এই মুহূর্তে




সাগরের জল তেতে বিপদ বাড়াচ্ছে বাংলার! চিন্তায় বিশেষজ্ঞরা




নিজস্ব প্রতিনিধি: বিশ্ব উষ্ণায়ন শব্দটার সঙ্গে এখন অনেকেই সুপরিচিত। কিন্তু সচেতন কতজন? আর এই অসচেতনতার জেরেই ক্রমশ বঙ্গোপসাগরের জলের উষ্ণতা বেড়ে চলেছে। যার নিট রেজাল্ট ঘন ঘন শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়, নিম্নচাপ ও ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হওয়া বঙ্গোপসাগরের বুকে। সেই সব ঘূর্ণীঝড়, নিম্নচাপ আর ঘূর্ণাবর্তই এখন ক্রমশ বিপদ বাড়াচ্ছে বাংলার। অস্বীকার করার উপায় নেই গত এক দেড় দশকে বাংলার আবহাওয়ায় আমূল পরিবর্তন এসেছে যার মূলে বঙ্গোপসাগরের জলের উষ্ণতা বৃদ্ধির কারন কাজ করে চলেছে। নানা ঋতুর স্থায়িত্বকাল তো কমেইছে, এমনকি বেশ কিছু ঋতুর উপস্থিতি এখন ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। নজরকাড়া ভাবে সব থেকে বেশি বদল এসেছে বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে। এখন বর্ষাকাল প্রায় ৩-৪ মাস স্থায়ী হচ্ছে। সেই সঙ্গে অল্প সময়ে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। যা কার্যত বাংলার বুকে বার বার বন্যার প্রকোপ ডেকে আনছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে বজ্রপাতের দাপটও যা প্রতি বছর রাজ্যের অর্ধ শতকেরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে।

বাংলার এই আবহাওয়ার বদলে যাওয়ায় ঘটনাই এখন চিন্তা বাড়াচ্ছে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের ধারনা যে ভাবে বাংলার বুকে শক্তিশালী সব ঘূর্ণীঝড় আছড়ে পড়েছে, নিম্নচাপ হানা দিচ্ছে, ঘূর্ণাবর্ত ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত ঘটাচ্ছে তা আগামী দিনে বাংলার পক্ষে বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। তথ্য পরিসংখ্যান তুলে ধরে তাঁরা জানিয়েছেন, গত ১৪ বছরের মধ্যে এই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকা সব থেকে বেশি বৃষ্টির মুখ দেখেছে। ২০০৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর কলকাতায় ১৭৪.৪মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। সেখানে রবিবার মধ্যরাত থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৪২মিলিমিটার। এই ৮ ঘন্টার মধ্যে বৃহত্তর কলকাতার ১১টি জায়গায় ১০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে। কলকাতার আশেপাশে থাকা জেলাগুলির ছবিও কমবেশি এক। আর এই ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের জেরেই বৃহত্তর কলকাতার একটা বড় অংশই এখন জলবন্দী। এই ঘটনা যে শুধু সোমবার বা এদিন মঙ্গলবারের গল্প নয়। অল্প সময়ে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি ঘটে যাওয়া এখন কার্যত বাংলার আবহাওয়ায় নয়া ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে যা আমজনতার দুর্ভোগ বাড়িয়েছে বই কমায়নি।

