যদিও স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মজুমদার জানিয়েছেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিচ্ছি। যদি দেখি এই ঘটনা ঘটেছে তাহলে অবিলম্বে এই নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব।’