এই মুহূর্তে

WEB Ad Valentine 3

WEB Ad_Valentine

কালীর এই ভয়ঙ্করী রূপ কেন? জানুন এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য

নিজস্ব প্রতিনিধি: বাঙালি অসুর সংহারী দেবী দুর্গাকে ঘরের মেয়ে উমা করে নিয়েছে। কিন্তু কালী? তিনি করালবদনী, দীগম্বরী, ঘোর কৃষ্ণবর্ণা এবং ভয়ঙ্কর রূপে পূজিতা। এই রূপেই সাধারণত বঙ্গদেশে কালীর পুজো হয়। একহাতে খড়গ অন্যহাতে বরাভয়, গলায় নরমুণ্ড এবং দেহে রক্তের স্রোত, আবার তিনি বিবসনা। কালীমূর্তির মধ্যে বেশ বৈপরীত্য লক্ষ্য করা যায়। পণ্ডিতেরা বলেন কালীর এই রূপের তাৎপর্য অতি গূঢ়। দশমহাবিদ্য়ার প্রথম দেবী হলেন কালী। এই কালীর আবার বিভিন্ন রূপ আছে যেমন দক্ষিণাকালী, ভদ্রকালী, সিদ্ধকালী, গুহ্যকালী প্রভৃতি। এর মধ্যে দক্ষিণাকালী রূপটিই বাংলায় বেশি পুজো পায়। এই মূর্তিতে মায়ের একহাতে ছিন্ন নরমুণ্ড ও খড়্গ। অন্যহাতে বরাভয়। মায়ের গাত্রবর্ণ মেঘের ন্যায় কৃষ্ণ বর্ণ এবং তিনি দিগম্বরী।

কাল শব্দের অর্থ সময়। অতীত-বর্তমান ও ভবিষ্যতকে যিনি কলন করেন তিনি মহাকাল। আর সেই মহাকালের নিয়ন্ত্রক যিনি, তিনিই মহাকালী। কাল শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ হল কালী। হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করা হয় আদ্যা শক্তি নিরাকার। তিনি মানুষের কল্পনাতীত। আসলে কালী অনন্তের প্রতীক। এই আদিশক্তি বা আদ্যাশক্তি ‘সময়ের থেকেও উচ্চতর’।

দেবী কেন কৃষ্ণবর্ণা?

‘শ্যামা মা কি আমার কালো রে,
শ্যামা কখনও শ্বেত, কখনও পীত,
কখনও নীল লোহিত রে..’
আলোকবিজ্ঞানের মতে কালো কোনও পৃথক রঙ নয়। সকল রঙের মিশ্রণ বা সব রঙ একত্রে শোষিত হলে কালো দেখায়। তাই অনন্ত মহাকাশ কৃষ্ণবর্ণের। ফলে কালো রঙ হল অনন্তের প্রতীক। দেবী কালীও প্রলয়কালে সমস্ত জগত নিজের মধ্যে বিলীন করে নেন, তাই তিনি কৃষ্ণবর্ণা। তিনি ব্রহ্মময়ী- তিনি গুণাতীতা হয়েও গুণময়ী।

কালী করালবদনা, ভীষণা অথচ পীনোন্নতপয়োধরা

কু ধাতুর সঙ্গে অল্ প্রত্যয় যুক্ত করে কাল শব্দটি এসেছে। এই কাল শব্দের অর্থ হল মৃত্যু। এরই স্ত্রী রূপ হল কালী। অর্থাৎ যিনি প্রলয়কালে স্বয়ং কালকেও কলন বা গ্রাস করেন তিনিই কালী। তাই তাঁর রূপও ভয়ঙ্করী। তাঁর করাল মুখমণ্ডলে ঘোরদংষ্ট্রা সংহারকারিণী শক্তির প্রকাশ। অপরদিকে তাঁর পীযুষপূর্ণ পয়োধরযুগল (স্তনযুগল) মাতৃত্বময়ী মোক্ষদায়িকা রূপের প্রকাশ। অর্থাৎ তিনি একদিকে দুষ্টের তমোময়ী নিয়তি ও অন্যদিকে শরণাগতের পালনকারিণী মা।

