নিজস্ব প্রতিনিধি: উনিশের লোকসভা ভোটে বাংলার(Bengal) মাটিতে বিজেপি(BJP) যে ঐতিহাসিক সাফল্যের মুখ দেখেছিল তার পিছনে ছিল ৪টি ভোট ব্যাঙ্ক। এই ৪টি ভোট ব্যাঙ্ক(Vote Bank) হল – গোর্খা ও নেপালি ভোট, তপশিলি জাতির ভোট, তপশিলি উপজাতি বা আদিবাসীদের ভোট এবং মতুয়া(Matua) ভোট। এই ৪টি ভোট ব্যাঙ্কের জন্যই সেইবছর বিজেপি বাংলা থেকে ১৮টি আসন বের করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তাঁরা আর সেই সাফল্য ধরে রাখতে পারেনি। উনিশের ভোটে বাংলার ১৩৬টি বিধানসভা কেন্দ্রে লিড পেয়েছিল বিজেপি। তারপরেই শ্লোগান উঠেছিল, ‘আব কে বার ২০০ পার’। কিন্তু দৌড় থেমে গিয়েছিল ৭৭টি আসনেই। একুশের সেই ভোটের সময় থেকেই চোখে পড়ে জঙ্গলমহলের বুকে তপশিলি উপজাতি বা আদিবাসীদের ভোট হাতছাড়া হয়েছে পদ্মপার্টির। তারপর সময় যত গড়িয়েছে ততই ফাটল চওড়া হয়েছে। এখন আর গোর্খা ও নেপালি ভোট যেমন বিজেপির হাতে নেই। তেমনি নেই মতুয়া ভোটও। কার্যত বিজেপির প্রতি আর ভরসা নেই মতুয়াদের। তাই তাঁরাও মুখ ফিরিয়ে নেওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
মতুয়ারা যে বিজেপির দিক থেকে মুখ ফেরাচ্ছে সেটা একুশের ভোটের পর হওয়া পুরসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। মতুয়াভূম বলে পরিচিত উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ মহকুমা এবং নদিয়া জেলার কল্যাণী ও রানাঘাট মহকুমাজুড়ে কিবা পুরসভা কিবা পঞ্চায়েত, কোনও সাফল্যের মুখই দেখতে পায়নি বিজেপি। মতুয়াদের দাবি, ২০১৯ সালে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজেপি ভোট নিয়েছিল, তাঁদের ভাঁওতা দিয়েছিল। কিন্তু ২৪’র ভোটে(General Election 2024) সেটা আর সম্ভব হবে না। ‘২৪’র ভোটের আগে নিঃশর্ত নাগরিকত্ব প্রদানের জবাব চাই’, এই শ্লোগান তুলেই আগামী ২৮ ডিসেম্বর কলকাতার ধর্মতলায় সমাবেশের ডাক দিয়েছে অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ(All India Matua Mahasangha)। ৫০ হাজারের বেশি মানুষ সেদিন ডঙ্কা-কাঁসর-নিশান নিয়ে জড়ো হবেন কলকাতার রাজপথে। যা লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে বিজেপির কপালের ভাঁজ আরও বাড়াবে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের। দেশভাগের বলি পূর্ববঙ্গ থেকে আগত ছিন্নমূল উদ্বাস্তুদের নিঃশর্ত নাগরিকত্ব প্রদানের দাবিতে এই সমাবেশের ডাক দেওয়া হলেও মূল লক্ষ্য, বিজেপি ভাঁওতাবাজির তীব্র প্রতিবাদ জানানো।
মতুয়া মহাসঙ্ঘের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নবীন বিশ্বাস। ২০২০ সালের ৬ নভেম্বর, রাজারহাটের বাসিন্দা নবীনের বাড়িতে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেদিন নবীনের বাড়িতে দুপুরে পাত পেতে খেয়েওছিলেন মোদি সরকারের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড। রুটি, ছোলার ডাল, ভাত, পনির, ধোকা, নলেন গুড়ের পায়েস অমিত শাহকে সেদিন খাইয়েছিলেন নবীন ও তাঁর পরিবার। আশা করেছিলেন, মতুয়াদের দেখবেন মোদি-শাহরা। কিন্তু তা নিরাশায় পরিণত হওয়ায় এবার সরাসরি কেন্দ্রের সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে চলেছেন নবীন। তাঁর কথায়, ‘২০১৯ সালে নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা বলেছিলেন বিজেপিকে ভোট দিন। মতুয়াদের অনেকেই বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু ভরসা, বিশ্বাস করে আমরা ঠকেছি। নিঃশর্ত নাগরিকত্ব আমাদের দেওয়া হয়নি। ঢাকঢোল পিটিয়ে সিএএ(CAA) কার্যকর করার ঘোষণা করা হলেও পাঁচ বছরের রুল তৈরি হয়নি। তাই এবার লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির প্রতিশ্রুতিতে আস্থা রাখছি না। মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ছিল বিজেপি। সামনের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির ফাঁদে কেউ যাতে পা না দেন, তারজন্যই সকলে মিলিত হয়ে একযোগে আওয়াজ তুলব। মতুয়াদের নিয়ে বিজেপি রাজনীতি করছে। আসন্ন লোকসভা ভোটে বিজেপি আবার প্রতিশ্রুতি দেবে। কিন্তু কেন্দ্রের উদাসীনতার এবার আর বিজেপির ওপর বিশ্বাস-ভরসা রাখতে পারছি না। মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষজন লোকসভায় ভোট দেওয়ার আগে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।’