বিশেষজ্ঞদের ভাবাচ্ছে কলকাতা সহ বাংলার বুকে বজ্রপাতের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিও। বজ্রপাতের জেরে বাংলার বুকে মৃত্যুর ঘটনা আগেও ঘটতো। কিন্তু আগে সারা বছরে তা ২০’র বেশি হত না। কিন্তু এখন সেই সংখ্যায় কার্যত গড়ে প্রতি বছর ৭০-৮০ হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে প্রায় চারগুণ হয়ে গিয়েছে। রবিবার রাতেও ঘন ঘন বাজ পড়ার ঘটনা ঘটেছে বৃহত্তর কলকাতা ও আশেপাশের জেলায়। সৌভাগ্যবশ্বত মাঝ রাতের পরে সেই সব ঘটনা ঘটায় কেউ মারা যাননি। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা রীতিমত উদ্বিগ্ন এটা ভাবেই যে ওই বজ্রপাতের ঘটনা যদি দিনের স্বাভাবিক সময় ঘটতো তাহলে নাজানি কত মানুষের জীবন যেত। আর বজ্রপাতের ঘটনা বেড়ে যাওয়া, অল্প সময়ে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হওয়া, একের পর এক ঋতুর উধাও হয়ে যাওয়া, বঙ্গোপসাগরের বুকে ঘন ঘন ঘূর্ণীঝড়-নিম্নচাপ-ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হওয়ার জন্য তাঁরা সাগরের জলের উষ্ণতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মানুষের কার্যকারিতার জেরে বাতাসের দূষণ বা অতিরিক্ত কার্বন কণার উপস্থিতিকেও দায়ী করছেন।

সোমবার রাত থেকেই বৃষ্টি কমেছে। তবে দুর্যোগ এখনও পুরোপুরি কেটে যায়নি। বৃহস্পতিবারের আগে বাংলায় আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। কিন্তু আবহাওয়াবিদরা জানিয়ে দিয়েছেন, আরও তিনটি নিম্নচাপ তৈরি হচ্ছে বঙ্গোপসাগরের বুকে। যার ফলে আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে পারে বৃষ্টি। এভাবে যদি বৃষ্টি ঝরে চলে তাহলে কলকাতা সহ বাংলা যে ক্রমশই জলবন্দি হয়ে পড়বে পুজোর আগে সে নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এমনিতেই বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে সাগরের জলের উচ্চতা বাড়ছে। তার জেরে বাংলার দক্ষিণতম প্রান্তে থাকা একের পর এক দ্বীপ কার্যত ভাঙনের মুখে পড়ে তলিয়া যাচ্ছে। বিপদ বাড়ছে সুন্দরবনেরও। ম্যানগ্রোভ অরণ্য ক্রমশই উত্তরে এগিয়ে আসছে। গঙ্গা সহ দুই ২৪ পরগনা ও দুই মেদিনীপুরের সব নদীতেই লবণের ভাগ বাড়ছে। তার রেশ সরাসরি পড়ছে মাটিতে। সেখানেও নুনের ভাগ বেড়ে চাষের ক্ষতিসাধন করছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানুষের শরীরেও তার সরাসরি প্রভাব পড়ছে। কিন্তু এসব ঘটনা ঘটে গেলেও আমরা কেউই সচেতন নই। তাই কার্বন নিঃসরণ নিয়ে আমরা নিত্যদিন কেউই ভাবি না। কিন্তু পরোক্ষে সেটাই বিপদ বাড়াচ্ছে আমাদের। বাতাস আর সাগরের জল তেতে বিপদ বাড়াচ্ছে বাংলারও।




Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

রাজ্যে দুর্গাপুজোয় মদ বিক্রিতে আবগারি দফতরের আয় বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণ

লক্ষ্মী পুজোয় শব্দ বাজি ফাটানো নিষিদ্ধ বলে প্রচার শুরু পুলিশের

শিলিগুড়িতে চিকিৎসক ও ঔষধ না পেয়ে ভাঙচুর সুপার অফিস,আটক ৩

ঝাড়গ্রামের ডুলুং নদী থেকে ছাত্রের মৃতদেহ উদ্ধার, এলাকায় চাঞ্চল্য

সাবধান আর মাত্র ২ ঘণ্টা, ধেয়ে আসছে ব্যাপক বৃষ্টি

ধর্ষণের ঘটনায় আদালতে নাবালিকার জবানবন্দি দেওয়াতে গিয়ে বিজেপির বিক্ষোভের মুখে পুলিশ

Advertisement

এক ঝলকে
Advertisement




জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর