নিজস্ব প্রতিনিধি: মাত্র ১০ দিনের মধ্যে দুই অভিনেত্রীর অপমৃত্যুর সাক্ষী থাকল কলকাতা। প্রথমে পল্লবী দে(Pallabi Dey) এবং বুধ সন্ধ্যায় বিদিশা দে মজুমদার(Bidisha Dey Majumdar)। আর দুই মৃত্যু ঘিরেই উঠে এসেছে আত্মহত্যার ঘটনা। কলকাতার মনোবিদদের ধারনা, অতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকেই এখনকার তরুণ প্রজন্ম কার্যত অবসাদে চলে যাচ্ছে। আর তার জেরেই জীবনে লড়াই করে টিকে থাকার কথা ভুলে গিয়ে মৃত্যুকেই তাঁরা বেছে নিচ্ছে। নিজের অবসাদ সে অন্য কারোর সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারছে না। বাবা-মা, পরিবার, বন্ধু, কাছের মানুষ সকলের সঙ্গেই তাঁর মানসিক এক দূরত্ব তৈরি হয়ে যাছে যার জেরে নিজের জীবন নিয়ে চরমতম সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে এরা পিছোপা হচ্ছে না। পল্লবী হোক বা বিদিশা, সকলেই এই অবসাদের শিকার। গাড়ি, বাড়ি, টাকা, খ্যাতি এই সবের পিছনে দৌড়াতে গিয়ে জীবনের স্বাভাবিকতা থেকেই বহু দূরে চলে যাচ্ছে তরুণ প্রজন্ম।
বুধ সন্ধ্যায় নাগেরবাজারের রামগড়(Ramgarh) কলোনির ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় বিদিশার ঝুলন্ত দেহ। মাত্র ২১ বছর বয়সেই স্বেচ্ছায় সে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। কিন্তু কেন? উত্তর খুঁজছেন ঘটনার তদন্তে নামা পুলিশ আধিকারিকেরা। বিদিশার বাড়ি আদতে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ব্যারাকপুর মহকুমার নৈহাটিতে(Naihati)। ছিলেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। পড়াশোনা করার ফাঁকে ফাঁকেই শুরু হয় মডেলিং। ২০১৮ সাল থেকেই বিদিশার মড়েলিংয়ে(Modeling) হাতেখড়ি। ২০১৯ সাল থেকে রীতিমত পেশাদার মডেল হয়ে ওঠেন তিনি। কাজের ব্যস্ততার মাঝেই আসে লকডাউনের ঢেউ। গতবছরই নৈহাটি থেকে চলে আসেন রামগড়ের ফ্ল্যাটে। সেখান থেকেই বুধ সন্ধ্যায় উদ্ধার হয় তাঁর ঝুলন্ত দেহ। পরিজনদের দাবি, নিজেই বন্ধুদের জানিয়েছিলেন অবসাদে ভুগছেন। কিন্তু কেন অবসাদ তা বলেননি। মিলেছে সুইসাইড নোট। পুলিশ বিদিশার দুটি ফোনই বাজেয়াপ্ত করেছে। কিন্তু হাসিখুশি স্বভাবের মিশুকে বিদিশার মনের কোণে কেন অন্ধকার জমেছিল সেটাই রহস্য।
জানা গিয়েছে, ওয়াল পেন্টিংয়ে অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন বিদিশা। বহু বন্ধুর বাড়িতে সে দক্ষতার ছাপও রেখেছিলেন তিনি। তবে পেশা হিসাবে চিত্রশিল্পের বদলে বিদিশা বেছে নিয়েছিলেন মডেলিংকে। মডেলিং থেকে ভালই আয় করতেন বিদিশা। হাতে কাজের অভাবও ছিল না। তিন দিন আগেও একটি গয়নার বিজ্ঞাপনে দেখা গিয়েছে বিদিশাকে। বিদিশার এই চরম পরিণতির পিছনে কে বা কারা দায়ী বা আদৌ কেউ দায়ী কিনা অথবা কোন পরিস্থিতিতে এমন চরম পদক্ষেপ বেছে নিল বিদিশা, তা তদন্তসাপেক্ষ বিষয়। তবে মনোবিদরা মনে করছেন, মনের গহ্বরে লুকিয়ে থাকা উচ্চাকাঙ্ক্ষাই অবসাদে ডুবিয়ে দিচ্ছে তরুণপ্রজন্ম। আর এই অবসাদের আরও ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ একলা থাকা। বাবা-মা, বোনকে ছেড়ে, নৈহাটির বাড়ি ছেড়ে, রামগড়ে ফ্ল্যাটে একা থাকা কার্যত বিদিশাকে চরম পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে। পরিবারের সঙ্গে থাকলে হয়তো এই চরম পদক্ষেপ এড়ানো যেত।