30ºc, Haze
Sunday, 2nd April, 2023 6:17 pm
নিজস্ব প্রতিনিধি: নজীরবিহীন ঘটনা বললেও কম বলা হবে। সাম্প্রতিককালের মধ্যে রাজ্যের চিকিৎসা ক্ষেত্রে এত চাঞ্চল্যকর ঘটনা কখনও ঘটেনি। দন্ত চিকিৎসা ও শিক্ষার শীর্ষ নিয়ামক সংস্থা ডেন্টাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া বা DCI সুপারিশ করেছে কলকাতার(Kolkata) বুকে থাকা আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজের(R Ahmed Dental College and Hospital) স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে আসন কমিয়ে দেওয়া হোক। শুধু যে এই সুপারিশ করা তাই নয়, ওই কলেজের কার্যনির্বাহী অধ্যক্ষ ডাঃ তপন গিরিকে দিল্লিতেও তলব করা হয়েছে। আর এই ঘটনা সামনে আসতেই রাজ্যের স্বাস্থ্য মহলে রীতিমত হইচই পড়ে গিয়েছে। এশিয়ার প্রাচীনতম এবং রাজ্যের এক নম্বর এই দন্ত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য সারা বছর ধরে প্রচুর ডাক্তারি পড়ুয়া অশেষ চেষ্টা করেন। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এই কলেজের আসনসংখ্যা বাড়ানো তো দূরের কথা তা আরও কমিয়ে দেওয়ার নেপথ্যে বাংলা বিরোধী(Anti Bengal) কোনও মানসিকতা বা রাজনীতি কাজ করছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে।
আরও পড়ুন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল এবার মেডিকেল কলেজও
জানা গিয়েছে, কিছুদিন আগে DCI’র একটি প্রতিনিধি দল আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজে হুট করেই পরিদর্শনে এসেছিল। কেননা তাঁদের কাছে এই কলেজ সম্পর্কে বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়েছিল। তার জেরেই সেই পরিদর্শন। ঘটনার দিন DCI’র একটি প্রতিনিধি দল সকাল ৯টা ৫মিনিটে কলেজে আসেন। তখন অধ্যক্ষ বা তাঁর অফিসের কোনও কর্মীই সেখানে ছিলেন না। সকাল ৯টা ৪০মিনিটে হাজিরা খাতার ছবি তোলা হয়। তখন মাত্র ৮জন হাজিরা দিয়েছিলেন! পরে তাঁরা ওই কলেজ ও হাসপাতালের নানা বিভাগ ঘুরে ঘুরে দেখেন, ছবি তোলেন ও সেখানে আসা তথা ভর্তি থাকা রোগী তথা তাঁদের পরিজনদের সঙ্গেও কথা বলেন। কলকাতা থেকে দিল্লিতে ফিরে গিয়ে তাঁরা তাঁদের রিপোর্ট জমা দেন। সেই রিপোর্টেও উল্লেখ করা হয় এই কলেজের বিভিন্ন বিভাগে পরিকাঠামোগত খামতি ও লোকবলের বিপুল অভাব রয়েছে। বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসক ও কর্মীর অভাব তো রয়েছেই সেই সঙ্গে ডেন্টাল চেয়ার, এক্স-রে ভিউয়ার, এলসিডি প্রোজেক্টর, মাইক্রোস্কোপ, অটোক্লেভ, ফ্রিজ, ইমপ্ল্যান্ট কিট, অক্সিজেন সিলিন্ডার, পালস অক্সিমিটার সহ পঞ্চাশের অধিক চিকিৎসা যন্ত্রের অভাব রয়েছে। পাশাপাশি ওই কলেজে অ্যাটমিক এনার্জি রেগুলেটরি বোর্ডের সার্টিফিকেট ও অ্যাক্রিডিটেশন সার্টিফিকেটও নেই। এমনকি নেই কোনও এথিক্যাল কমিটিও।
আরও পড়ুন ইংরেজবাজার শহরে Flood Center, শিলান্যাস করবেন মুখ্যমন্ত্রী
এর পাশাপাশি DCI থেকে যে রিপোর্ট কেন্দ্র সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রকে পেশ করা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে আসন কমানো হোক। সেই সঙ্গে কলেজের কার্যনির্বাহী অধ্যক্ষ ডাঃ তপন গিরিকে দিল্লিতে তলব করা হোক। আসন কমানোর ক্ষেত্রে DCI যে সুপারিশ করেছে তাতে বলা হয়েছে আসন্ন শিক্ষাবর্ষে এই ডেন্টাল কলেজের স্নাতকের আসন সংখ্যা কমিয়ে অর্ধেক, অর্থাৎ ৫০টি করা হোক। আর্থিকভাবে অনগ্রসর শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত ২৫টি আসন কমিয়ে ১৩টি করা হোক। প্রস্থোডনটিকস, পেরিওডন্টোলজি, পেডিয়াট্রিকস, কনজারভেটিভ ডেন্টিস্ট্রি, অর্থোডনটিকস, ওরাল প্যাথোলজি এবং ওরাল ও ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি– এই সব ক’টি বিভাগের স্নাতকোত্তর আসন ৪টি থেকে কমিয়ে ৩টি করা হোক। কার্যত এই গোটা বিষয়টি সামনে আসতেই এখন হইচই পড়ে গিয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য মহলে। তবে নবান্ন(Nabanna) সূত্রে জানা গিয়েছে, আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজের বিরাট পরিকাঠামো আছে। পরিদর্শন রিপোর্টে অনেক সময়ই ছোট-বড় ত্রুটিবিচ্যুতি বড় করে তুলে ধরা হয়। এক্ষেত্রে সেই সব ভুল ত্রুটি ইতিমধ্যেই সংশোধন করার নির্দেশ কলেজ কর্তৃপক্ষকে দিয়ে দিয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। সেই সঙ্গে কেন্দ্রের ডাকে যাতে ডাঃ গিরি দিল্লি যান সেই নির্দেশও তাঁকে নবান্ন থেকে দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁকে একা পাঠানো হচ্ছে না। সঙ্গে একজন বিশেষ সচিবকেও পাঠানো হচ্ছে রাজ্যের তরফে। নবান্নের আশা আলোচনায় সমস্যা মিটবে।