বহির্গত জিহ্বা

দেবী লাল জিহ্বাকে সাদা দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে আছেন। এই রূপের তাৎপর্য অতি গূঢ়। লাল জিহ্বা রজঃগুণের প্রতীক। আর সাদা দাঁত হল সত্ত্বগুণের প্রতীক। লাল জিভকে সাদা দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে রাখার অর্থ হল, সত্ত্বগুণ (জীবের মহৎ গুণাবলী) দ্বারা রজঃগুণকে (অহংকার,হিংসা ইত্যাদি) গুলিকে দমন করা। অর্থাৎ এইরূপের দ্বারা তিনি সমগ্র জগৎকে আত্মনিয়ন্ত্রণের শিক্ষা দিয়েছেন।

ত্রিনয়নী

দেবীর তিন চোখ তিনটি আলোর প্রতীক, চন্দ্র, সূর্য ও অগ্নি। অজ্ঞান অন্ধকার বিধ্বংসী তিন শক্তির প্রকাশ। তিন চোখে দেবী অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতকে যুগপৎ প্রত্যক্ষ করেন।

উন্মুক্ত কেশরাশি

কেশ বা চুল হল মায়াশক্তির প্রতীক। তিনিই স্বয়ং মহামায়া। আর তাঁর উন্মুক্ত কেশজাল হল সেই মায়াপাশ। তিনি মায়ার বন্ধনমুক্ত। কোমরের নীচ পর্যন্ত তাঁর কেশ উন্মুক্ত, যা দিয়ে তাঁর পশ্চাৎভাগ আবৃত। অর্থাৎ তাঁকে কেউ অতিক্রম করতে পারে না।

দেবী চতুর্ভুজা

দেবীর চার হাত উপর ও নীচে উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত। অর্থাৎ তিনি সর্বত্র বিরাজিতা। আর তাঁর চার হাত সর্বক্ষণ ত্রিয়াশীল। তিনি চতুর্ভুজে খড়্গ-মুণ্ড-বরাভয়ধারিণী। এই বৈপরীত্যের ব্যাখ্যা হল দেবীই সৃষ্টি-স্থিতি বিনাশকারিণী। সবই তাঁর হাতের খেলামাত্র। তাঁর হাতের খড়্গ প্রলয়কালে ত্রিভুবনবিনাশী মহাস্ত্র। এ আসলে মানুষের অহং ছিন্ন করার প্রতীক। সেই খড়্গের আঁকা চোখ প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের প্রতীক। সাধকের মুক্তির পূর্বে এই জ্ঞানরূপ অসির দ্বারা তিনি মুক্তিকামীর অষ্টপাশ ছেদন করেন। তাই তাঁর এক হাতে নরমুণ্ড। মুণ্ডই আদিবর্ণ ওঙ্কার, এই ওঙ্কারেই জগতের উৎপত্তি, স্থিতি ও বিলয়। অপরদিকে অভয় মুদ্রায় তিনি শরণাগত ভক্তকে সর্বদা রক্ষা করেন। আর বর মুদ্রায় তিনি ধর্ম-অর্থ-কাম-মোক্ষ-ভক্তি প্রদান করেন।

দেবীর মুণ্ডমালা

যত শুনি কর্ণপুটে,
সবই মায়ের মন্ত্র বটে।
কালী পঞ্চাশত বর্ণময়ী,
বর্ণে বর্ণে বিরাজ করে।

মা কালীর গলায় ৫০টি নরমুণ্ডের মালা শোভা পায়। এই পঞ্চাশটি মুণ্ড আসলে পঞ্চাশটি বর্ণের প্রতীক। চোদ্দটি স্বরবর্ণ এবং ছত্রিশটি ব্যঞ্জনবর্ণ। অর্থাৎ তিনি সর্ববিদ্যাময়ী ও সর্বমন্ত্রময়ী। অক্ষর ব্রহ্ম থেকে আদিধ্বণি প্রণব বা ওঙ্কার উত্থিত হয়েছিল, তার থেকে এই পঞ্চাশ বর্ণের উৎপত্তি, তা থেকেই জগতের বিস্তার।

