নিজস্ব প্রতিনিধি: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এনডিএ শিবিরের তরফে উপরাষ্ট্রপতি পদে জগদীপ ধনখড়ের(Jagdeep Dhankhar) নাম ঘোষণা করতেই বাংলায়(Bengal) বেশ শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। সেই সূত্রেই উঠে এসেছিল প্রশ্ন, তাহলে ধনখড়ের পরে এবার কে হবেন বাংলার রাজভবনের বাসিন্দা? দুটি নাম উঠে এসেছিল সেখানে। একটি মুক্তার আব্বাস নকভী এবং অন্যটি শিশির অধিকারী। রবিবার রাতেই বাংলার রাজ্যপাল(Governor) পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন জগদীপ ধনখড়। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন এবং রাতেই রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে মণিপুরের(Manipur) রাজ্যপাল লা গণেশন(La Ganeshan) বাংলার অস্থায়ী রাজ্যপাল হিসাবে আপাতত কাজ করবেন। এখন ঘটনা হচ্ছে, অস্থায়ী কেন? কেন কেন্দ্র সরকার বাংলার রাজ্যপাল হিসাবে কোনও স্থায়ী ব্যক্তিকে নিয়োগ করতে পারলেন না?
রবিবার রাতে রাইসিনা থেকে যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে তাতে লেখা আছে, ‘পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন জগদীপ ধনখড়। তাঁর সেই ইস্তফাপত্র গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি। এখন থেকে নিজের দায়িত্ব ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল পদের দায়িত্ব পালন করবেন মণিপুরের রাজ্যপাল লা গণেশন।’ রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে এই বিজ্ঞপ্তি জারিজ পরে সোমবার সকালে টুইট করেছেন বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি লিখেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের অতিরিক্ত দায়িত্ব নেওয়ার জন্য মণিপুরের রাজ্যপাল লা গণেশনকে অভিনন্দন। বিরোধী দলনেতা হিসেবে আপনাকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই এবং আমার তরফে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’ এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেন স্থায়ী রাজ্যপাল হিসাবে কাউকে বাংলায় নিয়োগের পথে হাঁটল না মোদি সরকার। সূত্রে খবর, দ্রুত ধনখড়ের বিকল্প খুঁজে না পাওয়ার জেরেই এই পথে হাঁটা দিয়েছে মোদি সরকার।
ধনখড় ৫ বছরের জন্য রাজস্থানের বিধায়ক হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯৯৩ সালে। তারও আগে তিনি ২ বছরের জন্য সাংসদ হিসাবে কাজ করেছেন। ১ বছরের জন্য কেন্দ্রের প্রতিমন্ত্রীও হয়েছিলেন। কিন্তু এই সবের বাইরে তিনি আইনজীবী হিসাবেই বেশি পরিচিত। বিজেপি তাঁকেই বাংলার রাজ্যপাল করে পাঠিয়েছিল যাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে প্রতি পদে ব্যতিব্যস্ত করে তুলতে পারেন তিনি। অস্বীকার করার উপায় নেই সেই কাজে অনেকটাই সফল হয়েছেন ধনখড়। সেই সঙ্গে প্রতি নিয়ত তিনি কার্যত বিজেপির মুখপাত্র হিসাবে আক্রমণ শানিয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যের অনান্য মন্ত্রী, রাজ্য সরকার, শাসক দলের প্রতি। হুমকি ধমকি দিয়েছেন সচিব, আমলা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদেরও। প্রতি পদে পদে রাজ্য সরকারের বিল আটকেছেন, জবাবদিহি চেয়ে পাঠিয়েছেন। আর ছিল নিত্যদিনের টুইট বন্যা। বাংলার রাজভবনকে তিনি কার্যত বিজেপির পার্টি অফিসে পরিণত করে দিয়েছিলেন। এসব করেও অবশ্য একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে জেতাতে পারেননি তিনি। একই সঙ্গে তাঁর কাজকর্মে বিজেপি লাভবান অপেক্ষা ক্ষতিগ্রস্থ বেশি হয়েছে বলেও অনেকে বিজেপি নেতাকর্মীই মনে করেন। কিন্তু তারপরও ধনখড়ের মতোই কাউকে বাংলার রাজ্যপাল হিসাবে চাইছেন মোদি-শাহ যাতে ধনখড় যে কাজের শুরু করে দিয়ে গিয়েছিলেন সেই কাজ যেন আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। অর্থাৎ মমতার সরকারকে, দলকে, তাঁর নেতা-মন্ত্রী-বিধায়ক-সাংসদদের নিত্যদিন যাতে ব্যতিব্যস্ত রাখা যায়। কিন্তু সেই বিকল্প চট করে নে মেলায় আপাতত লা গণেশনকেই বাংলার অস্থায়ী রাজ্যপাল হিসাবে নিয়োগ করল মোদি সরকার।