নিজস্ব প্রতিনিধি: বাচ্চা থেকে বড়, এখন সবার হাতেই রয়েছে মোবাইল(Mobile) ফোন। মোবাইল ফোন কেনা এখন খুবই সহজলভ্য। ৬ ইঞ্চির স্ক্রিন, তিন-চারটে ক্যামেরা, ৪ থেকে ৬ জিবি র্যাম, দ্রুতগতির প্রসেসর যুক্ত ফোন খুব কম মূল্যেই কিনে ফেলা যায়। কিন্তু সেই মোবাইল ফোনের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আমরা সেভাবে কখনই মাথা ঘামাই না। ফোন থেকে নানা সাইটে ভিজিট করাই আমাদের কাছে তখন মূল উদ্দেশ্য হয়ে ওঠে। আর এর সঙ্গে সঙ্গে খুলে যায় প্রতারকদের প্রতারণার করার পথ। মাত্র কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি ফোনে রাখা মাত্র তা পৌঁছে যায় ডার্ক ওয়েবে(Dark Web) জগতে। অথচ এই ব্যাপারে বিন্দু মাত্র হদিশ পান না মোবাইলের ব্যবহারকারীরা। ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট থেকে আধার, ব্যক্তিগত ছবি থেকে ভিডিও সব কিছুই চলে যায় প্রতারকদের খপ্পড়ে। আর তার জেরে হয় টাকা খোয়াতে হয় নাহয় কদর্য ব্ল্যাকমেলেই শিকার হতে হয়। আর এই সব ঘটনার তদন্তে নেমেই বিস্ফোরক বিস্ফোরক সব তথ্য পেয়েছেন লালবাজারের(Lalbazaar) গোয়েন্দারা।
আরও পড়ুন ডিসেম্বর থেকেই পে-স্লিপ বাধ্যতামূলক বঙ্গে, সিদ্ধান্ত রাজ্যের
দেশের পাশপাশি দিন দিন যে হারে বাংলার(Bengal) বুকে সাইবার প্রতারণা(Cyber Crime) বাড়ছে, তাতে উদ্বিগ্ন রাজ্য সরকার। সেই উদ্বিগ্নতার জেরেই তথ্য-প্রযুক্তি দফতরকে দিয়ে একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল নবান্ন(Nabanna)। আর তার থেকেই প্রকাশ্যে উঠে এসেছে বিস্ফোরক তথ্য। জানা গিয়েছে, চাইনিজ মোবাইল সেটে নকল অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করে দেদার বিক্রি হচ্ছে মানুষের ব্যক্তিগত সব তথ্য। ওই সব অপারেটিং সিস্টেমকে বাইরে থেকে দেখে অ্যান্ড্রয়েড, উইন্ডোজ বা আইওএসের (আইফোনের) সঙ্গে কোনও ফারাক কখনই আপনার চোখে ধরা পরবে না । এখানেই লুকিয়ে রয়েছে মূল রহস্য। এইসব ফোনে পাইরেটেড অপারেটিং সিস্টেমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতটাই দুর্বল যে দ্রুত সেই বেষ্টনি ভেঙে দিতে সক্ষম হ্যাকাররা। শুধু তাই নয়, অনেক ক্ষেত্রে প্রতারণার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এই ওএস। এর সঙ্গে সরাসরি যোগ থাকছে ডার্ক ওয়েবের ১০৮৮টি ইন্টারনেট প্লাটফর্মের। মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তুললে, বা আধার-ভোটার কার্ডের তথ্য রাখলে তা নিজের থেকেই পৌঁছে যাচ্ছে ওই প্ল্যাটফর্মগুলিতে। অর্থাৎ, আপনার ব্যক্তিগত সব তথ্য সবটাই প্রতারকদের হাতে।
আরও পড়ুন বিধায়কদেরও এবার পঞ্চায়েতে প্রার্থী করতে পারে তৃণমূল
এখন বহু জায়গায় অতন্ত প্রচলিত ফ্রি ওয়াইফাই জোন, আর এই ফ্রি পাবলিক ওয়াইফাই জোনে সমীক্ষা চালাতে গিয়ে তথ্য-প্রযুক্তি দফতর রীতিমতো চমকে যাওয়ার মত তথ্য পেয়েছেন। তারা দেখেছে, যে মোবাইল সেটগুলি ওই ওয়াইফাই জোনে কানেক্ট হয়েছে, সেগুলির ৭০ শতাংশের বেশি ফোনই চলছে ‘অপরিচিত’ বা নকল অপারেটিং সিস্টেমে। অথচ কাজের ক্ষেত্রে কোনও পার্থক্য ধরা পড়ছে না। কোনও কোনও ক্ষেত্রে নকল ওএস শুধু আসলের তুলনায় বেশ কিছুটা স্লথ। সাধারণের এগুলি বোঝা সম্ভব না হলেও সন্দেহ হয় আধিকারিকদের। পরীক্ষা করে দেখা যায়, ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন হতেই এই সব অপারেটিং সিস্টেম সরাসরি ডার্ক ওয়েবের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে মোবাইলগুলি থেকে গোপন তথ্য হাতাতে ওটিপি জানা বা কোনও লিঙ্কে ক্লিক করার প্রয়োজন হচ্ছে না। আমরা অনেকেই আধার, ভোটার বা প্যান কার্ডের ছবি মোবাইলে রেখে দেন। সেক্ষেত্রে বিপদ সবচেয়ে বেশি। অজান্তেই প্রতারণা চক্রের হাতে চলে যাচ্ছে আপনাদের বাক্তিগত সমস্থ তথ্য। কিন্তু ডার্ক ওয়েব থেকে কোন চক্রের কাছে এই সব নথি পৌঁছচ্ছে, তার হদিশ এখনও পাওয়া সম্ভব হয়নি গোয়েন্দাদের পক্ষে। এই পরিস্থিতিতে সতর্ক হওয়া ছাড়া অন্য কোনও পথ খোলা নেই। আর প্রতারকদের থেকে বাঁচতে এই পরামর্শই দিচ্ছেন আইন রক্ষকরা।