নিজস্ব প্রতিনিধি, রাজশাহী: সদ্য সমাপ্ত রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে প্রথমবার দাঁড়িয়েই বাজিমাত করলেন তৃতীয় লিঙ্গের সুলতানা আহমেদ ওরফে সাগরিকা। মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসনে দাঁড়িয়ে ভোটে জিতে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। জেতার পরেই শুভেচ্ছার বন্যায় ভাসছেন দেশের সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে তৃতীয় লিঙ্গ থেকে প্রথমবার কাউন্সিলর হওয়া সাগরিকা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আসা অজস্র ফোনে কথা বলতে বলতে হাঁফিয়ে উঠেছেন।
বুধবারই রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর পদের জন্য ভোট নেওয়া হয়েছিল। এবারের ভোটে তৃতীয় লিঙ্গের মাত্র ছয়জন ভোটার ছিলেন। তাদের মধ্যে সুলতানা আহমেদ সাগরিকা দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন সাত নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের লড়াইয়ে। কিন্তু প্রচারে নেমেই বুঝতে পেরেছিলেন প্রথা ভাঙতে যাওয়ার দুঃসাহস দেখানোর পরিণাম কী হতে পারে। ভোটে লড়াইয়ের ঘোষণার পরেই প্রতিপক্ষদের ব্যক্তিগত কুৎসা আর আক্রমণের শিকার হতে হয়েছিল সাগরিকাকে। কিন্তু তাতে দমেননি ছোট থেকে লড়াই করতে করতে বড় হওয়া সাগরিকা। হিজড়ে বলে ছোট বেলায় স্কুলে অনেক টিকা-টিপ্পনি সহ্য করতে হয়েছিল। নবম শ্রেণিতে ওঠার পর স্কুল ছাড়তে হয়েছিল। পরে পরিবার-পরিজন আর বাড়িও ছাড়তে হয়েছিল।
বুধবার কাউন্সিলর পদে জয়ের পর থেকে অভিনন্দনের বন্যায় ভাসছেন সাগরিকা। এক ফাঁকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বললেন, ‘ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে এত এত ফোন এসেছে যে কথা বলতে বলতে গলা বসে গিয়েছে। বিভিন্ন দফতর থেকে ফোন এসেছে। সবার কাছ থেকে প্রশংসা পাচ্ছি। আগে থেকেই সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে আসছি। এই জয় কাজের খিদেটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।’ সুলতানার নির্বাচিত হওয়াকে একটা মাইলফলক হিসেবে দেখছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী জেলার সভাপতি আহমদ সফি উদ্দিন। তাঁর কথায়, ‘সুলতানা নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে এসেছেন। তিনি সাধারণ মানুষের মনের কষ্ট বোঝেন। সে জন্য তিনি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছেন। সবচেয়ে বড় কথা, মানুষ তাঁদের বিশ্বাস করেছে এবং নিজেদের মানুষ মনে করেছে। এটা বাংলাদেশের জন্য মাইলফলক।’