কৌশিক দে সরকার: নিজ দলের প্রদেশ সভাপতিকে নয়, ভিন দলের নেত্রীকেই কাছে টানছেন সোনিয়া গান্ধি(Sonia Gandhi)। আর সেই নেত্রী আর কেউ নন তৃণমূল(TMC) সুপ্রিমো তথা বাংলার অগ্নিকন্যা ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। কেননা মমতাই সেই প্রথম নেত্রী যিনি কংগ্রেস(INC) থেকে বেড়িয়ে এসে নিজের আলাদা দল করে শুধু যে সাফল্যের মুখ দেখেছেন তাই নন, বিজেপি(BJP) ও মোদি বাহিনীকে পদে পদে রুখে দিয়েছেন। কার্যত গোটা দেশ যে রাহুল গান্ধি(Rahul Gandhi) অপেক্ষা ক্রমশই মমতা ম্যানিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে তা বুঝেই কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নেত্রী চাইছেন বাংলার প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বকে আপাতত দূরে সরিয়ে রেখেই মমতাকে কাছে টানতে। প্রয়োজনে বাংলায় উনিশের ভোটে জেতা দুটি আসন ব্যতীত আর কোথাও আসন না দেওয়ার কথাও এদিনই বেঙ্গালুরুতে বিজেপি বিরোধী মহাজোটের বৈঠকে ঘোষণা করে দিতে পারেন পারেন সোনিয়া। কংগ্রেস সূত্রে তেমনটাই জানা গিয়েছে। আর যদি সেটাই হয় তাহলে অস্বীকার করার উপায় নেই তা হবে অধীর চৌধুরীর(Adhir Ranjan Chowdhury) কাছে বড় ধাক্কা।
আরও পড়ুন স্বল্প সঞ্চয়ে দেশের সেরা মমতার বাংলা
এদিন থেকেই বেঙ্গালুরুতে বসছে বিজেপি বিরোধী মহাজোটের দ্বিতীয় দফার বৈঠক। সেই বৈঠকে কংগ্রেসের তরফে যেমন সোনিয়া নিজে যেমন রাহুল ও কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেকে নিয়ে উপস্থিত থাকবেন তেমনি সেই বৈঠকে যোগ দিতে সেখানে দেখা যাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। এদিন দুপুরের বিমানে বেঙ্গালুরুর উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন মমতা ও অভিষেক। সন্ধ্যায় বেঙ্গালুরুর তাজ ওয়েস্ট ইন হোটেলে বিরোধী দলের নেতারা ঘরোয়া কথাবার্তায় মিলিত হবেন। তারপর থাকছে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর দেওয়া ডিনার। সেখানে তৃণমূল নেত্রী হাজিরা থাকবেন না বলেই জানা গিয়েছে। কিন্তু সূত্রে এটাও জানা গিয়েছে, সোনিয়া মনেপ্রাণে চাইছেন মমতা সেই ডিনারে হাজির থাকুন। দেখার বিষয় সোনিয়ার সেই অনুরোধ মমতা রাখেন কিনা। কার্যত দু’বছর পর মুখোমুখি হবেন সোনিয়া ও মমতা। স্বভাবতই সেদিকে বাড়তি নজর থাকছে। আর এখানেই অস্বস্তি বাড়ছে বাংলার প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের অন্দরে। শোনা যাচ্ছে, অধীর জোট ফর্মুলার বিরোধিতা করলে বা কট্টর মমতা বিরোধিতায় অনড় থাকলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে পরিবর্তন ঘটাতে পিছু পা হবে না কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। সেক্ষেত্রে তাঁদের প্রথম পছন্দই প্রদীপ ভট্টাচার্য।
আরও পড়ুন কেন্দ্র রাজ্য নয়া সংঘাত, নেপথ্যে গ্রাম সড়ক যোজনা
বিজেপি বিরোধী মহাজোটের আগের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল জোট গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে। কেন বিজেপিকে হারাতে সমস্ত বিরোধী দলকে জোট বাঁধতে হবে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছিল। এবারের বৈঠকে নীতি নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কী ফর্মুলায় জোট হবে, কীভাবে আসন ভাগ হবে, এই আলোচনা হতে পারে। কীভাবে জোট এগোবে, কী হবে জোটের নামকরণ – এসব দ্বিতীয় বৈঠকে ঠিক হবে। যদিও আগেই ঘোষণা হয়েছে যে, রাজ্যে রাজ্যে পরিস্থিতি দেখে আসন ভাগের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। রাজ্যভিত্তিক আলোচনা করে আসন ভাগের বিষয়টি নির্ধারণ হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন যে, ‘ওয়ান ইজ টু ওয়ান’ লড়াই চাই আর যে যেখানে শক্তিশালী, সেখানে তাকে গুরুত্ব দিতে হবে। কার্যত মমতার ফর্মুলাই আগের বৈঠকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই প্রথম বিজেপির বিরুদ্ধে এত বড় এক বৈঠকে রণকৌশল স্থির হতে চলেছে। যার ফলে বিজেপিও খানিকটা চিন্তায়।