নিজস্ব প্রতিনিধি: ক্যামাক স্ট্রিটে পৌঁছে গিয়েছেন অর্জুন সিং। বৈঠক করছেন তৃণমূলের (TMC) যুবরাজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তাঁর কনভয় ক্যামাকস্ট্রিটে তৃণমূল কার্যালয়ের বাইরে দাঁড়িয়ে। অবশেষে আলিপুরের বিলাসবহুল হোটেল থেকে বেরিয়ে তিনি সোজা যান ক্যামাক স্ট্রিটে। এখান থেকেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে তিনি তুলে নেবেন তৃণমূলের পতাকা। টানটান উত্তেজনা রাজনৈতিক মহলে।
তৃণমূল ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন অর্জুন সিং। অথচ তৃণমূলের জন্মের আগে থেকেও তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহধন্য ছিলেন তিনি। সেই অর্জুন তৃণমূলের পথে। কী বলছেন একাধিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব? কী বলছেন তৃণমূল নেতৃত্ব ও বিজেপি নেতৃত্ব? জেনে নেওয়া যাক।
বেশ কয়েকদিন ধরেই বিজেপির (BJP) বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ছিলেন ব্যারাকপুরের সাংসদ (MP) অর্জুন সিং। পাট শিল্পকে উপেক্ষা করা হচ্ছে, এই অভিযোগ তুলেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন তিনি। তাঁর গলায় শোনা গিয়েছিল, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘেঁষা সুর। রবিবার টুইট করেন অর্জুন সিং। আর তারপরেই দলবদল নিয়ে শুরু হয় জোর জল্পনা। কিছুক্ষণ পরেই সাংবাদিক বৈঠক করেন অর্জুন। বলেন, একটা কাউন্টডাউন শেষ হতে চলেছে। এরপর এই রাজনৈতিক দল পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেন। বলেন, একটা কাউন্টডাউন শেষ হওয়া মানেই আরেকটা কাউন্টডাউন শুরু। পাট নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে বলার পরেই তিনি বলেন, এবার রাজ্যের সঙ্গে বৈঠক। তবে সরকার না কি দল, সেই প্রসঙ্গে চুপ থেকেছিলেন তিনি। রাজনৈতিক মহলে একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে যায় তাঁর দল পরিবর্তন নিয়ে।
দুপুরে নিজের বাড়ি থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। তারপর সোজাসুজি ওঠেন আলিপুরের পাঁচতারা বিলাসবহুল হোটেলে। হোটেলের সামনেই দেখা যায় একটি গাড়িতে তৃণমূলের পতাকা। তাহলে বৈঠক? কাশীপুরের একজন তৃণমূল নেতা জানিয়েছিলেন, অর্জুন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক। তবে কোথায় বৈঠক বা কে কে উপস্থিত থাকবেন, তা জানা যায়নি। এরপরেই জল্পনা উস্কে অর্জুন ঘনিষ্ঠ একজন দাবি করেন, অর্জুন সিং তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতেই হোটেলে এসেছেন।
এদিকে তার আগেই সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পাদক তথা ডায়মণ্ডহারবারের সাংসদ (MP) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বিধায়ক পার্থ ভৌমিক, বিধায়ক রফিকুর রহমান, রাজ চক্রবর্তী সহ উত্তর ২৪ পরগনার সাংগঠনিক জেলার নেতৃত্ববৃন্দ। একটু পরেই সেখানে আসে ডায়মন্ড হারবারের সংসদের কনভয়। সূত্রের খবর, অর্জুনের দলে প্রত্যাবর্তন নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠক করেন উত্তর ২৪ পরগণার জেলা নেতৃত্বদের সঙ্গে। খোঁজ নেন অর্জুন জোড়াফুল শিবিরে ফিরলে কারও কোনও আপত্তি আছে কি না। বিশেষ সূত্রের খবর, জেলা নেতৃত্ব বলে, রাজ্য নেতৃত্তের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
অর্জুনের তৃণমূলে আসা প্রসঙ্গে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, অর্জুন সিংয়ের প্রত্যাবর্তন মানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নৈতিক জয়। দলের সুপ্রিমোর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
বিধায়ক পার্থ ভৌমিক বলেন, অর্জুন দল ছেড়ে বিজেপিতে চলে যাওয়ায় খারাপ লেগেছিল। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া কারও অস্তিত্ব নেই। অর্জুনের প্রত্যাবর্তন প্রমাণ করে দিদির ওপর আস্থা রাখতেই হয়।
তৃণমূল শিবিরের নেতৃত্ব জানিয়েছেন এ কথাই। আর কী বলছেন, বিজেপি শিবিরে থেকেও ‘বেসুরো’ সাংসদ অনুপম হাজরা? অর্জুনের তৃণমূলের ফেরা নিয়ে তিনি বলেন, বিজেপি শিবিরের বড় ক্ষতি হয়ে গেল। খুব ভালো সংগঠক ও নেতা ছিলেন অর্জুন সিং। দল ছাড়া বা পরিবর্তন করা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, বিজেপি হারাল অর্জুন সিংকে।
উল্লেখ্য, সাংবাদিক বৈঠক করে অর্জুন সিং বলেছিলেন, তিনি বিজেপি ছাড়ছেন না কি বিজেপি তাঁকে ধরে রাখতে পারল না, তা নিয়ে তিনি এখনই কিছু বলতে চান না।
