নিজস্ব প্রতিনিধি: সিঙ্গুরের(Singur) বুকে বাম জমানায় জোর করে কৃষকদের কাছ থেকে জমি কেড়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। পাশাপাশি তৃণমূলের(TMC) তরফেও সেই জমি অধিগ্রহণের বিরোধিতা করা হচ্ছিল চার ফসলি জমি অধিগৃহীত হওয়ায়। সিঙ্গুরের সেই আন্দোলন মমতাকে শুধু যে ক্ষমতার অলিন্দ পৌঁছে দিয়েছে তাই নয়, রাজ্যের ৩৪ বছরের বাম শাসকদেরও বনবাসে পাঠিয়ে দিয়েছে। পরবর্তীকালে সুপ্রিম কোর্টও এক ঐতিহাসিক রায় দিয়ে সিঙ্গুরের কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেয়। যদিও বাম ও বিজেপি এখনও একযোগে সুরে সুর মিলিয়ে সিঙ্গুর নিয়ে মমতা ও তৃণমূলকে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। তা৬দের দাবি, সিঙ্গুর থেকে টাটাদের চলে যাওয়া রাজ্যের শিল্পায়নের পথে বড় ধাক্কা। কিন্তু এখন কেন্দ্রের এক রিপোর্টে এমন এক তথ্য সামনে চলে যা কার্যত সিঙ্গুর নিয়ে মমতা ও তৃণমূলের অবস্থানকেই সমর্থন করছে। আর এখানেই চিন্তায় পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি(Narendra Modi)।
আরও পড়ুন অধীরকে ধাক্কা দিয়েই মমতাকে কাছে টানছেন সোনিয়া
ঠিক কী হয়েছে? দেশজুড়ে এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের পাশাপাশি আনাজপাতি ও চাল, ডাল, গমের দামও হু হু করে বেড়ে চলেছে। আলু, আদা, টম্যাটোর মতো সবজি তো বটেই, দিনদিন দাম বাড়ছে চাল, ডাল, তেল, আটারও। এই পরিস্থিতিতে কী করে কমবে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যবস্তুর দাম, তা বুঝে উঠতে হিমশিম খাচ্ছে কেন্দ্র। কৃষি, খাদ্য, উপভোক্তা বিষয়ক, অর্থমন্ত্রকের আধিকারিকরা ঘনঘন বৈঠক করছেন। সূত্রে খবর, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সংসদের বাদল অধিবেশন শুরুর আগেই যেন দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। আগামী বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ২০ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে সংসদের বাদল অধিবেশন। এত অল্পদিনে কী করে দাম কমবে, তা ভেবে পাচ্ছে না কোনও মন্ত্রকই। কেননা কেন্দ্রের রিপোর্টই বলছে, এই দামবৃদ্ধির নেপথ্যে রয়েছে চাহিদার তুলনায় কম জোগান এবং কেন্দ্রের এক আইন যা কার্যত খাদ্যবস্তুর হোর্ডিং বা মজুতদারি বাড়িয়ে দিয়েছে। অথচ সেই আইনের দৌলতে যে এমন একতা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে সেটা মমতা দেড় দুই বছর আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন। এমনকি সেই আইন যাতে প্রত্যাহার করা হয় তার জন্য বার বার কেন্দ্রকে অনুরোধ করার পাশাপাশি রাজনৈতিক ভাবেও সরব হন। কিন্তু তখন মমতা ও বাংলাকে টাইট দেওয়ার লক্ষ্যে মোদি ও বিজেপি(BJP) তাতে কর্ণপাত করেনি। কিন্তু এখন সেই আইনের মাশুল গুণছে গোট দেশ এবং গেরুয়া শিবিরও।
আরও পড়ুন দেশ বাঁচাতে চাই জনগণের সরকার, একুশে বার্তা দেবে তৃণমূল
এর পাশাপাশি কেন্দ্রের রিপোর্ট একথাও বলছে, দেশে আনাজপাতি সহ চাল, ডাল, তেল, আটার দাম বৃদ্ধির নেপথ্যে রয়েছে তার কম উৎপাদন, আর সেই কম উৎপাদন হচ্ছে চাষের জন্য ক্রমশ জমি কমে যাওয়ায়। কেন্দ্রের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে এই সময়ে খরিফ মরশুমে ধান চাষের এলাকা ছিল ১৩১ লক্ষ হেক্টর। এবার তা ১২৩ লক্ষ হেক্টর। মুগ, বিউলি, অড়হরের মতো ডালের ক্ষেত্রেও কমেছে চাষের এলাকা। গতবার এই সময়ে চাষ হয়েছিল ৭৭ লক্ষ হেক্টর জমিতে। এবার ৬৬ লক্ষ। গতবারের চেয়ে খরিফে এখনও পর্যন্ত ৯.৭৭ লক্ষ হেক্টর কম জমিতে খাদ্যশস্যের চাষ হচ্ছে। গতবার এই সময়ে ৬০৮.২ লক্ষ হেক্টরে চাষ হয়েছিল। এবার তা ৫৯৮.৪৩ লক্ষ হেক্টর। চাষের এলাকা কমলে উৎপাদনও হবে কম। আর উৎপাদন কম হলে জিনিসের দাম বাড়বেই। তাই মোদি সরকার এখন হাজার চেষ্টা করলেও দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে না। অর্থনীতিবিদ থেকে কৃষি বিশেষজ্ঞরা বার বার বলেছেন, আকাশে শিল্প বা বাড়ি তৈরি হয় না ঠিকই। কিন্তু তা ২,৩ বা ৪ ফসলি জমির ওপর তৈরি করাও ঠিক নয়। তা করতে হবে অনুর্বর, পতিত বা এক ফসলি জমিতে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ২, ৩ বা ৪ ফসলি জমির ওপর তা তৈরি হচ্ছে আর মার খাচ্ছে কৃষিকাজ। দেশের জনসংখ্যা বাড়ছে, সেই অনুপাতে বাড়ছে খাদ্যের চাহিদাও। সেই খাদ্য যদি উৎপাদনই না হয় তাহলে তার দাম কমবে কীভাবে?
আরও পড়ুন বানভাসি উত্তরবঙ্গে বিশেষ টিম পাঠাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী, জানালেন ট্যুইটে
এই কথাটাই কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর তৃণমূল বার বার বলে এসেছে সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় থেকে। মমতা বা তৃণমূল কেউই শিল্পের বিরোধিতা করেননি। তাঁরা কৃষকদের কাছ থেকে জোর করে ও ৪ ফসলি জমির অধিগ্রহণের বিরোধিতা করেছিলেন। সিঙ্গুর এখনও ৪ ফসলি কৃষি জমি সমৃদ্ধ এলাকা। কার্যত এই রকম হাজার হাজার একর জমি শুধু বাংলাতেই নেই, আছে তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার ও উত্তরপ্রদেশের বুকেও। এই ধরনের জমি আছে অসম, হরিয়ানা ও পঞ্জাবের বুকেও। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ওই সব রাজ্যে কারখানা বা বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে সেই সব কৃষিজমির ওপরেই। আর তার জেরে গোটা দেশজুড়ে দ্রুত হারে কমছে চাষের জমির পরিমাণ। সেই অনুপাতে কমছে ফসলের উৎপাদনও। আর তার জেরেই এখনকার আগুন বাজারদর।