নিজস্ব প্রতিনিধি: দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গ, সর্বত্রই ভোটচর্চার মুখ্য বিষয় লক্ষ্মীর ভাণ্ডার(Lakhir Bhandar)। কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি সব দলের নেতার কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। একান্ত আলাপচারিতায় প্রায় সব নেতাই মানছেন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মোকাবিলাই এবারের নির্বাচনের(Loksabha Election 2024) প্রধান চ্যালেঞ্জ। এই মুহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মোকাবিলার কোনও অস্ত্র বিরোধীদের হাতে নেই। অনেকেই মনে করছেন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারই প্রধান প্রতিপক্ষ(Chief Opponent)। তাই অনেক বিজেপি নেতা মহিলাদের মাসে ২ হাজার, ৩ হাজার টাকা দেওয়ার ‘গাজর’ ঝোলাচ্ছেন। বামেরা তো আবার ডবল টাকা দেওয়ার বার্তা প্রচার করছে। আসলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো প্রকল্পের বিরোধিতা করলে ভোট কমার আশঙ্কা প্রবল। তাই মন থেকে পছন্দ না হলেও বিরোধীরা সরাসরি এর বিরোধিতা করতে পারছে না।
বাংলার বুকে বাম আমলে একটা পলিথিন দেওয়ার আগেও যাচাই করা হতো বেনিফিসিয়ারির রাজনৈতিক পরিচয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই প্রথার বিলোপ ঘটিয়েছেন। এখন সরকারি সুবিধা পাওয়ার জন্য পার্টি অফিসের সুপারিশের প্রয়োজন হয় না। কাগজপত্র ঠিক থাকলেই মেলে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা। এমনকী, কোনও মানুষ সরকারি পরিষেবার বাইরে আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য সরকারি কর্মীরা গ্রামে গ্রামে ঘোরেন। তাই রেখা পাত্রের মতো কট্টর বিজেপি কিংবা সিপিএম পরিবারের মা, বোনেদেরও লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পেতে অসুবিধা হয় না। দলমত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে কোটি কোটি মানুষ বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা পায়। এটাই উন্নয়নের প্রাথমিক শর্ত। ‘সব কা সাথ সব কা বিকাশ’। সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেলেই তিনি শাসক দলের অনুগামী হয়ে যাবেন, এমনটা নয়। বিশেষ করে সক্রিয়ভাবে যাঁরা রাজনীতি করেন তাঁরা নিজের দলকেই সমর্থন করবেন। সরকার যত কাজই করুক, আর যত সুবিধাই দিক তাঁদের মত পাল্টায় না। উল্টে খুঁত বের করেন। তবে পরিষেবা ও সুযোগ সুবিধার বিচারে বদলায় ‘ফ্লোটিং ভোটারে’র অভিমুখ।
এই ফ্লোটিং ভোটাররা কোনও রাজনৈতিক দলের ‘গোলাম’ হন না। তাঁরা মিটিং, মিছিলে যান না। তাঁরা মূলত সরকারের কাজ ও ব্যক্তিগত সুবিধা, অসুবিধার কথা মাথায় রেখে ভোট দেন। তাঁরাই সরকারকে স্থায়িত্ব দেন এবং ‘পরিবর্তনে’ও নেন অগ্রণী ভূমিকা। অনেকেই বলছেন, এবার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ফ্লোটিং মহিলা ভোটারের অভিমুখ ঠিক করায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। একুশের নির্বাচনেই প্রমাণ হয়েছে, বাংলায় মহিলা ভোটারদের উপর বিজেপির প্রভাব তেমন নেই। কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মা, বোনেদের মনে আস্থার বীজ বুনেছিলেন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার তাকে মহীরুহে পরিণত করেছে। তার শিকড় পৌঁছেছে মাটির অনেক গভীরে। তাকে ধরাশায়ী করা সহজ কাজ নয়। কোথাও যেতে হয় না। লাইন দিতে হয় না। প্রতি মাসে অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকে যায়। ঠিক যেন পেনশন। এরপরেও বাংলার মা, বোনেরা, বউরা কেন তৃণমূলকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে ভোট দেওয়ার কথা শুনবেন! তা সে বিরোধীরা চোখের সামনে বা মুখের সামনে যতই গাজর ঝোলান না কেন।
সরকারি তথ্য বলছে, বাংলার(Bengal) ২ কোটি ১৩ লক্ষ মহিলা লক্ষ্মীর ভান্ডারের সুবিধা পান। যারা এই প্রকল্পের সুবিধা পান তাঁদের একতা বড় অংশই থাকেন গ্রামে। তাঁদের অনেকের সংসারেই কিন্তু লক্ষ্মীর ভান্ডার একটা বাড়তি অক্সিজেন এনে দিয়েছে। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারে। মাসে বা ১০০০ বা ১২০০ টাকাটা হয়তো অনেকের কাছেই সামান্য। কিন্তু তাঁদের জন্য অনেক। গ্রামের সেই লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রাপকদের স্বীকারোক্তি, এই প্রকল্পের মাধ্যমে তাঁদের খুব উপকার হয়েছে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের কিছু টাকা তাঁরা খরচ করেন, বাকিটা রাখেন অসময়ের জন্য। তাঁদের কথায়, ‘এতদিন সবাই ভোট নিয়েছে, কিন্তু আমাদের কথা কেউ ভাবেনি। দিদিই প্রথম আমাদের কথা ভেবেছে। তাই আমরাও আছি দিদির পাশে।’