নিজস্ব প্রতিনিধি: একুশের নির্বাচনে তিনি বেশ বড় মুখ করে হাঁক পেড়েছিলেন, ‘আবকে বার ২০০ পার’। কিন্তু বাংলার জনতা তাঁর সেই শ্লোগানকে আর বাস্তব হতে দেননি। বরঞ্চ বাংলার জনতা বিজেপিকে আটকে দিয়েছে ১০০’র অনেকটাই নীচে। মানে তিনি গাল ভরে যত আসনের দাবি করেছিলেন তার অর্ধেকেরও নীচে পদ্মপার্টির দৌড় থামিয়ে দিয়েছিলেন বাংলার জনতা। কিন্তু সেই নির্বাচনের পরেও বাংলার বুকে বিজেপির শনির দশা কাটেনি। নিত্যদিনই দল ছাড়ছেন নেতাকর্মীরা। দলবদল করছেন সাংসদ থেকে বিধায়কেরাও। দলও কার্যত ধারাবাহিক ভাবে একের পর এক নির্বাচনে তৃণমূলের(TMC) কাছে গোহারান হেরে চলেছে। এই অবস্থায় বঙ্গ বিজেপি(Bengal BJP) আবার তাঁরই শরণাপন্ন হল। মানে বিজেপির নম্বর টু অমিত শাহের(Amit Shah), যিনি হাঁক পেড়েছিলেন একুশের নির্বাচনে ‘আবকে বার ২০০ পার’। এবার সেই শাহকে মাথায় রেখেই বঙ্গ বিজেপির পুনঃজাগরণে গঠিত হল ‘টিম বাংলা’(Team Bangla), যেখানে ঠাঁই পেয়েছেন ৬জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও। আর এই টিম গঠন কার্যত চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের ওপর আর বিন্দুমাত্র আস্থা, ভরসা, বিশ্বাস নেই পদ্মশিবিরের।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে ইতিমধ্যেই দলীয় সমীক্ষা পৌঁছে গিয়েছে। সেই সমীক্ষায় বলে দিয়েছে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে জেতা বিজেপির ১৫০টির মতন আসন আর ২০২৪-এ বিজেপির কাছে নিরাপদ নয়। এমনকি তার মধ্যে বাংলায় জেতা ১৮টি আসনের মধ্যে ৮টি আসনও আছে। যদিও বাস্তব পরিস্থিতি এটাই যে বনগাঁ, রানাঘাট, দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ার ব্যাতীত কোনও আসনই আর নিরাপদ নয় বিজেপির কাছে। তবুও ছন্নছাড়া বঙ্গ বিজেপিকে একসূত্রে বাঁধতে ‘টিম বাংলা’ গঠন করলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, যার মাথায় থাকছেন অমিত শাহ। এছাড়াও সেই টিমে থাকছেন স্মৃতি ইরানি, ধর্মেন্দ্র প্রধান, এস পি সিং বাঘেলের মতো কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। এই ৬ জন মন্ত্রী এখন বাংলায় ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করবেন। বাংলাকে পাঁচটি জোনে ভাগ করে মন্ত্রীরা ‘টিম বাংলা’র কাজ শুরু করবেন। এছাড়াও তাঁরা বাংলায় দলের পরিস্থিতি সম্পর্কে নিয়মিত শাহ ও নাড্ডাকে রিপোর্ট দেবেন।
কার্যত এই ‘টিম বাংলা’ গঠনের সিদ্ধান্তে এটা পরিষ্কার যে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের ওপর আর ভরসা নেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। দলের সর্বভারতীয় সহ–সভাপতি তথা বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি ও সাংসদ দিলীপ ঘোষ যে রিপোর্ট দিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাতে সুকান্ত–শুভেন্দুর বিরুদ্ধে বিস্তর নালিশ রয়েছে বলে সূত্রে জানা গিয়েছে। সম্প্রতি বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের কাছ থেকে দলের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে রিপোর্ট তলব করেছিলেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডারা। তার জেরে যে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে বাংলা থেকে তাতে রীতিমত অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্বয়ং অমিত শাহ। মনগড়া রিপোর্ট বলেই মনে করছেন তিনি। তাই বাস্তব পরিস্থিতির ওপর রিপোর্ট তৈরি করতেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের এবার মাঠে নামানো হচ্ছে।