সুদীপ্ত ভট্টাচার্য: ১লা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে বারপুজো উপলক্ষ্যে সকাল থেকেই লাল-হলুদ তাঁবুতে ভিড় জমিয়েছিলেন ওঁরা। ওঁরা মানে ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ফুটবলার নাজিমুল হক, সন্দীপ নন্দী দেবজিত ঘোষরা।
বারপুজো উপলক্ষ্যে ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে এসে এই তিন প্রাক্তন ফুটবলার যেন ফিরে গেলেন তাঁদের খেলোয়াড় জীবনের সোনালী অধ্যায়ে। ইস্টবেঙ্গলের আশিয়ান জয়ী দলের অন্যতম সদস্য সন্দীপ নন্দী। ক্লাবের মাঠের এক কোণে দাঁড়িয়ে সন্দীপ তখন অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছেন ক্লাবের মাঠের দিকে। হয়তো ভাবছিলেন এই মাঠেই ফেলে আসা তাঁর পুরনো দিনগুলোর কথা।
নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রাক্তন লাল-হলুদ গোলরক্ষকের কাছে যখন জানতে চাইলাম কি রকম লাগছে আজকের এই দিনটিতে ক্লাবে এসে। প্রশ্নটা শুনেই সন্দীপ যেন ফিরে গেলেন তাঁর খেলোয়াড় জীবনের স্মৃতিমধুর অধ্যায়ে। বললেন, আজকের এই দিনটাতে ক্লাবে আসতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে। আমি সেইজন্য মাঠের দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম আর ভাবছিলাম ফেলে আসা সেই দিনগুলোর কথা।
এরপর ইস্টবেঙ্গল দলের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন করতেই প্রাক্তন লাল-হলুদ গোলক্ষক বললেন, গত মরশুমে খারাপ গিয়েছে। আশাকরি এবার ঘুরে দাঁড়াবে দল।
শুধু সন্দীপই নন, ক্লাবের আর্কাইভে তখন পঞ্চপান্ডবদের মূর্তির সামনে আনমনা হয়ে দাঁড়িয়ে আর এক প্রাক্তন নাজিমুল হক। নাজিমুল হককে লাল-হলুদ জনতা হয়তো কোনওদিনই ভুলতে পারবেন না ১৯৯৭-র সেই ঐতিহাসিক ডার্বি ম্যাচের জন্য। সেই ম্যাচেই চির প্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগানের বিপক্ষে যাঁর পা থেকেই এসেছিল ইস্টবেঙ্গলের প্রথম গোলটা। নববর্ষের দিন ক্লাবের আর্কাইভ সপরিবারে ঘুরে দেখতে ব্যস্ত নাজিমুল।
জানতে চাইলাম ক্লাবের তৈরি আর্কাইভে এই প্রথম নাকি। নাজিমুল বললেন হ্যাঁ এই প্রথম। তাইতো মন দিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখছি। আর এমনটা দিনে ক্লাবে এসে কেমন লাগছে। কম কথার মানুষ নাজিমুল শুধু বললেন, আমি ইস্টবেঙ্গলকে কোনওদিন ভুলিনি আর ভুলবও না। এই ক্লাবে এলে আমি ফিরে পাই আমার লাল-হলুদ জার্সি গায়ে খেলার সেই স্মরণীয় দিনগুলোকে। আপন মনে ছবির গায়ে হাত হাত বোলাতে বোলাতে নাজিমুল তখন যেন এক অন্য জগতে প্রবেশ করেছেন।
এরপরই সাক্ষাৎ পাওয়া গেল বিনু জর্জের। বিনু জর্জ মানে লাল-হলুদ জুনিয়র দলের কোচ। বিনু ক্লাবের তাঁবুর সামনে একা একা দাঁড়িয়ে দেখছেন ময়দানের বারপুজো নিয়ে ক্লাবের কর্তা থেকে শুরু করে খেলোয়াড় সবাইকার মাতামাতি। আর হয়তো মনে মনে ভাবছিলেন ফুটবল নিয়ে মাতামাতি হলেও বারপুজোকে কেন্দ্র করে এইরকম মাতামাতি, তা বুঝি এই কলাকাতা বলেই সম্ভব। কাছে যেতেই বাংলা ভাষায় বিনু জর্জ বললেন শুভ নববর্ষ। এ কি আপনি বাংলা জানেন। প্রশ্নটা শুনে মুচকি হাসলেন তিনি। তারপরই ফুটবল নিয়ে নানা কথার শেষে বিনু জর্জের কাছে জানতে চেয়েছিলাম বারপুজো কেমন লাগলো। সুদূর কেরল থেকে আসা এই স্বল্পভাষী মানুষটি তখন হাতটি ধরে বলতে লাগলেন, দাদা দারুণ অনুভূতি। আমি এই দিনটির কথা জীবনে কোনওদিন ভুলতে পারবো না পৃথিবীর যেখানেই থাকি না কেন।
লাল-হলুদের এই পরিবেশ দেখে মনে হল যতই ময়দানে কর্পোরেটের ছোঁয়া লাগুক, যতই ক্লাবগুলোর নামের আগে কোনও কোম্পানির নাম যুক্ত হউক না কেন বারপুজোর দিন ময়দান যেন ফিরে পায় তার পুরনো দিনগুলিকে। ফিরে পায় অতীত ঐতিহ্য আর গরিমাকেও।