নিজস্ব প্রতিনিধি: কয়লা-কাণ্ডে আর্থিক তছরূপ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়(Abhishek Banerjee) এবং তাঁর স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লিতে তলব করেছে ইডি(ED) বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। পাল্টা অভিষেক দিল্লি(Delhi) হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন, যাতে তাঁদের কলকাতাতেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু গত ১১ মার্চ অভিষেকের আবেদন খারিজ করে দেয় দিল্লির আদালত। আর তার পরেই এদিনই সস্ত্রীক দিল্লির পথে পা বাড়ান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামিকাল তিনি হাজিরা দেবেন ইডির কার্যালয়ে। রুজিরা হাজিরা দিতে পারেন মঙ্গলবার। তবে এদিন দিল্লি যাত্রার আগে কলকাতা(Kolkata) বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রীতিমত হুঙ্কার দিয়ে উঠেছেন অভিষেক। সাফ জানিয়েছেন, বাংলায় হেরেছে বলে গাত্রদাহ হচ্ছে বিজেপির। তাই আবারও ইডির তলব এসেছে, কিন্তু তিনি আত্মসমর্পণ করবেন না। সেই সঙ্গে এই ঘটনার শেষ দেখে ছাড়বেন। প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টেও যাবেন।
এদিন কলকাতা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে অভিষেক নাম না করেই আক্রমণ শানেন নরেন্দ্র মোদি থেকে শুভেন্দু অধিকারীকে। প্রশ্ন তুলেছেন কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির নিরপেক্ষতা নিয়েও। প্রশ্ন তুলেছেন বিচার বিভাগের ভূমিকা নিয়েও। সেই সঙ্গে দিয়েছেন বার্তা যে তাঁর ওপর যতই চাপ দেওয়া হোক না কেন তিনি জনতা ভিন্ন আর কারও কাছে মাথা নত করবেন না। এদিন অভিষেক বলেছেন, ‘সিবিআই ইডির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিজেপি(BJP) সরকার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে কাজে লাগাচ্ছে। আমি লড়াই করব। মাথা উঁচু করে লড়ে যাব। সুপ্রিম কোর্টের দরজা খোলা আছে। দরকার হলে আমি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করব। বিধানসভা ভোটে আত্মসমর্পণ করিনি। মাথা উঁচু করে লড়াই করেছি। মানুষের ভোটে জিতেছিলাম। লড়াই করে জয় পেয়েছিলাম। মাথা নিচু করতে হলে মানুষের কাছে করব। এর আগেও ইডি ডেকেছিল। ১০ ঘণ্টা জেরা করেছিল। সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। বারবার কলকাতা বদলে দিল্লিতে ডেকে হয়রান করা হচ্ছে। কলকাতায় ডাকলে দরকারে রোজ যেতাম। কিন্তু এভাবে রাজ্যের একাধিক কাজ ফেলে দিল্লি যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এই সুযোগটাই নিচ্ছে বিজেপি। দিনচারেক আগে চোখে অপারেশন হয়েছে। সেই নিয়েই যাচ্ছি। মাথা উচু করে বাঁচতে জানি। কোনও কিছুর বিরুদ্ধেই মাথা নোয়াব না। আর সেই জন্যই এই লড়াই। আমি দেড় বছর আগে যা বলেছিলাম, আজও তাই বলছি। আমার বিরুদ্ধে কোনও রকম টাকা নেওয়ার যদি প্রমাণ দিতে পারেন, তাহলে ফাঁসির মঞ্চে মৃত্যুবরণ করব।’
অভিষেক এদিন কেন্দ্রীয় এজেন্সি ও বিচার বিভাগের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। বলেছেন, ‘যাঁদের বিরুদ্ধে প্রমাণ, কাগজ মুড়িয়ে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে, তাঁদের সিবিআই ইডি ডাকে না। তখন ওঁদের চোখে ছানি পড়ে যাচ্ছে। এই কারণেই তদন্তকারী সংস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এদের গাত্রদাহ কেন, কারণ এরা বাংলায় হেরেছে। গত বছর এদের আমরা ল্যাজেগোবরে করেছি। বাংলার মানুষ বহিরাগতদের তাড়িয়েছে। বাংলার মানুষ মেরুদণ্ড বিক্রি করেনি বলে গায়ে জ্বালা। কিন্তু আমরা আত্মসমর্পণ করব না। আমরা এই লড়াইয়ের শেষ দেখে ছাড়ব।’ তিনি আরও বলেন, ‘দিল্লি হাই কোর্টে আবেদন করেছিলাম। দীর্ঘ দিন শুনানির পর তিন মাস রায় স্থগিত রাখা হয়েছিল। গত ১০ তারিখ চার রাজ্যে নির্বাচনে বিজেপি জেতার পর ১১ তারিখ আমার পিটিশন খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও বলছি আমি বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখি। কিন্তু দু’টি বিযয় কাকতালীয় হতে পারে না। আমি জুরিসডিকশন চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। কলকাতার মামলায় দিল্লি কেন ডেকে পাঠাবে। কলকাতায় তো অফিস আছে। যতবার খুশি ডাকুন। আমি তো বলিনি যাব না। বাংলার লোক মাথানত করে না। আমি মানুষের কাছে মাথা নত করতে পারি। কিন্তু অন্যায়ের কাছে মাথা নত করব না। চারদিন আগে চোখে অস্ত্রপচার হয়েছে। ডাক্তার বেডরেস্টে থাকতে বলেছে, তাও আমি যাচ্ছি।’