নিজস্ব প্রতিনিধি: এক আধ বার নয়, বার বার। যখন তিনি দার্জিলিংয়ের সাংসদ ছিলেন তখনও তার টিকির দেখা মিলত না। যখন তিনি বর্ধমান-দূর্গাপুরের সাংসদ হলেন তখনও তাঁর বিরুদ্ধে এই একই অভিযোগ উঠল যে কোনও সময়েই তাঁর দেখা পাওয়া যায় না। আর সব থেকে বড় কথা এই অভিযোগ একা বিরোধীরা তুলছেন এমনটা মোটেও নয়, তুলছেন তাঁর দলের নেতা থেকে কর্মী মায় সমর্থকেরাও। তাই তিনি নিজেও এটা খুব ভাল বুঝেছেন উনিশের ছবি ফিরবে না চব্বিশের ভোটে। পরাজয় কার্যত নিশ্চিত। আর তাই এখন তিনি মানে বাংলার জামাই হয়েও বাংলা ছেড়ে পালাতে চাইছেন। দাঁড়াতে চাইছেন ভোটে, বাংলা থেকে যোজন যোজন দূরে তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারিকা(Kanyakumarika) থেকে। তিনি বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভার(Burdhwan Durgapur Constituency) বিজেপি সাংসদ(BJP MP) সুরেন্দ্রজিৎ সিং আলুওয়ালিয়া(Surendrajeet Singh Ahluwalia)। সম্প্রতি তিনি নিজেই তাঁর এহেন ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। আর সেই ইচ্ছা ঘিরেই এখন রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন Family Pension ও General Provident Fund নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত রাজ্যের
শুক্রবার দুর্গাপুরের National Institute of Technologhy বা NIT-তে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন আলুওয়ালিয়া। সেখানেই তিনি বলেন, ‘আমি প্রথম লোকসভার সদস্য হয়ে বিহার ও পরে ঝাড়খণ্ডের এমপি হয়েছি। দার্জিলিংয়ের পর এখানকার সাংসদ। আমার ইচ্ছা এবার কন্যাকুমারী থেকে সাংসদ হওয়ার। আমি যাযাবর। আমাকে দল যেখান থেকে দাঁড়াতে বলবে সেখানেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব ও জিতব। এখানে দাঁড়াতে বললে এখানে দাঁড়াব। কন্যাকুমারীতে দাঁড়াতে বললে সেখানেই দাঁড়াব।’ আলুওয়ালিয়ার এহেন মন্তব্যের জেরেই এখন অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। বিষয়টি লঘু করে দেখানোর জন্য এখন পদ্মশিবির থেকে বলা হচ্ছে, সাংসদ পড়ুয়াদের সামনে দেশের বৈচিত্র্য ও নানা বিভিন্নতা বোঝাচ্ছিলেন। সেই সূত্রেই এই কথা বলেছেন। যদিও ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত, ২০২৪’র ভোটে বর্ধমান-দূর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে যে আর জেতা সম্ভব নয়, সেটা বুঝে এখন থেকেই কেটে পড়ার তাল ঠুকছেন ‘বাংলার জামাই’ আলুওয়ালিয়া।
আরও পড়ুন রাজ্য সরকারের নতুন বিমা প্রকল্পে ২ লক্ষ টাকার আর্থিক সাহায্য
কিন্তু ঘটনা হচ্ছে আলুওয়ালিয়া কী বললেন তা নিয়ে এত চর্চা হচ্ছে কেন আর কেনই বা তা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে? হাওয়ায় তো অনেকে অনেক কথাই ভাসিয়ে দেন। সেই সবে কয়জনই বা গুরুত্ব দেয়! আসলে এই বর্ষীয়ান ও অভিজ্ঞ বিজেপি ভোটের পালস বুঝতে পারেন বলেই গেরুয়া শিবিরে চর্চা রয়েছে। তাই এ হেন নেতার অন্যত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ঘিরে এখন মুখ পুড়ছে বিজেপির। কার্যত আলুওয়ালিয়া ভরা বাজারে বুঝিয়ে দিয়েছেন ২৪’র ভোটে বঙ্গের বুকে বিজেপির সেভাবে কোনও আশা নেই বললেই চলে। সে অমিত শাহ হাজার বার বাংলায় এসে যতরকমেরই টার্গেট বেঁধে দিয়ে যান না কেন। জেতা আসনও যে ২৪-এ ধরে রাখা যাবে না সেটা আলুওয়ালিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন। যেটা এতদিন বাইরের লোক বলত, এবার সেটাই ঘরের লোক বুঝিয়ে দিয়েছেন। এখানেই বিজেপির সব থেকে বড় অস্বস্তি। সব দেখে শুনে এখন তাই তৃণমূলের দাবি, পরাজয় নিশ্চিত জেনেই বাংলা থেকে পালাতে চাইছেন বাংলার জামাই।