নিজস্ব প্রতিনিধি: সত্যি, এর থেকে করুণ এবং বেদনাদায়ক ঘটনা বোধ আর কিছু হতেই পারে না। ক্ষুধার জ্বালায় কিনা মাকে বিক্রি করতে হচ্ছে সন্তানদের! আর তাতেও চাহিদা না মেটায় বেচে দিতে হল কিডনিও। এমন মর্মান্তিক ঘটনারই চিত্র ফুটে উঠেছে আফগানিস্তানের বদগিস প্রদেশে। ‘সত্য সেলুকাস কী বিচিত্র এই দেশ’। যেখানে ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে মাকে বিক্রি করে দিতে হয় তাঁর সন্তানদের। ঘটনা ইতি এখানেই হয়নি, অভাবের তাড়নায় জোড়া সন্তানের পর নিজের কিডনিও বেচে ফেলেছেন দেলরম রহমতি নামে এক মহিলা।
তিনি জানিয়েছেন, ‘আমি অভাবের জন্য আমার দুই মেয়েকে বিক্রি করে দিয়েছি যেটা সত্যিই খুব যন্ত্রণার ছিল। ওদের একজনের বয়স ছিল ৮, আর একজনের বয়স ছিল মাত্র ৬ বছর। তাতেও সমস্যা না মেটাতে পেরে আমি আমার একটা কিডনি বেচতেও বাধ্য হয়েছি’। দেশের চলছে শীতের প্রবল দাপট এবং খরা। করোনার সংক্রমণ তো রয়েছেই। যার জেরে আফগানিস্তানে অর্থনৈতিক দিকে অভাব-অনটনটা যেন ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে। যা রহমতি এবং তাঁর পরিবারের বেঁচে থাকাকেই সম্পূর্ণভাবে দায় করে তুলেছে।
ব্রিটিশ সংবাদপত্র ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর প্রতিবেদনে জানা গিয়েছে, রহমতি তাঁর এক একটি মেয়েকে বিক্রি করে ভারতীয় মুদ্রায় সাড়ে ৭০ হাজার টাকা করে পেয়েছিলেন। কিন্তু তাতে তাঁর কোনও লাভ হয়নি। কারণ, ঘরে রয়েছে দুই অসুস্থ ছেলে। তাঁদের মধ্যে একজন মানসিক রোগী। আর অন্যজন পক্ষাঘাতে ভুগছেন। তাই দুই পুত্রের চিকিৎসা করতেই প্রায় বেশিরভাগ টাকা শেষ হয়ে গিয়েছে রহমতির। সেই সঙ্গে তাঁর স্বামীরও শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো নেই। তাঁর জন্যও ওষুধ কিনতে হয়। তাই কন্যাদের বিক্রি করা টাকায় খুব বেশি দিন চলেনি। বাধ্য হয়ে হাঁটতে হয়েছে কিডনি বিক্রি করার রাস্তায়। যার ক্ষত এখনও শুকায়নি বলে জানিয়েছে রহমতি। পাশাপাশি, তাঁর চলা-ফেরা করতে এবং শ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। তবে তিনি কোনওমতেই সন্তানদের ও স্বামীর কষ্ট দেখতে পারবেন না। প্রয়োজনে প্রাণও উৎসর্গ করবেন।
২০২১ সালের অগাস্ট মাসে তালিবানরা যোগ দেওয়ার পর থেকেই আফগানিস্তানের অর্থনীতিতে ধস নেমেছে। তার ওপর এই অতিমারি এবং খরার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছে অসংখ্য মানুষ।