নিজস্ব প্রতিনিধি: তারা খসে পড়ল বাংলার সাহিত্যের আকাশ থেকে। তারাদের দেশেই পাড়ি জমালেন ‘পান্ডব গোয়েন্দা’র স্রষ্টা ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়(Sashtipada Chattopadhay)। শুক্রবার সকাল ১১টা নাগাদ হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২। তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত রবিবার বাড়িতেই স্ট্রোক হয়েছিল তাঁর। তারপরই অশীতিপর ষষ্ঠীপদকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। বাবলু, বিলু, ভোম্বল, পঞ্চু, বাচ্চু আর বিচ্চুকে পাঠকদের কাছে রেখেই স্বর্গে পাড়ি জমালেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক। ‘কাকাবাবু’র স্রষ্টা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আগেই চলে গিয়েছেন। চলে গিয়েছেন ‘ঋজুদা’র স্রষ্টা বুদ্ধদেব গুহও। চলে গিয়েছেন হাঁদা-ভোঁদা, বাঁটুল দি গ্রেট, নন্টে-ফন্টে’র স্রষ্টা নারায়ণ দেবনাথ। এবার চলে গেলেন পান্ডব গোয়েন্দার(Pandab Goyenda) স্রষ্টাও। থাকল পড়ে কিশোর জগত।
আরও পড়ুন বিদ্যুৎধন্য বিশ্বভারতীর বসন্ত বন্দনাতেও মার খেলেন পড়ুয়ারা
ষষ্ঠীপদবাবুর হাতে জন্ম নেওয়া ‘পান্ডব গোয়েন্দা’ কার্যত বাংলার কয়েক প্রজন্মের কিশোর-কিশোরীকে বুঁদ করে রেখেছিল। দুঃসাহসী, বুদ্ধিমান এবং নির্ভীক পঞ্চ পাণ্ডবকে ষষ্ঠীপদবাবু তুলে ধরেছেন তাঁর একের পর এক রোমাঞ্চকর উপন্যাসে। তবে শুধু পাণ্ডব গোয়েন্দাই নয়, তাঁর সৃষ্টির ঝুলিতে রয়েছে একাধিক গোয়েন্দা গল্প, উপন্যাস। পাতায়। দুর্গম পাহাড় থেকে শুরু করে বুদ্ধির ভেলকি, সব জায়গাতেই মাত দিয়েছে পান্ডব গোয়েন্দা। তাঁদের রহস্য উন্মোচনের নেশা বাঙালিকে প্রেমে পড়তে বাধ্য করেছে। ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়ের লেখনিতে জীবন্ত হয়ে উঠেছিল প্রতিটি চরিত্র। আজ সব কিছু থেমে গেল। পান্ডব গোয়েন্দা আর কোনও অ্যাডভেঞ্চারে যাবে না।
আরও পড়ুন ১৭ মার্চ কলকাতায় Post and Pension আদালত
১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৯ মার্চ হাওড়ার(Howrah) খুরুটতে জন্মগ্রহণ করেন ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়। তিনি ছোটবেলা থেকেই অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় ছিলেন।গোয়েন্দা গল্প, উপন্যাসের প্রতি ছিল অমোঘ টান। ১৯৬১ সালে তিনি প্রথম সারির এক সংবাদপত্রের সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর ১৯৮১ সালে পাণ্ডব গোয়েন্দা তাঁকে বিপুল জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল। হাওড়ার রামরাজাতলার বাসিন্দা ছিলেন তিনি। তাঁর পরিবারের সূত্রে জানা গিয়েছে, এই নিয়ে তিনবার স্ট্রোক হয়েছিল তাঁর। ডিসেম্বর, জানুয়ারি মাসে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সেই সময় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল এবং তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু, মার্চে ফের তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। আর এবার তো সব শেষ। এদিন সাহিত্যিকেকে দুপুর ৩টের সময় হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া হবে হাওড়ার জগাছা এলাকার ধারসায়, তাঁর নিজ বাসভবনে। তারপর শিবপুর শ্মশানেই হবে তাঁর শেষকৃত্য। ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়কে ২০১৭ সালে শিশুসাহিত্যে অবদানের জন্য স্বীকৃতি দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। বাংলা আকাদেমি সম্মানে ভূষিত করা হয়েছিল তাঁকে।