নিজস্ব প্রতিনিধি: বঙ্গ বিজেপিতে(Bengal BJP) কী সুকান্ত অধ্যায়ের অবসান ঘটতে চলেছে? প্রশ্নটা তীব্রভাবে ঘুরতে শুরু করেছে বঙ্গ বিজেপির অন্দরে। কেননা বঙ্গ বিজেপিতে বড়সড় সাংগঠনিক রদবদলের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃত্ব। আর সেই রদবদল ঘটতে চলেছে সঙ্ঘের নির্দেশে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের সময় দলের রাজ্য সভাপতি ছিলেন দিলীপ ঘোষ। কিন্তু সেই নির্বাচনে বঙ্গ বিজেপির ভরাডুবির পরে দিলীপকে সরিয়ে দলের রাজ্য সভাপতির পদে আনা হয় সুকান্ত মজুমদারকে(Sukanta Majumdar)। আশা ছিল তাঁর হাত ধরে ঘুরে দাঁড়াবে বঙ্গ বিজেপি। কিন্তু কোথায় কী? ঘুরে দাঁড়ানো তো দূরের কথা উল্টে একের পর এক ভোটে গো-হারান হারার জেরে বাংলায় এখন দলের গায়ে সেঁটে গিয়েছে ‘হেরো’র তকমা। সেই তকমা ঘোচাতেই এবার সুকান্ত বিদায়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। আর সেই মনোভাব বুঝেই সুকান্তের গদি হারার সম্ভাবনা নিয়ে বঙ্গ বিজেপির অন্দরে তীব্র জল্পনা ছড়িয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সুকান্তকে সরিয়ে কে আসবেন এই পদে? আছেন অনেকেই। অন্তত বিজেপির অন্দরে বেশ কয়েকজনের নাম ঘোরাফেরা করছে। যাঁদের মধ্যে আছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী(Suvendu Adhikari), অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়ী, তেমনই আছেন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়(Locket Chattopadhay) ও সাংসদ জয়ন্ত রায়। যদি এদের মধ্যেই কাউকে এই পদের জন্য বেছে নেওয়া হয় ,তাহলে সুকান্তকে পাঠানো হবে দলের কোনও সাংগঠিক পদে। বঙ্গ বিজেপির নেতাদের দাবি, বাংলার নেতাদের ওপর চরম অসন্তুষ্ট দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। তাঁরা এ রাজ্যের বিজেপি নেতাদের মধ্যে বিবাদ, উপদল, কোন্দল দেখতে দেখতে কার্যত তিতিবিরক্ত। আর তার জেরেই সাংগঠনিক রদবদলের জল্পনা তীব্র হয়েছে। ইতিমধ্যেই বৃহস্পতিবার ফের দিল্লিতে তলব করা হয়েছে শুভেন্দুকে। সম্ভবত তাঁর সঙ্গে কথা বলবেন অমিত শাহ বা জেপি নাড্ডা। তারপরেই চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে প্রয়োজনীয় ঘোষণা করে দিতে পারে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
এই রদবদল যদি শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয় তাহলে বঙ্গ বিজেপিতে ফের দিলীপ গোষ্ঠীর হাতে ক্ষমতা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দিলীপ ঘোষ বঙ্গ বিজেপির সভাপতি পদ হারাবার পর থেকেই তাঁরা অনুগামীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। এই ছবিটা বদলাতে পারে সুকান্তের অপসারণ ঘটলে। একই সঙ্গে বঙ্গ বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) পদে থাকা অমিতাভ চক্রবর্তীর ক্ষমতা আরও খর্ব করা হতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। কেননা তাঁকে পদ থেকে সরাবার জন্য নানান শিবির থেকেই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ গিয়েছে। সেই কারণেই অমিতাভর ডানা ছেঁটে সতীশ ধন্দকে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) করে বঙ্গ বিজেপির দায়িত্বে আনা হয়েছে। চলতি মাসেই বাংলায় আসার কথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও সভাপতি জেপি নাড্ডার। দিল্লি সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে পুজোর আগেই বঙ্গ বিজেপিতে এই সাংগঠনিক রদবদল হয়ে যেতে পারে। মূল টার্গেট অবশ্য আগামী লোকসভা ভোটের আগে বাংলায় দলকে শক্তিশালী করা। কিন্তু এই রদবদলের পরেও বহু শিবির ও গোষ্ঠীতে বিভক্ত বঙ্গ বিজেপিতে ঐক্যের ছবি ধরা পড়বে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েই যাচ্ছে। আর যেহেতু এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কমানো যাচ্ছে না, তাই আগামী দিনে দলের নানা পদে বাংলায় রদবদল করা হলেও লাভের লাভ আদৌ কিছু মিলবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন আছে খোদ বঙ্গ বিজেপির অন্দরেই।