নিজস্ব প্রতিনিধি: অন্যের নথি নিয়ে কাগুজে কোম্পানি খোলার অভিযোগ ওঠায় তাকে আগেই গ্রেফতার করেছিল Howrah City Police’র লিলুয়া থানা। কিন্তু রখন কারও জানাই ছিল না তাঁরা হাতে কোন কোহিনুর হীরে পেয়ে গিয়েছেন। কিন্তু সেই কাগুজে কোম্পানি খোলার ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশের আধিকারিকেরা দেখলেন তাঁরা কার্যত দুর্নীতির এক বড় পাহাড়ের সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন। কেননা যাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল তিনি বিগত কয়েক বছরে এরওর নামে ১৪৬টি ভুয়ো কাগুজে কোম্পানি খুলে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা কালো থেকে সাদা করে দিয়েছেন। এই গুণধর ব্যক্তি এক Chartered Accountant বা CA। নাম সুরজিৎ দত্ত(Surjit Dutta)। এই গুণধর ব্যক্তিকে জেলে গিয়ে জেরা করার জন্য ইতিমধ্যেই হাওড়া জেলা আদালতে আবেদন করেছে GST দফতর। পাশাপাশি এই গুণধরের দিকে এখন নজর দিতে শুরু করেছে ED বা Enforcement Directorate। কেননা তাঁদের ধারনা সুরজিৎ নিয়োগ দুর্নীতির টাকাই কালো থেকে সাদা করেছেন। আর তাই তাকে নিজেদের হেফাজতে নিতে আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছে ED।
কয়েক সপ্তাহ আগে লিলুয়া থানার হাতে গ্রেফতার হয়েছেন সুরজিৎ। তাঁর বিরুদ্ধে অন্যের নথি নিয়ে কাগুজে কোম্পানি খোলার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গিয়ে পুলিশের তদন্তাকারী আধিকারিকেরা দেখছেন, একশোর বেশি কাগুজে কোম্পানি খুলে বিপুল পরিমাণ কালো টাকা সাদা করেছেন সুরজিৎ। নরেন্দ্রপুর এলাকায় একটি বিউটি পার্লারের নামে সুরজিৎ নিজে একটি Chartered Firm খোলেন। শুধু কাগজে কলমেই তার অস্তিত্ব ছিল। বিগত কয়েক বছরে ১৪৬টি কোম্পানি খোলা হয়েছে সুরজিতের হাত ধরে। অনেকগুলি কোম্পানির ঠিকানাও এক। ওই সব কাগুজে ভুয়ো কোম্পানির সমস্ত কাগজপত্র একা সুরজিৎ দেখভাল করতেন। ওই সব ভুয়ো কাগুজে সংস্থার আবার Director যাদের করা হয়েছিল তাঁরা কেউ জানতেনই না তাঁদের নাম ভাঙিয়ে কী করা হচ্ছে। এদের কেউ শ্রমিক, আবার কেউ ছোটখাট সংস্থায় কর্মরত। তাঁদের কাগুজে Director করা হয়েছিল। আদতে এগুলির নিয়ন্ত্রণ করত অন্য কেউ যাদের জন্য সুরজিৎ কাজ করছিল। এই সব সাধারন মানুষগুলি জানতেনই না তাঁরা ওই সব সংস্থার মাথায় বসে আছেন।
হাওড়া পুলিশের তদন্তেই উঠে আসে ৩ হাজার টাকার লেনদেন্র ঘটনা। আদতে কালোকে সাদা করার প্রক্রিয়া। আর তা দেখে কার্যত চোখ কপালে উঠেছে পুলিশ আধিকারিক থেকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদেরও। তাঁরা এটাও দেখেন যে, এই ভুয়ো কাগুজে কোম্পানিগুলির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ জিনিস কেনাবেচা দেখানো হয়েছে। বাস্তবে ওই সব সংস্থাগুলি কোনও জিনিস তৈরি বা কাঁচামাল আমদানি-রফতানি করে না। ইস্যু করা হয়েছে জাল Invoice-ও। সেসব জমা করে ভারত সরকারের কাছ থেকে ITC তুলে নেওয়া হয়েছে। এরফলে সরকারের ক্ষতি হয়েছে কোটি কোটি টাকা। এইসব কাগুজে কোম্পানি খোলাই হয়েছিল বিপুল পরিমাণ কালো টাকা সাদা করার জন্য। লেনদেন থেকেই সমস্ত বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। ED’র আধিকারিকেরা জানতে পেরেছেন সুরজিতের সঙ্গে রাজ্যের আকাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীর ঘনিষ্ঠতা ও যোগাযোগ ছিল। আবার ওই সব প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা আগে থেকেই ED’র নজরে রয়েছেন নিয়োগ দুর্নীতি সহ গরু পাচার ও কয়লা পাচার মামলায় জড়িয়ে থাকার সুবাদে। আর সেই কারণেই ED’র আধিকারিকদের ধারনা সুরজিতের মাধ্যমেই নিয়োগ দুর্নীতির মোটা টাকা কার্যত সাদা করা হয়েছে।
তাই সুরজিতকে এবার নিজেদের হেফাজতে নিতে এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছে বলে সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে সেই আবেদন হাওড়া জেলা আদালতে করা হবে না কলকাতা হাইকোর্টে করা হবে সেটা এখনও ঠিক হয়নি। এদিন GST দফতরের মামলার শুনানি রয়েছে হাওড়া আদালতে। যদি আদালত GST দফতরের আধিকারিকদের হাওড়ার জেলে গিয়ে সুরজিতকে জেরা করার অনুমতি দেয় তাহলে ED’র তরফে সেই আদালতেই আবেদন জানানো হবে সুরজিতকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য। আর যদি হাওড়ার আদালত GST দফতরের আবেদন নামঞ্জুর করে বা ED’র আবেদন খারিজ করে তখন সরাসরি কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হবে।