কালী কেন দীগম্বরী

কাল থেকে কালীর উৎপত্তি ধরলে, তা আসলে সময়ের সীমানা পেরনো এক ধারণা। সেই অনন্তকে কোনও জাগতিক বস্ত্রের আবরণে আবৃত করা যায় না। দেবী তাই নগ্নিকা বা দীগম্বরী। সর্বব্যাপী ব্রহ্মে কোন আবরণ নেই। দশদিকই তাঁর বস্ত্র, তিনি লজ্জা-ঘৃণা-ভয় রহিত। তাই তিনি দিগম্বরী। তাঁর সর্বাঙ্গে রক্তের ধারা। রক্তের লাল রঙ রজঃগুণের প্রতীক। অর্থাৎ এই রক্তধারা কর্মময়তার প্রতীক। দেবীর কানে দুটি বালকের শব। যার অর্থ নির্ব্বিকার, নিষ্কাম এবং শিশুভাবাপন্ন সাধক মায়ের অতি প্রিয় এবং দয়াশীল।

কোমরে কাটা হাত বা হস্তমেখলা

কালী সৃষ্টি স্থিতি বিনাশিনী। তাঁর কটিদেশ আচ্ছাদিত কাটা হাতে। হাত হল কর্মের প্রতীক। এখানে কাটা হাত তাঁর অলঙ্কার। অর্থাৎ তিনিই সকল কর্মের ধাত্রী ও ফলপ্রদাত্রী। অর্থাৎ যখন লয় হয় বা মানুষের মৃত্যু হয় তখন সকল জীবের কর্মফল তাঁকেই আশ্রয় করে পরবর্তী কল্পের প্রতিক্ষায় থাকে।

শিবের বক্ষে চরণস্থাপন

দেবী এক পা শবরূপী শিবের বক্ষে স্থাপন করে দাঁড়িয়ে আছেন। এই সামনে এগিয়ে রাথা চরণ গতির প্রতীক। তিনি পশ্চাতের পদে অতীতকে এবং সম্মুখের পদে ভবিষ্যতকে অধিকার করে গতিশীলা। আবার শিব পরমপুরুষ, কালী পরমাপ্রকৃতি। শিব চৈতন্যশক্তি, কালী ক্রিয়াশক্তি। শিব স্থির, কালী গতিময়ী। গতি ঠিক রাখতে হলে স্থিরের উপর তার প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। আরেক মতে তিনি মহাকালকে নিজের পদতলে ধারণ করে সৃষ্টি-স্থিতির ভারসাম্য রক্ষা করছেন। তাই তিনিই সদাশিব, মহাপ্রেত রূপে পদ্মাসনে আরূঢ়া। এই কল্পিত রূপেই শক্তির দ্বিবিধ রূপের সমাহার। একদিকে তা বিনাশী, অন্যদিকে তা সৃষ্টিরও প্রতীক বটে।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

গাজায় হামলা চালাতে গিয়ে বোলতার আক্রমণে কুপোকাত ১০ ইজরায়েলি সেনা

মৃত্যু হল শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপনকারী স্লোম্যানের

চতুর্থ দফায় সবচেয়ে ধনী প্রার্থী ৫,৭০৫ কোটির মালিক, গরিব প্রার্থীর হাতে ৭ টাকা

কী কাণ্ড! বড়শিতে একটি মাছ ধরেই কোটিপতি ১৯ বছরের তরুণ

মৃত ছেলেকে ফেলে রেখেই বাবা-মাকে নিয়ে উড়ল পাক বিমান

প্রয়াত পদ্মশ্রীপ্রাপ্ত প্রখ্যাত পঞ্জাবি কবি সুরজিৎ পাতর, শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর