নিজস্ব প্রতিনিধি, লন্ডন: রক্তের আকাল দূর করতে অভিনব পন্থা নিলেন ব্রিটেনের গবেষকরা। এই প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা হল ল্যাবরেটরিতে তৈরি কৃত্রিম রক্ত। ওই রক্ত কতটা কাজ করে তা দেখার পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ল্যাবরেটরিতে তৈরি কৃত্রিম রক্ত মানবদেহে সঠিকভাবে কাজ করলে রক্তের আকাল অনেকটাই সামাল দেওয়া যাবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
গত কয়েক বছর ধরেই রক্তের আকাল দূর করতে কৃত্রিম রক্ত তৈরি নিয়ে গবেষণা করছেন ব্রিস্টল, কেমব্রিজ, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় এবং ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের ব্লাড এন্ড ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগের গবেষকরা। তাঁদের লক্ষ্য হচ্ছে, যে সব গ্রুপের রক্ত বিরল, সেই সব গ্রুপের রক্ত তৈরি করা। যাতে সাধারণ মানুষকে বিরল গ্রুপের রক্তের জন্য হণ্য হয়ে ঘুরতে না হয়। সাধারণত মানব শরীরে রক্তের ঘাটতি পূরণে যে রক্ত সঞ্চালন করতে হয়, তা মানুষের শরীর থেকেই নেওয়া হয়। যখন কোন ব্যক্তি রক্ত দান করেন, তখন সেই রক্তে সাধারণত নতুন এবং পুরোনো- দুধরণের লোহিত কণিকাই থাকে। কিন্তু ল্যাবরেটরিতে তৈরি রক্তে সবই নতুন লোহিত কণিকা, কাজেই এই রক্ত পুরো ১২০ দিন কাজ করার কথা। গবেষকরা মনে করছেন, এর ফলে ভবিষ্যতে হয়তো রোগীর দেহে ঘন ঘন রক্ত দিতে হবে না এবং পরিমাণও কম লাগবে।
ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিস্টলের অধ্যাপক অ্যাশলে টোয়ের কথায়, ‘কিছু কিছু রক্তের গ্রুপ এতটাই বিরল যে একটা দেশে হয়তো মাত্র দশ জন মানুষ আছেন যারা এই রক্ত দিতে পারবেন। ব্রিটেনে বিভিন্ন ব্লাড ব্যাঙ্কে যত রক্ত রয়েছে তার মধ্যে ‘বোম্বে ব্লাড গ্রুপের’ তিনটি ইউনিট আছে। পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম দুজনের ক্ষেত্রে ল্যাবরেটরিতে তৈরি কৃত্রিম রক্ত দেওয়া হয়েছে। মোট দশজন স্বেচ্ছাসেবকের শরীরে এই রক্ত প্রয়োগ করা হবে। চার মাসের ব্যবধানে দুবার ৫ হতে ১০ মিলিমিটার পরিমাণে ল্যাবরেটরিতে তৈরি রক্ত দেওয়া হবে। ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার ব্লাড এন্ড ট্রান্সফিউশনের মেডিকেল ডিরেক্টর ফররুখ শাহ জানিয়েছেন, গবেষণার মাধ্যমে যে কৃত্রিম রক্ত তৈরি করা হয়েছে তা মানব শরীরে সঠিকভাবে কাজ করলে চিকিৎসার ক্ষেত্রে নয়া দিগন্ত খুলে যাবে। রক্তদানের জন্য মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না।’