এই মুহূর্তে




স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র, প্রথা মেনে মন্দিরের এক কিলোমিটারের মধ্যে আজও হয় না কালীপুজো

নিজস্ব প্রতিনিধি: উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটে রয়েছে এক কালী মন্দির । এই মন্দির প্রায় ৬০০ বছরের প্রাচীন। অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে সংগ্রামপুরের কালী মন্দির। কথিত আছে এই কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র দে। সেই সময় রীতি ছিল কালী মন্দিরের এক কিলোমিটারের মধ্যে আর কোনও কালীপুজো হবে না। এখনো সেই নিয়ম অটুট। আজও এখানে বলি দেওয়া হয় পাঁঠা।

সংগ্রামপুরের কালীমন্দিরে দেবি কালিকা পূজিত হন দক্ষিণা কালী রূপে। জনমানসে বিশ্বাস মা খুব জাগ্রত। তাই হাজার হাজার ভক্ত মায়ের কাছে ছুটে আসেন ইচ্ছেপূরণের আশা নিয়ে। ইতিহাস বলে কালী মন্দির তৈরির জন্য রাজা কৃষ্ণচন্দ্র যে জমি দান করেছিলেন সেই জমিতে গড়ে উঠেছিল কালী মন্দির। মনে করা হয় রাজা কৃষ্ণচন্দ্রকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন মা। স্বপ্ন দেখে মন্দিরের জন্য জমি দানের সিদ্ধান্ত নেন রাজা। প্রথমে মন্দির এমন ছিল না। রাজার সময় খড়ের চালের মন্দিরে দেবী ছিলেন অধিষ্ঠিত। খড়ের চালের তলায় মাকে রাখতে চাননি পরে আর ভক্তরা, তাই সকলে মিলে তৈরি করেন পাকা মন্দির। মন্দির প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি রাজা স্থির করে গিয়েছিলেন পূজারীও। তিনি স্থানীয় চক্রবর্তীর পরিবারকে সংগ্রামপুরে বসতি করে দেন। তাঁদেরই দেন পুজোর দায়িত্ব। চক্রবর্তী পরিবারই বংশানুক্রমিকভাবে এই পুজো করে আসছেন।

সংগ্রামপুরের কালী প্রতিষ্ঠা নিয়ে আরও একটি গল্প প্রচলিত রয়েছে। এখানেও রয়েছেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। কালীভক্ত রাজা কৃষ্ণচন্দ্র একদিন ইছামতীর বুকে নৌকো বিহারে বেরিয়ে সংগ্রামপুরের কাছে নোঙর করেন। রাতে স্বপ্ন দেখলেন, ইছামতীর উত্তর দিকের জঙ্গলের মধ্য থেকে আলো বেরোচ্ছে। পরদিন রাজা সঙে থাকা লোক জনদের নিয়ে গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করে এক কালি মন্দির দেখতে পান। সেখানেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন দক্ষিণাকালীকার মূর্তি।

কথিত আছে, মা কালীর সামনে থাকা ঘট সংগ্রামপুরের কোনও এক ব্যক্তি পেয়েছিলেন। সেই ঘটের উপর ভিত্তি করেই গড়ে তোলা হয়েছিল মন্দির। তবে মন্দিরের মূর্তি কি দিয়ে তৈরি বা কে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তা কেউ বলতে পারে না। মায়ের মন্দিরে নিত্য পুজো হয়। প্রচুর মানুষ প্রতিদিন পুজো দিতে আসেন মায়ের কাছে। দেবীকে ভিন্ন ভিন্ন ভোগ নিবেদন করা হয়। কখনও লুচি, চিঁড়ে, ফল, খিচুড়ি, পায়েস দেওয়া হয়, কখনও বা আমিষ ভোগ দেওয়া হয়। কোন ভক্ত যদি মায়ের উদ্দেশ্যে পাঁঠা উৎসর্গ করে তাহলে মাকে সেই কাঁচা মাংস নিবেদন করা হয়। এই মন্দিরে বছরের বিভিন্ন সময় কালী মায়ের পুজো হয়। ভাদ্র মাসে দেবী এখানে পূজিত হন ভদ্রকালী রূপে, শ্যামা পুজোর রাত্রে হয় শ্যামা কালীর আরাধনা, চৈত্র মাসে হয় গামাটি পুজো এবং শীতলা পুজো। ১ জানুয়ারি হয় কল্পতরু উৎসব। চৈত্র মাসে হয় চড়ক পুজো। তাই সারা বছরই মোটামুটি জমজমাট থাকে সংগ্রামপুরের কালী মন্দির।

