এই মুহূর্তে




কী ভাবে করবেন ঘট স্থাপন ? মন্ত্র-সহ জেনে নিন…




পৃথ্বীজিৎ চট্টোপাধ্যায়: হিন্দু ধর্ম ঐতিহ্য ও রীতিনীতির বিপুল সম্ভার। এই ধর্মে পুজো বিষয়ক প্রত্যেক নিত্যকর্মের আগে করণীয় বিশেষ কিছু আচার থাকে। প্রথা অনুযায়ী যে কোন পূজার সময় ঘট স্থাপন করতে হয়। ঘট আসলে কোনও দেবী বা দেবতার মূর্তি নয়। ঘট ভগবানের নিরাকার অবস্থার মূর্ত প্রতীক। হিন্দুরা পূজার সময় যেমন ভগবানের সাকার স্বরূপকে পূজা করেন, তেমনই নিরাকার স্বরূপকেও পূজা করেন। তাই ঘট স্থাপন প্রতি পূজায় একান্ত আবশ্যক। ঘট স্থাপন ছাড়া পূজা অসম্পূর্ণ বলে মনে করা হয়।

প্রথমে জেনে নেওয়া প্রয়োজন,  ঘট স্থাপনে কী কী লাগে ?

ঘট স্থাপন করতে প্রয়োজন মাটি। বিশেষত গঙ্গা মাটি হলেই ভাল। ধান, ঘট (মাটি, পিতল, তামার ঘট হলে ভাল), জল (গঙ্গাজল হলে ভালো), আম্র পল্লব, সশীর্ষ ডাব, সিঁদুর, ঘটের আচ্ছাদন, চারটি তিরকাঠি, লাল ধাগা (তিরকাঠি বাঁধার জন্য), তিল, শ্বেত সরষে, যব, পঞ্চগুড়ি, পঞ্চশস্য, পঞ্চরত্ন, সিদ্ধি, ফুলের মালা, চাঁদমালা, মাটির সরা।

ঘট স্থাপনের পদ্ধতি :

ধান, মাসকলাই, তিল, শ্বেত সরষে, যব নিয়ে ঘটের নিচে অষ্টদল পদ্ম আঁকতে হবে। ঘটের নিচে মাটিতে পঞ্চগুড়ি ও পঞ্চশস্য এবং ঘটের মধ্যে জলে পঞ্চরত্ন ও সিদ্ধি দেওয়া আবশ্যক। এরপর ঘট বসিয়ে ঘটে সিঁদুর লাগিয়ে ও আম পল্লব দিয়ে তার ওপরে মাটির সরায় আতপচাল ও হরতকী দিতে হবে। তার ওপর ডাব স্থাপন করে ঘটের আচ্ছাদন দিতে হবে।

ঘট স্থাপন মূলত চারটি মতে হয়ে থাকে। এই চারটি মত হল : যজুর্ব্বেদি ঘটস্থাপন, ঋগ্বেদী ঘটস্থাপন, সামবেদী ঘটস্থাপন ও তান্ত্রিক ঘটস্থাপন। জেনে নেওয়া যাক এই চার মতে ঘট স্থাপনের পদ্ধতি।

যজুর্ব্বেদি ঘটস্থাপন:

সুলক্ষণ ঘটে ধান্, দুর্ব্বা, ফুল; সিন্দুর ও চন্দন দিয়ে বলতে হবে

ভূমি – ওঁ ধান্যমসি ধিনুহি দেবান্‌ ধিনুহি যজ্ঞম্‌। ধিনুহি যজ্ঞপতিং ধিনুহি মাং যজ্ঞন্যম্‌।।

ঘটে – ওঁ আজিঘ্র কলশং মহ্যা ত্বা বিশন্ত্বিন্দবঃ। পুনরূর্জ্জা নিবর্ত্তস্ব, সা নঃ সহস্রং ধুক্ষোরুধারা পয়স্বতী, পুনর্মা বিশতাদ্রয়িঃ।

জলে – ওঁ বরুণস্যোত্তম্ভনমসি, বরুণ স্কম্ভসর্জ্জনী স্থঃ বরুণস্য ঋতসদন্যসি। বরুনস্য ঋতসদনমাসীদ।

পল্লব – ওঁ ধন্বনা গা ধন্বনাজিং জয়েম, ধন্বনা তীব্রাঃ সমদো জয়েম। ধনুঃ শত্রোরপকামং কৃণোতি ধন্বনা সর্ব্বাঃ প্রদিশো জয়েম।।

ফল – ওঁ যাঃ ফলিনীর্ষা অফলা অপুস্পা যাশ্চ পুস্পিণীঃ। বৃহস্পতিপ্রসূতাস্তা নো মুঞ্চন্ত্বগুঁহসঃ।।

সিন্দুর – ওঁ সিন্ধোরিব প্রাধ্বনে শুঘনাসো বাতপ্রমিয়ঃ পতয়ন্তি যহ্বাঃ। ঘৃতস্য ধারা অরুষো ন বাজী, কাষ্ঠা ভিন্দন্নূর্ম্মিভিঃ পিন্বমানঃ।।

দূর্ব্বা – ওঁ কাণ্ডাৎ কাণ্ডাৎ প্ররোহন্তি পুরুষঃ পরুষঃ পরি। এবা নো দূর্ব্বে প্রতনু সহস্রেণ শতেন চ।।

পুস্প – ওঁ শ্রীশ্চ তে লক্ষ্মীশ্চ পত্ন্যা অহোরাত্রে পার্শ্বে নক্ষত্রাণি রূপমশ্বিনৌ ব্যাত্তম্‌। ইষ্ণন্নিষাণামুম্ম ইষাণ, সর্ব্ব লোকং ম ইষান।।

গন্ধ – ওঁ গন্ধদ্বারাং দুরাধর্ষাং নিত্যপুষ্টাং করীষিণীম্‌। ঈশ্বরীং সর্ব্বভূতানাং ত্বামিহোপহ্বয়ে শ্রিয়ম্‌।।

বস্ত্র – ওঁ যুবা সুবাসাঃ পরিবীত আগাৎ স উ শ্রেয়ান্‌, ভবতি জায়মানঃ। তং ধীরাসঃ কবয় উন্নয়ন্তি সাধ্যা মনসা দেবয়ন্তঃ।।

স্থিরীকরণ – ওঁ সর্ব্বতীর্থোদ্ভবং বারি সর্ব্বদেবসমন্বিতম্‌। ইমং ঘটং সমারুহ্য তিষ্ঠ দেবগণৈঃ সহ।।

স্থাং স্থীং স্থিরো ভব বিড্ব

ঙ্গ আশুর্ভব বাজ্যর্ব্বন্‌ পৃথুর্ভব।

সুষদস্ত্বমগ্নেঃ পূরীষবাহন।

অতঃপর গায়ত্রী পাঠ করতে হবে।

এরপর তিরকাঠিতে সুতো বাঁধতে বাঁধতে বলতে হবে,

ওঁ কাণ্ডাৎ কাণ্ডাৎ প্ররোহন্তী পুরুষঃ পরুষঃ পরি। এবা নো দূর্ব্বে প্রতনু সহস্রেণ শতেন চ।

ঋগ্বেদী ঘটস্থাপন:

ভূমিতে হাত দিয়ে পাঠ করতে হবে, – ওঁ উর্ব্বী সদ্মনী বৃহতি ঋতেন হুবে দেবানামবসা জনিত্রী। দধাতে যে অমৃতং সুপ্রতীকে দ্যাবা রক্ষতং পৃথিবী নো অভাৎ।।

ধানে হাত দিয়ে পাঠ করতে হবে – ওঁ ধানাবন্তং করম্ভিণমপুপবন্তমুক্‌থিনম্‌। ইন্দ্র প্রাতর্জুযস্ব নঃ।

ঘটে হস্ত দিয়ে পাঠ করিবে, – ওঁ এতানি ভদ্রা কলশ ক্রিয়াম্‌ কুরু শ্রবণ দদতো মঘানি। দান ইদ্বো মঘবানঃ সো অস্ত্বয়ং চ সোমো হৃদি যং বিভর্ম্মি।।

জল স্পর্শ করে বলতে হবে – ওঁ বরুণস্যোত্তম্ভনমসি বরুণস্য স্কম্ভসর্জ্জনী স্থঃ। বরুনস্য ঋতসদন্যসি। বরুনস্য ঋতসদনমসি। বরুনস্য ঋতসদনমাসীদ।।

ফলে হাত দিয়ে পাঠ করতে হবে – ওঁ যাঃ ফলিনীর্যা অফলা অপুস্পা যাশ্চ পুস্পিণীঃ। বৃহস্পতি প্রসূতাস্তা নো মুঞ্চন্ত্বংহসঃ।।

স্থিরীকরণ – ওঁ স্থিরো ভব বীড্বঙ্গ, আশুর্ভব বাজ্যর্ব্বন্‌। পৃথুর্ভব সুষদস্ত্বমগ্নেঃ পুরীষবাহনঃ।।

পরে হাত জোর করে – ওঁ সর্ব্বতীর্থোদ্ভবং বারি ইত্যাদি পাঠ করবে।

সামবেদী ঘটস্থাপন:

ভূমিতে হাত দিয়ে বলতে হবে – ওঁ ভূমিরন্তরীক্ষং দ্যৌর্দ্বা ভূতায়াঃ।

ধানে হাত দিয়ে পাঠ করতে হবে – ওঁ ধানাবন্তং করম্ভিণমপুপবন্তমুক্‌থিম্‌। ইন্দ্র প্রাতর্জুষস্ব নঃ।।

