নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার(Bengal) মাটিতে উনিশের ভোটে(General Election 2019) কার্যত ঐতিহাসিক সাফল্যের মুখ দেখেছিল বিজেপি(BJP)। জিতে নিয়েছিল রাজ্যের ১৮টি লোকসভা কেন্দ্র। কিন্তু সেই জয়ের পিছনে যে দেদার টাকা বিলির ঘটনাও জড়িত ছিল সেটা এবার একপ্রকার মেনে নিতেই চলছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন(Election Commission of India)। কেননা সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্দিষ্ট কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলার একাংশকে ‘আর্থিকভাবে স্পর্শকাতর’(Financially Sensitive) ঘোষণা করতে চলেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। যদি সেই রকম কিছু হয় তাহলে তা হবে বাংলার ভোট ইতিহাসে প্রথম। ২০১৯ লোকসভা ভোটে টাকা ছড়ানোর যত অভিযোগ কমিশনে জমা পড়েছিল, সিংহভাগই ছিল বিজেপির বিরুদ্ধে। এবার তারই মাশুল গুণতে চলেছে বাংলা। তামিলনাড়ু, গুজরাত ও তেলেঙ্গানার সঙ্গে একই পংক্তিতে বসতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ।
গত লোকসভা নির্বাচনে অর্থাৎ উনিশের ভোটে বিজেপির বিরুদ্ধে টাকা ছড়ানোর অভিযোগে সরব হয়েছিল বিরোধীরা। Center for Media Studies’র এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৯ সালের নির্বাচনে প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এর প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ ২৭ হাজার কোটি টাকা খরচ করে বিজেপি একাই। সেই প্রথম এরাজ্যেও ভোট কিনতে টাকা ছড়ানোর অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষের গাড়ি থেকে ১ লক্ষ ১৩ হাজার টাকা বাজেয়াপ্ত হয়। হাওড়া ও উত্তরবঙ্গে একাধিক আসনে বিরোধী দলের এজেন্টদের টাকা দিয়ে কিনে নেওয়ার অভিযোগও ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। সেসব জমা পড়েছিল জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দফতরে। যার ভিত্তিতে এবার আগেভাগেই চুলচেরা বিশ্লেষণে ব্যস্ত কমিশন। যদিও প্রশ্ন উঠছে যে রাজনৈতিক দলের এহেন কীর্তির রেকর্ড রয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ না নিয়ে কমিশন কেন বাংলাকে ‘আর্থিকভাবে স্পর্শকাতর’ বলে ঘোষণা করতে চলেছে!
সূত্রের খবর, রাজ্যের যেসব বিধানসভা কেন্দ্র কমিশনের নজরে রয়েছে, সেখানকার বিগত ছয় মাসের আর্থিক কার্যকলাপ যাচাই করতে সম্প্রতি আয়কর বিভাগ, শুল্কদফতর, বন্দর কর্তৃপক্ষ সহ একাধিক বিভাগের সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে বৈঠকে বসেছিলেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাব। পাশাপাশি, রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে এজেন্সিগুলির থেকেও। এমাসের শেষ সপ্তাহে রাজ্যে আসতে চলেছেন জাতীয় ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার। খবর, তার আগেই রিপোর্ট পেশ করতে হবে এজেন্সিগুলিকে। জানা গিয়েছে, রাজ্যে কমিশনের ফুল বেঞ্চ আসার আগেই জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে এই সংক্রান্ত একটি চূড়ান্ত রিপোর্ট কমিশনে পাঠানো হবে। যে কারণে এই তৎপরতা।
গত লোকসভা নির্বাচনে ১১০টিরও বেশি কেন্দ্রকে আর্থিকভাবে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। শীর্ষে ছিল তামিলনাড়ু, গুজরাত ও তেলেঙ্গানা। ৩ রাজ্যের সবকটি কেন্দ্র ছাড়াও অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, বিহার, উত্তরাখণ্ডের ৭০ শতাংশ কেন্দ্রকে আর্থিকভাবে স্পর্শকাতর ঘোষণা করে আয়কর দফতর এবং আয়-ব্যয় পর্যবেক্ষকদের সতর্ক করেছিল কমিশন। উল্লেখযোগ্য হল, এই তালিকায় বাংলার কোনও কেন্দ্র ছিল না। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল সংগঠনের জোরে জিততে পারবে না জেনে ভোট কেনার চেষ্টা করে বিজেপি, এই দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই সরব তৃণমূল(TMC)। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের এই তৎপরতা কার্যত সেই দাবিতেই শিলমোহর দিতে চলেছে।