বহু বছরের রীতি মেনে শ্যামা পুজোর আগে নতুন করে মূর্তিতে রঙ করা হয়। কী দিয়ে রঙ করা হয় তা আজ পর্যন্ত কেউ জানে না। এত বছর পেরিয়েও দেবী মূর্তি রঙের বিষয়টি রহস্য হয়েই রয়ে গিয়েছে । এই মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় থেকেই একই রকম। কখনও কোনও সংস্কারের প্রয়োজন পড়েনি। কালীপুজোর দিন আঁকা হয় এখানে মায়ের চোখ। চক্ষুদান হয় সকাল আটটার মধ্যে। পুজোর দিন দেবীকে পড়ানো হয় বেনারসি শাড়ি। সেই সঙ্গে মায়ের গায়ে থাকে বিভিন্ন ধরনের সোনার অলংকার। এখানে দীপান্বিতা অমাবস্যায় বলি হয় ভোরের দিকে। শাস্ত্র বলে, হোম হলে প্রতিমার বিসর্জন দিতে হয়। এই মন্দিরে দেবী প্রতিষ্ঠিত, তাই হোম হয় না।

সংগ্রামপুরে মাকে নিবেদন করা হয় বিশেষ কিছু জিনিস। যেমন মটর ডাল দিয়ে এঁচোড়ের তরকারি, কচুরমুখী এবং চিংড়ি মাছের তরকারি, সাদা ভাত। এছাড়া দেওয়া হয় বলির কাঁচা মাংস। ভোগের তালিকা সেই প্রথম থেকেই এক। এই সময় এঁচোড়ের সময় নয়। তবু মা নিজেই বোধহয় মায়ের প্রিয় খাবার জুগিয়ে নেন। প্রতিবছর ঠিক কোন না কোন ভক্ত এঁচোড় নিয়ে চলে আসেন মায়ের ভোগের জন্য। অনেকেই পাঠা নিয়ে আসেন। তা দিয়ে সারা বছর ধরেই প্রায় বলি চলে। সংগ্রামপুরের মন্দির নিয়ে গল্পের শেষ নেই । কেউ বলে মন্দিরের পিছন দিকে একটি পুকুর আছে। সেখানে একটি মেয়েকে স্নান করতে দেখা যায়। সেই মেয়ে এক ছোট মেয়ে, পরনে তার লাল ডুরে পাড় শাড়ি। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে ওই কন্যা স্বয়ং মা কালী । তাই তাঁদের বিশ্রাবাস মা নিজেই গ্রামের মধ্যে রয়েছেন। তিনি সকলের মঙ্গল করবেন। যদি বলি প্রথা বন্ধ হয়ে যায় তাহলে মা রক্তের স্বাদ পাবেন না। তখন যদি গ্রামে মরক লাগে, অনিষ্ট হয়! তাই এত বছর পরেও এখানে পাঠা বলি প্রথা চালু রয়েছে।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হাতে বন্দি কাকদ্বীপের ১৪ ম‍ৎস্যজীবী

বন্যাবিধ্বস্ত গ্রামে ত্রাণ হাতে পৌঁছালেন মন্ত্রী, দিলেন আশ্বাস

দার্জিলিঙে বসে কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবি এঁকেছিলেন মমতা, সেই বাড়ি পুড়ে ছাই

দুর্গাপুরে কালীপুজোয় এবারের থিম জৈন মন্দির, চোখের সামনে ভেসে উঠবে কালাপানির অত্যাচার

সাঁইথিয়ায় বিধানসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থী কে? ঘোষণা করে দিলেন কেষ্ট

রাস্তার মধ্যেই মহিলাকে জোরপূর্বক চুমু খেয়ে পালাল দুষ্কৃতী, সাঙ্ঘাতিক ঘটনা যোগী রাজ্যে

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