ঘট ধরে পাঠ করিতে হবে – ওঁ আবিশন্‌ কলশং সুতো বিশ্বা অর্যন্নভিশ্রিয়ং। ইন্দুরিন্দ্রায় ধীয়তে।।

জলে হাত দিয়ে পাঠ করতে – ওঁ আ নো মিত্রাবরুণা ঘৃতৈর্গব্যুতি মুক্ষতম্‌। মধ্বা রজাংসি সুক্রতু।।

আম পল্লব ধরে পাঠ করতে হবে – ওঁ অয়মূর্জ্জাবতো বৃক্ষ উর্জ্জীব ফলিনী ভব। পর্ণং বনস্পতে নুত্ত্বা নুত্ত্বা চ সূয়তাং রয়িঃ।

ফল ধরে পাঠ করতে হবে – ওঁ ইন্দ্রং নরো বেমধিতা হবন্তে যৎ পার্য্যা যুনজতে ধিয়স্তাঃ। শূরো নৃষাতা শ্রবসশ্চ কাম আ গোমতি ব্রজে ভজা ত্বং নঃ।। (বস্ত্রের মন্ত্র যজুর্বেদী ঘটস্থাপন দেখুন)

ফুল ছুঁয়ে বলতে হবে – ওঁ পবমান ব্যশ্নুহি রশ্মিভির্বাজ সাতমঃ দধৎ স্তোত্রে সুবীর্য্যম্‌।।

সিন্দুর স্পর্শ করে পাঠ করতে হবে – ওঁ সিন্ধোরুচ্ছ্বাসেপতয়ন্তমুক্ষণং হিরণ্যপাবাঃ পশুমপ্‌সুগৃভ্বতে।।

স্থিরীকরণ (ঘটে হাত দিয়ে পাঠ করতে হবে) – ওঁ ত্বাবতঃ পুরূবসো বয়মিন্দ্র প্রণেতঃ। স্মসি স্থাতর্হরীণাম্‌।। স্থাং স্থীং স্থীরো ভব।

হাত জোড় করে পাঠ করতে হবে – ওঁ সর্ব্বতীর্থোদ্ভবং বারি সর্বদেবসমন্বিতম্‌। ইমং ঘটং সমারুহ্য তিষ্ঠ দেবগণৈঃ সহ।।

দেবী পূজায়, – তিষ্ঠ দেবীগণৈঃ সহ।।

অতঃপর ঘটের উপর গায়ত্রী পাঠ করতে হবে।

তান্ত্রিক ঘটস্থাপন:

ঘট শুদ্ধির জন্য “ক্লীং” মন্ত্রে জল ঘটে ছিটিয়ে “ঐং” মন্ত্রে ঘট শোধন করতে হবে। এরপর “হ্রীং মন্ত্রে ঘটস্থাপন করে ‘হ্রীং’ মন্ত্রে ঘট জলপূর্ণ করতে হবে। এরপর বলতে হবে –

ওঁ গঙ্গাদ্যাঃ সরিতঃ সর্ব্বাঃ সরাংসি জলদা নদাঃ। হ্রদাঃ প্রস্রবণাঃ পূণ্যাঃ স্বর্গপাতালভূগতাঃ। সর্ব্বতীর্থানি পূণ্যানি ঘটে কুর্ব্বন্তু সন্নিধিম্‌।।

তারপর “শ্রীং” মন্ত্রে ঘটে পল্লব দিয়ে “হূং” মন্ত্রে ঘটে ডাব দিতে হবে। এরপর “স্ত্রীং” মন্ত্রে স্থিরীকরণ করে “রং” মন্ত্রে সিন্দুর লাগাতে হবে। এরপর  “যং” মন্ত্রে ঘটে ফুল দিতে হবে। এরপর দেবতার মূলমন্ত্রে দুর্ব্বা দিয়া “ওঁ” মন্ত্রে জল ছিটিয়ে “হূং ফট্‌ স্বাহা” এই মন্ত্র কুশ হাতে নিয়ে বলতে হবে।




Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

গরমে শরীর ঠাণ্ডা রাখতে খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন ‘টাঙ্গা তোরানী’

আমের খোসা ফেলে দেওয়ার পরিবর্তে ব্যবহার করুন, কোষ্টকাঠিন্য থেকে মিলবে মুক্তি

শত চেষ্টা করেও ওজন কমছে না? আজ থেকেই শুরু করুন স্পেশাল ডুব্রো ডায়েট

পুরনো বন্ধুর সঙ্গে আচমকা যোগাযোগ, বুধবার কেমন কাটবে নানা রাশির জাতকদের?

আম খেলেই কী অ্যাসিডিটি হয়? জানুন এই সমস্যা দূর করার উপায়

যন্ত্রণা-সহ একাধিক ক্ষেত্রে উপশম পেতে কার্যকরী রসুন, জানেন কী?

Advertisement




এক ঝলকে
Advertisement




জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর