নিজস্ব প্রতিনিধি: পুরুষের হাতে নারী নিগ্রহের ঘটনা আখছারই ঘটে চলেছে ভারতে। বিশ্বের বুকেও কার্যত প্রতি সেকেন্ডে ধর্ষণ, গণধর্ষণ, শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে চলেছে অবিরত। পুরুষের হাতেও যে পুরুষ আক্রান্ত হতে পারেন তা নানান সময়ে উঠে এসেছে। হালের রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধেও রুশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ইউক্রেনের যুবক ও পুরুষদের ধর্ষণ তথা গণধর্ষণ করার। তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জও(UNO)। এবার বঙ্গ বিজেপির(Bengal BJP) অন্দরে তোলপাড় শুরু হয়েছে সেই পুরুষের হাতে পুরুষের যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ওঠায়। তা নিয়ে থানায় অভিযোগও দায়ের হয়েছে। মজার কথা অভিযোগকারী বিজেপির আইটি সেলের কর্মী এবং অভিযুক্ত ৪ জনের মধ্যে দুইজন বিজেপির নেতা এবং বাকি দুইজন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান। আপাতত সকলেই গা ঢাকা দিয়েছেন। পুলিশের ঘটনার প্রাথমিক তদন্তও শুরু করেছে। কিন্তু এই একটি ঘটনায় কার্যত বেআব্রু হয়েছে বিজেপির অন্দরের বিশৃঙ্খলা এবং গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।
অভিযোগ উঠেছে, বিজেপির-ই আইটি সেলের কর্মী তথা যুবনেতা মণীশ বিসসাকে দলীয় কাজের অজুহাতে কলকাতা থেকে সিকিমে নিয়ে গিয়েছিলেন বিজেপির লিগাল সেলের ইনচার্জ তথা একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বালিগঞ্জে বিজেপি প্রার্থী লোকনাথ চট্টোপাধ্যায়। এখন মণীশ অভিযোগ তুলেছেন, প্রথমে তাঁকে জানানো হয়েছিল দলের কাজের জন্য তাঁকে সিকিমে নিয়ে যেতে হচ্ছে। কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন লোকনাথ তাঁকে ব্যক্তিগত সেবক হিসাবে নিয়ে গিয়েছেন। সেখানে লোকনাথকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে খুশি করতে হবে। কার্যত মণীশকে সেখানে বাধ্য করা হয়, লোকনাথের সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হতে। শুধু তাই নয়, সিকিমেই ২৬ থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত লোকনাথ, বঙ্গ বিজেপির অপর যুবনেতা রাকেশ কুমার এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর দুই জওয়ান রাহুল ও বিনোধ তাঁকে একাধিকবার গণধর্ষণ করে। এই অভিযোগ তুলেই কলকাতায় ফিরে মণীশ পোস্তা থানায় ওই ৪জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। মণীশের দাবি, তিনি কার্যত আরপিএফের সাহায্যে পালিয়ে এসেছেন।
ঘটনা সামনে আসার পর থেকে খোঁজ মিলছে না বিজেপির দুই অভিযুক্ত নেতার। দুইজনই কার্যত গা ঢাকা দিয়েছেন। তবে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামনে চলে এসেছে বঙ্গ বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য(Shamik Bhattacharya) সাংবাদিকদের প্রথমে জানান, ‘লোকনাথকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আইন আইনের পথেই চলবে। যত দিন না নির্দোষ প্রমাণিত হচ্ছেন, তত দিন লোকনাথ দলের কাজ করবেন না।’ পরে অবশ্য বঙ্গ বিজেপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, শমীকের বক্তব্য আর দলের বক্তব্য এক নয়। লোকনাথকে দায়িত্ব থেকে সরানো হয়নি। উল্টে তিনি নিজেই সমস্ত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার(Sukanta Majumdar) নিজে জানান, ‘লোকনাথকে পদ থেকে সরানো হয়নি। অভিযোগ পুরোপুরি ঠিক নয়। অভিযোগের যে সারবত্তা নেই, তার প্রমাণ এসেছে। আপাতত কাজ থেকে সাময়িক ভাবে সরে আছেন। উনিই পদ থেকে সরতে চেয়েছেন।’ লোকনাথের অনুগামীদের দাবি, নব্য বিজেপির হাতে বঙ্গ বিজেপির দায়দায়িত্ব তুলে দেওয়ার একটা চক্রান্ত চলছে। সেই দায়িত্ব পরিবর্তনের জন্য বেছে বাছে দলের আদি নেতাদের বিরুদ্ধে নানারকম চক্রান্ত করা হচ্ছে। যারা নিজে থেকে দলের পদ থেকে সরে যাচ্ছেন তাঁরা বেঁচে যাচ্ছেন আর যার সরছেন না তাঁদের বিরুদ্ধেই এইধরনের কদর্য চক্রান্ত করা হচ্ছে। লোকনাথ ও রাকেশ দুইজনই সেই চক্রান্তের শিকার। আর এই চক্রান্ত করছেন তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা এক হেভিওয়েট নেতা ও তাঁর অনুগামীরা।
ঘটনা সত্য মিথ্যা যাই হোক না কেন, এই যৌন নিগ্রহের অভিযোগকে ঘিরে এখন বঙ্গ বিজেপি শুধু যে তোল্পাড় হচ্ছে তাই নয়, দল কার্যত দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। একদল প্রকাশ্যেই লোকনাথের পাশে দাঁড়িয়েছেন, অন্যদিকে অপরদল প্রকাশ্যে মণীশের পাশে দাঁড়িয়েছেন। দলের ক্ষমতাসীন শিবিরের দাবি, অভিযোগ মিথ্যা। অপর শিবিরের দাবি, অভিযোগ সত্য এবং অভিযুক্ত দুই নেতার বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে। পুলিশের দাবি, তাঁদের হাতে প্রমাণ আছে ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সিকিম পুলিশের সহায়তা ভিন্ন তদন্ত সম্পূর্ণ হবে না। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর অভিযুক্ত দুই জওয়ান এখনও চিহ্নিত হননি। তাঁদের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় এখনও সামনে আসেনি। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সাহায্যও প্রয়োজন। সেই সাহায্যও কতখানি পাওয়া যাবে তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। কেননা শীতলকুচির ঘটনায় অভিযুক্ত জওয়ানদের আড়াল করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। এক্ষেত্রেও যে তা হবে না তার গ্যারেন্টি কোথায়। তবে মণীশের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ(Police) একাধিক ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। লোকনাথ ও রাকেশের খোঁজও শুরু হয়েছে। পুলিশের দাবি, তাঁরা দ্রুত গ্রেফতার হবেন।