নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্য বিধানসভায়(West Bengal State Legislative Assembly) এদিন পাশ হয়ে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় সংশোধনী বিল। সোমবার বিধানসভার অধিবেশন কক্ষে এই বিল পেশ করেছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সেই বিলের ওপর আলোচনার শেষে তা এদিন ১৮৩-৪০ ভোটে পাশ হয়ে যায়। আর এই ভোটাভুটির সংখ্যা নিয়েই এবার চাঞ্চল্য ছড়ালো রাজ্য বিধানসভার পাশাপাশি রাজ্য রাজনীতির আঙিনাতেও। একুশের বিধানসভায় বাম ও কংগ্রেসের কোনও প্রতিনিধি জয়লাভ করতে পারেনি। তাই রাজ্য বিধানসভায় বাম ও কংগ্রেস শূন্য। সেখানে বিধায়ক রয়েছে মাত্র ২টি দলের। তৃণমূল(TMC) ও বিজেপি(BJP)’র। এদিন বিজেপির ৫৭জন বিধায়ক এই বিলের ভোটাভুটিতে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু ফল বার হতেই দেখা গেল ১৭জন বিজেপি বিধায়কের ভোট পড়েনি বিলের বিপক্ষে। আর এখানেই প্রশ্ন এই ১৭জন বিধায়কের ভোট গেল কোথায়।
বিজেপির ৫৭জন বিধায়ক যদি দলের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য থাকতো তাহলে পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় সংশোধনী বিল পাশ হওয়ার ক্ষেত্রে ১৮৪-৫৭ ভোট পড়ার ছবি উঠে আসত। কেননা এদিন যখন এই বিলের ওপর ভোটাভুটি হয় তখন তৃণমূলের ১৮৪জন বিধায়ক উপস্থিত ছিলেন এবং তাঁরা সকলেই বিলের পক্ষেই ভোট দিয়েছেন। কিন্তু বিজেপির ৫৭জন বিধায়ক ভোটে অংশ নিলেও বিলের বিপক্ষে ভোট পড়েছে ৪০টি। অথচ তা পড়ার কথা ছিল ৫৭টি। আর এখানেই প্রশ্ন ১৭জন বিজেপি বিধায়কের ভোট কোথায় গেল? বিজেপির দাবি, তৃণমূলের সব বিধায়ক ভোটে অংশ নেননি। সেই ঘাটতি ঢাকতে বিজেপি বিধায়কদের ভোট লুঠ করে বিলের স্বপক্ষে তুলে ধরা হয়েছে। বিজেপি বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করার কথাও জানিয়েছে। যদিও তৃণমূলের দাবি, বিজেপি ছেড়ে যে সব বিধায়ক তৃণমূলে আসার জন্য আগে থেকেই লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তাঁরাই এদিন নিজেদের ভোট কার্যত নষ্ট করেছেন। আর তার জেরেই বিলের বিপক্ষে কম ভোট পড়েছে। আর এখানেই চিন্তা ছড়িয়েছে গেরুয়া শিবিরে। কেননা সামনেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন।
দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে(Precedential Election) বাংলার সব বিধায়কেরাইও ভোট দেবেন। খাতায় কলমে বিজেপির বিধায়ক রয়েছেন ৭৫জন। যদিও তাঁদের মধ্যে ৫-৬জন ইতিমধ্যেই তৃণমূলে পা বাড়িয়ে বসে আছেন। এবার এদিন আরও ১৭জন বিধায়ককে ঘিরে সন্দেহ করা তৈরি হল। কেননা যে ৫-৬জন বিধায়ক আগে থেকেই তৃণমূলে পা বাড়িয়ে বসে আছেন তাঁদের মধ্যে কেউই এদিনের ভোটে অংশ নেননি। বস্তুত তাঁরা কেউ এদিন বিধানসভাতেও ছিলেন না। আর এখানেই প্রশ্ন ওই ৫-৬জন বিধায়ক এবং তার সঙ্গে যোগ হওয়া নতুন করে আরও ১৭জন বিধায়ক আগামী দিনে কী করবেন তা নিয়ে। মানে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোটাভুটিতে বিজেপির জন ২৩ বিধায়কের ভোট বিজেপি প্রার্থী আদৌ পাবেন কিনা তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল। এমনিতেই বিজেপিতে ধাক্কা দিতে বিজেপি বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে এবার প্রার্থী দেওয়ার তোড়জোড় করছে, যার নেপথ্যে রয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। মনে করা হচ্ছে যে পক্ষই জিতুক না কেন, জোরদার লড়াই হবে। উল্লেখ্য এই ভোটে প্রত্যেক সাংসদ ও বিধায়কের ভোট মূল্য ৭০০। আর সেই জায়গায় যদি বিজেপির ২৩জন বিধায়কের ভোট বিজেপি বিরোধী শিবিরের প্রার্থী পেয়ে যান তাহলে মোদির প্রার্থী কিন্তু ১৬১০০ ভোটে পিছিয়ে যাবেন। কার্যত এই হিসাব বিজেপিও পেয়েছে। আর তাতেই কার্যত রাতের ঘুম ছুটেছে গেরুয়া শিবিরের।