নিজস্ব প্রতিনিধি: আইনশৃঙ্খলার অজুহাত তুলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হল কলকাতার জি ডি বিড়লা স্কুল(G D Birla Group)। বৃহস্পতিবার সকালে সাড়ে ছ’টা নাগাদ স্কুলে পৌঁছে পড়ুয়ারা দেখেন মূল ফটক বন্ধ। সেখানে ঝোলানো রয়েছে নোটিস(Notice)। তাতেই বলা হয়েছে, ‘পড়ুয়াদের কথা ভেবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আপাতত স্কুল বন্ধ রাখা হচ্ছে।’ স্বাভাবিকভাবে স্কুলের এই আচরণে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা(Parents)। পাশাপাশি স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে উঠেছে আদালত অবমাননার অভিযোগও। কেননা স্কুল বন্ধ করে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ উপেক্ষা করা হয়েছে, এমনই অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনার মূল সমস্যার সূত্রপাত কোভিডকালে। ২০২০ সালে লকডাউন চলার সময়ে অনলাইনে ক্লাস হত এই স্কুলের। কিন্তু প্রথম অভিযোগ ছিল স্কুল খোলা থাকার সময়ে যে হারে ফি নেওয়া হত সেই ফিই নেওয়া হচ্ছে অনলাইনে ক্লাস হলেও। পাশাপাশি সেই সময়ে ওই স্কুলের বেশ কিছু পড়ুয়ার ফি বাকি পড়ে যায়। সম্প্রতি এই স্কুল ফের খোলায় সেখানে পড়ুয়ারা(Students) আসতে শুরু করে দিয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, যে সব পড়ুয়ার ফি বাকি রয়েছে তাঁদের স্কুলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে তা নিয়ে স্কুল চত্বরে অভিভাবকেরা বিক্ষোভ দেখালে ওই পড়ুয়াদের স্কুলে ঢুকতে দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁদের ক্লাস করতে দেওয়া হয়নি। এর পরই আদালতের দ্বারস্থ হন সেই অভিভাবকরা। দায়ের হয় পিটিশান। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের(Calcutta High Court) ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট নির্দেশিকা দেয়, বেসরকারি স্কুলে ফি বকেয়া থাকলেও পড়ুয়াদের ক্লাসে ওঠা আটকানো যাবে না। বাধা দেওয়া যাবে ক্লাস করার ক্ষেত্রেও। আদালতের এই রায়ে নৈতিকভাবে জয় পান অভিভাকেরা।
সেই নির্দেশিকার জেরেই এদিন সকালে পড়ুয়ারা ফের গিয়েছিল স্কুলে। কিন্তু গিয়ে দেখে নোটিস দিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঘটনা হচ্ছে শুধু জি ডি বিড়লা নয়, কলকাতা শহরে এই গ্রুপের যে ৫টি স্কুল রয়েছে তার সবকটিই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে এই সিদ্ধান্তে ব্যাপক ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত পড়ুয়ারাও। এই ঘটনায় এদিন অভিভাবকেরা জানিয়েছেন, ‘আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করছে স্কুল। কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না কখনই। বিড়লা গ্রুপ গুটিকয়েক অভিভাবকের কাছে হারটা মেনে নিতে পারছে না। অনৈতিকভাবে তাই স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে। এটা অভিভাবকদের একতার মধ্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা। আমরা আইনি পথেই হাঁটব।’ তবে এই প্রথমবার নয়, এর আগে ২০১৭ সালে জি ডি বিড়লা স্কুলে যখন পড়ুয়ার যৌন হেনস্তার অভিযোগ উঠেছিল, তখনও একইভাবে স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি আই পি মুখোপাধ্যায় ও বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, সবাইকে নতুন ক্লাসে নিতেই হবে। বৃহস্পতিবার থেকে যাতে স্কুলে যেতে পারে পড়ুয়ারা তার ব্যবস্থা করতে হবে স্কুল কর্তৃপক্ষকেই। যে বকেয়া বেতন অর্থাৎ যা মূল বেতনের ২০ শতাংশ, তা আগামী দু সপ্তাহের মধ্যে স্কুলকে প্রদান করতে হবে। কিন্তু এদিন যেভাবে ৫টি স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য তা আদালত অবমাননার সামিল হয়ে গিয়েছে।