কৌশিক দে সরকার: হাতেগোনা আর মাত্র ৪০ দিন। তারপরেই শুরু হয়ে যাবে বাঙালির সেরা উৎসব দুর্গাপুজো। তবে প্রতিবছরই কলকাতায় সেই পুজো শুরু হয়ে যায় তৃতীয়া-চতুর্থী থেকেই। কেননা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) মহালয়ার দিন থেকেই পুজো উদ্বোধন করার পালা শুরু করে দেন যা শেষ হয় চতুর্থীতে। আর তৃতীয়া থেকেই কলকাতার পুজোমণ্ডপগুলি দরজা খুলে দেয় দর্শনার্থীদের জন্য। এবারে মহালয়া পড়েছে ২৫ সেপ্টেম্বর। তার ওপর এবারে কলকাতার দুর্গাপুজোর(Kolkata Durgapuja) সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের তকমা(UNESCO World Heritage Tag)। তাই মহালয়ার মধ্যেই সব পুজোর উদ্বোধন এবারে নিজে হাতে করে দিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। সেদিন থেকেই কলকাতার দুর্গাপুজোর দরজা খুলে যেতে পারে দর্শনার্থীদের জন্য। আর এবারে কোন কোন থিম শিল্পীর পুজো কলকাতা কাঁপাতে চলেছে সেটা একনজরে জেনে নিন।
প্রথমেই আসি ভবতোষ সুতারের(Bhobotosh Sutar) কথায়। তাঁকে অনেকেই থিমশিল্পীদের মধ্যে ‘ব্রহ্মা’ বলে ডেকে থাকেন। কারণ প্রকৃতঅর্থেই তিনি সৃষ্টিকর্তা। তাঁর সৃষ্টির মধ্যে থাকে বার্তাও। এবারে তিনি কিন্তু মাত্র ১টি জায়গায় পুজো করছেন। মণ্ডপ থেকে প্রতিমা সবই তাঁর সৃষ্টি। আর সেই পুজো হল অর্জুনপুর আমরা সবাই পরিচালিত দুর্গাপুজো। বাগুইআটি থানার কাছেই এই পুজো বিগত কয়েক বছর ধরেই থিমের বাজারে চমক দিচ্ছে। চলে আসি থিমশিল্পীদের মধ্যে ‘বিষ্ণ’ হিসাবে চিহ্নিত শিল্পী সুশান্ত পালের(Susanta Paul) কথায়। তিনি এই বছর ৩টি পুজো করছেন। তাঁর কাজ দেখা যাবে উত্তর কলকাতার টালা মাঠের কাছে থাকা টালা প্রত্যয় দুর্গাপুজোর প্রাঙ্গণে, দক্ষিণ কলকাতার যোধপুর পার্ক ৯৫ পল্লীর পুজো প্রাঙ্গণে এবং হরিদেবপুর এলাকার বিবেকানন্দ পার্ক অ্যাথলেটিক ক্লাবের পুজোয়। থিম শিল্পীদের মধ্যে ‘মহেশ্বর’ হিসাবে চিহ্নিত শিল্পী সনাতন দিন্দার(Sanatan Dinda) কাজ এবার দেখা যাবে ৩টি পুজোয়। এবছর শিল্পীর ২৫তম কর্মময় জীবন উদযাপিত হচ্ছে। এই কথা মাথায় রেখেই এবার সনাতনবাবু প্রতিমা গড়ছেন উত্তর কলকাতার হাতিবাগান সর্বজনীনে। কেননা ২৫ বছর আগে এখানেই প্রতিমা গড়ে কলকাতার দুর্গাপুজোর বাজারে পা রেখেছিলেন শিল্পী। এছাড়াও তিনি এবার কাজ করছেন দক্ষিণ কলকাতার বকুলবাগান ও বেহালার নতুন সংঘের পুজোয়। বকুলবাগানে সামগ্রিক দায়িত্ব তিনি থাকলেও নতুন সংঘে তিনি মণ্ডপ সজ্জার দায়িত্ব আছেন।
এ তো গেল ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের কথা। এই ৩ যশ্বসী শিল্পী ছাড়াও এবার কলকাতার চোখ থাকবে আরও ২জন শিল্পীর কাজের দিকে। একজন অদিতি চক্রবর্তী(Aditi Chakrabarty), অপরজন রিন্টু দাস(Rintu Das)। কলকাতায় যে কয়জন হাতেগোনা মহিলা থিমশিল্পী রয়েছেন তাঁদের মধ্যে অদিতির নাম সর্বাগ্রে উল্লেখ করতেই হয়। কেননা অদিতি হলেন সেই শিল্পী যার হাত ধরে কলকাতা শুধু ভিন্ন রাজ্যের লোকশিল্পের সম্ভারই পেয়েছে তাই নয়, বড়িশা তরুণ তীর্থ, ওয়েলিংটন নাগরিক কল্যাণ সমিতির মতো পুজোর পরিচিতি পেয়েছে অদিতির কাজের জন্য। সেই অদিতি এবার ২ জায়গায় কাজ করছেন। উত্তর কলকাতার কাশী বোস লেনে এবং বেহালা ক্লাবে দেখা যাবে অদিতির কাজ। চলে আসছি রিন্টু দাসের কথায়। এবারে তিনি ২টি পুজোর দায়িত্বে থাকছেন। একটি সকলের পরিচিত নিউ আলিপুর এলাকার সুরুচি সংঘ এবং দ্বিতীয়টি বেহালার বড়িশা ক্লাব। পুজোর মাধ্যমে সামাজিক বার্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে রিন্টু দাসের জুড়িদার কেউ নেই কলকাতার বাজারে। মানুষের লুপ্ত চেতনা, বিবেকবোধ, মনুষ্যত্ববোধকে নাড়া দেন এই শিল্পী। তাই সব শেষে একটাই কথা, কলকাতার বুকে ঠাকুর দেখতে বেড়িয়ে এই ৫জন শিল্পীর ১১টি পুজো দেখতে ভুলবেন না।