নিজস্ব প্রতিনিধি: এক রাতেই বদলে গেল ছবি। তৃণমূলের যে কাউন্সিলর এবারের পুরনির্বাচনে দলের টিকিট না পেয়ে কংগ্রেসের দিকে পা বাড়িয়েছিলেন সেই পার্থ মিত্র এদিন সকালেই হাজির হলেন ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতে। রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রীর সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষেই সংবাদমাধ্যমের সামনে পার্থবাবু জানিয়ে দিলেন, তিনি কংগ্রেসের প্রার্থী হচ্ছেন না। তিনি তৃণমূলেই ছিলেন, তৃণমূলেই আছেন। আর এই ঘটনার জেরেই কলকাতা পুরনিগমের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটচিত্র বেশ জমজমাট হয়ে গেল। কেননা, এই ওয়ার্ডেই প্রার্থী হয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজার মেয়ে পূজা পাঁজা। কার্যত দলের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়েই পার্থ মিত্র কংগ্রেসের প্রার্থী হতে চলেছিলেন। এমনকি প্রার্থী হিসাবে পার্থবাবুর নামও ঘোষণা করে দিয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু এদিন সকালে পার্থবাবুর ইউটার্ন কংগ্রেসেরই মুখ পুড়িয়ে দিল। তবে তৃণমূলের অন্দরেও চোরাস্রোতের একটা আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার রাজ্য নির্বাচন কমিশন কলকাতা পুরনিগমের নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। সেদিন থেকেই মনোনয়ন দাখিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। শুক্রবার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে তৃণমূল। তাতেই দেখা যাচ্ছে, কলকাতা পুরনিগমের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর পার্থ মিত্র এবার টিকিট পাননি। পরিবর্তে ওই ওয়ার্ডে টিকিট পেয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজার মেয়ে পূজা পাঁজা। আর এরপরেই দলবদলের পথে হাঁটা দেন পার্থবাবু। এমনকি সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি একথাও বলেন, যে ৮ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা সংরক্ষিত না হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র মন্ত্রীকন্যাকে টিকিট পাইয়ে দিতে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে প্রার্থী তালিকা থেকে। এরপরই শনিবার সন্ধ্যায় দেখা যায় পার্থবাবু শুধু কংগ্রেসে যোগই দেননি, প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব কার্যত তাঁকে ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রার্থীও করে দিয়েছে। তার জেরে কিছুটা হলেও ক্ষিপ্ত হয় তৃণমূল। ফিরহাদ নিজেই এই ঘটনায় গতকাল জানিয়েছিলেন, ‘টিকিট পেলে দল ভাল আর টিকিট না পেলেই নির্দল হয়ে দাঁড়ানো কিংবা অন্য দলে নাম লেখানো, এটা বেইমানি ছাড়া কিছু নয়। বিধানসভা ভোটের আগে দল বদলের ফল অনেকেই পেয়েছেন। মানুষ আমাদের দেখে নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে ভোট দেন।’
সেই ঘটনার পরেই রবিবার সকালে ফিরহাদের বাড়িতে হাজির হন পার্থবাবু। তাঁর সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষেই দুইজনে আসেন সংবাদমাধ্যমের সামনে। তারপরে ফিরহাদের পাশে দাঁড়িয়ে পার্থবাবু জানান, তাঁর কাছে প্রদেশ কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা এসেছিলেন তাঁর বায়োডাটা চাইতে। কিন্তু তিনি তা দেননি। এরপরে তাঁর সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা না করেই কংগ্রেস তাঁর নাম প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করে দিয়েছে। তিনি কংগ্রেসের প্রার্থী হচ্ছেন না। তাঁর বদনাম করার উদ্দেশ্য নিয়েই এই সব করা হচ্ছে। তিনি তৃণমূলে ছিলেন, তৃণমূলে আছেন, তৃণমূলেই থাকবেন। ফিরহাদ হাকিমও জানান, পার্থবাবুর নামে বদনাম ছড়াবার উদ্দেশ্য নিয়েই এই রটনা রটিয়েছিল কংগ্রেস। উনি তৃণমূলেই থাকছেন। তবে গোটা ঘটনায় এখন সব থেকে বড় অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। তাঁরা পার্থ মিত্রকে শুধু লুফে নিয়েছিলেন তাই নয়, রাতারাতি তাঁকে প্রার্থীও করে দিয়েছিল। এখন তাঁর ইউটার্নের জন্য ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জন্য আবার তাঁদের প্রার্থী খুঁজতে হবে। যদিও তৃণমূলের অন্দরে একটা চোরাস্রোত থেকেই যাচ্ছে। কেননা এদিন পার্থবাবু আশ্বাস দিয়েছেন তিনি পূজা পাঁজার হয়েই প্রচার করবেন। কিন্তু সেই প্রচার আর সমর্থন কতখানি খাঁটি হবে তা নিয়ে একটা আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।