কৌশিক দে সরকার: নিঃশব্দতাও অনেক কথা বলে দেয়। দূরত্ব যে দ্রুত কমছে সেটা ক্যামেরার ফ্রেমেই ধরা পড়েছে। দুইজনের একান্ত কথোপকথন বলে দিচ্ছে সঠিক ট্র্যাকে দৌড় শুরু হয়ে গিয়েছে। আর এবার সূত্রে জানা গেল, দুইজনের একজন প্রধানমন্ত্রী হলে অপরজনের তাতে কোনও আপত্তি নেই। নজরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) ও সোনিয়া গান্ধি(Sonia Gandhi)। সোম সন্ধ্যা থেকেই দ্রাবিড়ভূমে শুরু হয়েছে মোদি তথা বিজেপি(BJP) বিরোধী মহাজোটের দ্বিতীয় দফার বৈঠক। মূল বৈঠক যদিও এদিন, অর্থাৎ মঙ্গলবার। কিন্তু সেই বৈঠকের সুর বাঁধা হয়ে গেল সোম সন্ধ্যায়। সোনিয়ার এক পাশে কংগ্রেস(INC) সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং অপর পাশে বাংলার অগ্নিকন্যা তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যাকে খুবই পছন্দ করতেন সোনিয়ার স্বামী তথা দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি। সেই মমতাকে পাশে বসিয়ে সোনিয়া নিঃশব্দে দুটি বার্তা দিয়ে দিলেন। এক, তিনি মমতাকে পাশে চান এবং দুই, মমতা প্রধানমন্ত্রী হলে তাতে কংগ্রেস বা সোনিয়ার নিজের কোনও আপত্তি থাকবে না। কংগ্রেস সূত্রেও কার্যত তেমনটাই জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন অধীরকে ধাক্কা দিয়েই মমতাকে কাছে টানছেন সোনিয়া
মমতা সোনিয়া সম্পর্ক চিরকালই এক সুরে বাঁধা থাকেনি। কখনও সেই সম্পর্কে নৈকট্য এসেছে আবার কখনও দূরত্ব বেড়েছে। তবে কেউই কারোর সম্পর্কে প্রকাশ্যে কোনও আক্রমণে যাননি, কুকথাও বলেননি। মাঝের দুইবছর যেমন তাঁদের মধ্যে একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল তেমনি এখন সেই দূরত্ব ঘুচেও গিয়েছে। রাজীব যেমন মমতাকে খুব পছন্দ করতেন, তেমনি সোনিয়াও মমতাকে খুব পছন্দ করেন। মমতে কংগ্রেস ছেড়ে আলাদা দল গড়লেও সেই পছন্দের পরিবর্তন ঘটেনি। তা বার বার সামনেও এসেছে। এখন দেশ থেকে বিজেপিকে উৎখাত করতে সেই সুসম্পর্কই জোটের ভিত্তি হয়ে উঠছে ক্রমশ। রাহুল গান্ধির প্রধানমন্ত্রী পদ নিয়ে তৃণমূলের(TMC) তীব্র আপত্তি আছে। এমনকি রাহুলের নেতৃত্বে জোট গড়া নিয়েও জোড়াফুলের আপত্তি আছে। সেটা কংগ্রেস ও সোনিয়াও জানেন। আর তাই সোম সন্ধ্যায় কার্যত সোনিয়া বুঝিয়ে দিয়েছেন জোটের রাশ তিনি নিজের হাতেই রাখছেন। কেননা সেটা সব জোট শরিকই মেনে নেবে। সেই সঙ্গে মমতাকে পাশে টেনে বার্তা দিয়ে দিলেন যে তিনিই এই জোটের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়ে উঠতে চলেছেন। আশেপাশে আর কেউ নেই।
আরও পড়ুন মমতাই ঠিক, ধরা পড়ল কেন্দ্রের রিপোর্টে, চিন্তায় মোদি
কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজেপির শাসনের অবসান ঘটাতে কংগ্রেস অনেক স্বার্থই ত্যাগ করতে প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হিসাবে বা জোটের বড় শরিক হিসাবে কংগ্রেস কোনওরকম ছড়ি ঘোরাতে চায় না। লক্ষ্য একটাই যে কোনও মূল্যে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে নরেন্দ্র মোদির(Narendra Modi) অপসারণ এবং কেন্দ্রের সরকার থেকে বিজেপিকে হটানো। আর তাই সোনিয়ে নিজে জোটের রাশ নিজের হাতে রাখছেন, তা রাহুল বা কংগ্রেসের অপর কারও হাতে ছেড়ে দেননি। বুঝিয়ে দিলেন তিনি এখানে কংগ্রেস সভানেত্রী হিসাবে নয়, জোটের শীর্ষনেত্রী হিসাবেই অবস্থান করবেন। মল্লিকার্জুনকে পাশে বসিয়ে যেমন বার্তা দিয়েছে কংগ্রেস তাঁর পাশে থাকছে তেমনি মমতাকে পাশে বসিয়ে বুঝিয়ে দিলেন বাংলার অগ্নিকন্যাই আগামী দিনে দেশকে নেতৃত্ব দিতে চলেছেন। তবে এখনই দুই দলের তরফে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে কাউকেই তুলে ধরা হবে না। ২৪’র ভোটে কোন দল কত আসন পায় সেটা দেখেই এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সেখানে প্রতিটি জোট শরিকের মতামত গুরুত্ব পাবে। সব দল এক হয়েই ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বেছে নেবেন।