নিজস্ব প্রতিনিধি: লখিমপুরের ঘটনায় গুরুতর আঘাত পাওয়ার পর থেকেই বাবা এবং পরিবারের বাকি সদস্যদের বারবার খুঁজেছিলেন বছর ১৯-এর লাভপ্রীত। রবিবার সকালে বাড়ি থেকে বেরনোর সময়ে বলে গিয়েছিলেন, ‘ভালো কাজ করতে যাচ্ছি। কালো পতাকা হাতে নিয়ে কৃষক আন্দোলনে যোগ দিতে যাচ্ছি।’ কে জানত, ১৯ বছরের তরতাজা এই যুবক আর কোনওদিন বাড়িই ফিরবেন না। রবিবার রাতে শেষবারের মতো ছেলের গলা শুনেছিলেন লাভপ্রীতের বাবা। কেমন আছে জানতে চাওয়ায় গুরুতর আহত লাভপ্রীত কাতর সুরে শুধু বাবাকে নিজের কাছে ডেকেছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমি ঠিক আছি। তোমরা শুধু তাড়াতাড়ি চলে এস।’ কিন্তু ঘণ্টা দুয়েক ধরে ছেলের খোঁজ করার পরে যতক্ষণে লাভপ্রীতের পরিবার হাসপাতালে পৌঁছেছিলেন ততক্ষণে সব শেষ। সদ্য যৌবনে পা রাখা ছেলেকে হারিয়ে লাভপ্রীতের বাবার এখন একটাই আফসোস, যদি ঠিক সময়ে পৌছতে পারতেন তাহলে হয়তো ছেলের সঙ্গে শেষ দেখাটা অন্তত হত।
একই অবস্থা লাভপ্রীতের মা এবং দুই দিদির। ছেলের শোকে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন মৃত ওই যুবকের মা। দিদিরা জানালেন, রবিবার বাড়ি থেকে বেরনোর সময়ে লাভপ্রীত বলে গিয়েছিলেন, ভালো কাজ করতে যাচ্ছেন। কৃষকরা যাতে নিজের অধিকার পান তাঁর জন্য লড়াই করছেন তিনি। কিন্তু সেই লড়াইয়ের এমন পরিণতির কথা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি লাভপ্রীতের পরিবার। উল্লেখ্য, লখিমপুরের খেরিতে যে চারজন কৃষককে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে লাভপ্রীত তাঁদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। বাকি মৃত কৃষক পরিবারের মতো লাভপ্রীতের পরিবারও এই নৃশংস ঘটনার পূর্ণ তদন্ত দাবি করে ছেলের দেহ সৎকার না করে আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন। শেষমেশ মঙ্গলবার বিকেল ৩ টের সময়ে লাভপ্রীতের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই লাভপ্রীতের পরিবার, পরিজনরা তাঁর মৃতদেহ নিয়েই ধর্নায় বসেন। তাঁদের দাবি ছিল, যতক্ষণ পর্যন্ত না পুলিশ তাঁদের হাতে মন্ত্রী অজয় মিশ্রর ছেলে আশিস মিশ্রর নামে লিখিত অভিযোগের কপি এবং অটোপ্সি রিপোর্টের কপি তুলে দিচ্ছে ততক্ষণ তাঁরা দেহ সৎকার করবে না। শেষমেষ পুলিশ তাঁদের অনুরোধ করলে তাঁরা তাঁদের অবস্থান থেকে সরে আসেন এবং এদিন বিকেলে লাভপ্রীতের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, মৃতদের পোস্টমর্টেম রিপোর্টে জানা গিয়েছে ওই ৮ জনেরই মৃত্যু মস্তিস্কে আঘাত লেগে রক্তক্ষরণের কারণে হয়েছে।