নিজস্ব প্রতিনিধি: নবমীর দুপুর গড়ানোর আগেই কলকাতার পুজোমণ্ডপগুলিতে বইছে ভিড়ের স্রোত। আকাশের মুখ কখনো মেঘলা কখনো আবার কড়া রোদ। দক্ষিণের মুদিয়ালি(Mudiali) বা বাদামতলা আষাঢ়সংঘ থেকে উত্তরের কুমোরটুলি অথবা আহিরীটোলা(Ahiritola), বেনিয়াটলা কিংবা তেলেঙ্গাবাগান কালো মেঘ বা কয়েক পশলা বৃষ্টি অথবা কড়া রোদ উপেক্ষা করেই ঠাকুর দেখতে উৎসাহীদের ঢল নেমেছে শহরে। সুদূর বেঙ্গালুরু, মুম্বাই(Mumbai) থেকে নিজের বাড়ি ফেরা ছেলের সঙ্গে মিশে গিয়েছেন শহরেরই স্থানীয় বাসিন্দা।
রাত পোহালেই দশমী। আসন্ন নিরঞ্জনের বিষাদের আগে তাই শেষমুহূর্তে মা দুর্গাকে দর্শন সেরে নিতে চান প্রত্যেকেই। উমা বিদায়ের মনখারাপ নিয়েও আরও অনেকের সঙ্গে পথে নেমেছেন হাওড়ার এক প্রৌঢা মনীষা দেবী। কর্মসূত্রে তাঁর ছেলে অয়ন(Ayan) থাকেন বেঙ্গালুরুতে। তবে পুজোর সময় তিনি ফিরেছেন বাড়িতে। মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে মা-বাবাকে নিয়ে সপরিবার তিনি পৌঁছে গিয়েছেন দক্ষিণ কলকাতার বাদামতলা আষাঢ়সংঘের মণ্ডপে। অয়ন বলেন, ‘‘আমি থাকি ব্যাঙ্গালোরে। সেখানেও পুজো হয়। তবে কলকাতার ব্যাপারই আলাদা। এই স্বাদ সেখানে পাওয়া যায় না।’’কলকাতার ‘বিশেষ’ পুজোয় নবমীর দিন সকাল থেকেই শহরের নানা পুজো মণ্ডপে ঘুরবেন বলে স্থির করে ফেলেছেন তারা। তাঁর কথায়, ‘‘সকাল থেকে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছি। ভালই লাগছে। কাল তো দশমী(Dasomi)। স্বাভাবিক ভাবেই মনটা খারাপ। অনেক বছর পর বাবা-মাকে নিয়ে পুজো দেখাতে বেরিয়েছি। সারা দিন ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখার প্ল্যান রয়েছে।’’ হাওড়ার ওই বাসিন্দার প্রৌঢ় মা মনীষাদেবীর আবার হাঁটুর ব্যথা সত্ত্বেও ছেলের সঙ্গে মায়ের দর্শনে বেরিয়েছেন। কারণ, পুজোর বাকি আর মাত্র একটা দিন। ওই প্রৌঢ়ার কথায়, ‘‘আগামিকাল দশমী। আবার এক বছরের অপেক্ষা। শরীরস্বাস্থ্য ভাল থাকলে আবার মাকে দেখতে বেরোবো। হাঁটুর অবস্থা খুবই খারাপ। কষ্ট করে বেরিয়ে মাকে দর্শন করা… । দু’বছর পর রাস্তায় বেরিয়ে অনেকটাই ভাল লাগছে।’’অতিমারির প্রকোপে টানা দু’বছর মণ্ডপে মণ্ডপে স্বাস্থবিধি মেনে চলার নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছিল। করোনার সংক্রমণের ভয়ে অনেকের আবার ইচ্ছে থাকলেও উপায় ছিল না। ঘরে বসেই দুর্গাপুজোর স্বাদ নিয়েছে তাঁরা। তবে চলতি বছর সংক্রমণের চোখরাঙানি কমতেই রাস্তায় রাস্তায় ভিড় দেখা গিয়েছে।
দক্ষিণের মণ্ডপগুলিতে সকাল সকাল পুজোর আমেজ নিতে বেরিয়ে পড়েছেন টালিগঞ্জের এক মহিলা কমলিকা ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘(পুজোর) ভিড়ের(Crowd) দিকে চোখ রাখলে দেখা যায়, এ বছর উন্মাদনা অনেক বেশি। দু’বছর ধরে মানুষ অনেক স্বজন হারিয়েছে। তবে ভিড় দেখে উন্মাদনা বোঝা যাচ্ছে। ত্রিধারার ও দিকে যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে।’’দক্ষিণের নামী পুজোগুলির পাশাপাশি উত্তরের কুমোরটুলি, বেনিয়াটোলা বা আহিরীটোলার মতো ভিড়টানা মণ্ডপেও নবমীর সকাল বেশ ভিড় দেখা গিয়েছে। অষ্টমীর জনস্রোতকে টেক্কা দিতে প্রস্তুত নবমীর দুপুরের ভিড়। সোমবার বৃষ্টি মাথায় নিয়ে শহরে মণ্ডপগুলিতে ঘুরেছেন দর্শনার্থীরা। অষ্টমীর সকালটা অনেকটাই মাটি হয়েছে বৃষ্টির দাপটে। তবে নবমীর সকাল থেকে কালো মেঘের আনাগোনাতে শহরে চড়া রোদ। ফলে উৎসাহীদের পোয়াবারো। সঙ্গে ছাতা কিংবা ওয়াটারপ্রুফ নিয়ে মন্ডপে মন্ডপে নবমীর শেষ তিথিতে জনতার ঢল।