নিজস্ব প্রতিনিধি: তিস্তায় নেমা আসা হড়পা বানের(Teesta Flash Flood) ঘটনায় এখনও পর্যন্ত বাংলার(Bengal) আর সিকিম(Sikkim) মিলিয়ে মোট ৪০ জনের দেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। যদিও সরকারি ভাবে নিখোঁজের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। বাংলারও প্রায় ৫০ জন পর্যটকের কোনও সন্ধান মিলছে না। সিকিমের নানা প্রান্তে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার পর্যটক আটকে আছেন। ঠিক করা হয়েছিল এদের এদিন থেকেই দুই রাজ্যের এবং সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার গিয়ে উদ্ধার করে আনার কাজ শুরু করবে। কিন্তু সিকিমের বুকে এখনও বৃষ্টি হওয়ায় সেই উদ্ধারকাজ শুরুই করা যায়নি। সেখানকার সরকারি তথ্য বলছে, চুংথাং, লাচুং এবং লাচেন এলাকায় আটকে পড়া ১৪৭১ জন পর্যটককে(Tourists) দফায় দফায় হেলিকপ্টারে উদ্ধার করে মঙ্গনে এনে সেখান থেকে গ্যাংটকে ফেরানোর কথা থাকলেও খারাপ আবহাওয়ার কারণে তা শুরুই করা যায়নি। তবে ভারতীয় সেনার ত্রিশক্তি কোর যথাসম্ভব চেষ্টা করছে তাঁদের দ্রুত গ্যাংটকে নামিয়ে আনতে।
তবে এদিন সিকিম সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, উত্তর সিকিমের লাচুং, লাচেনে যে সব পর্যটকেরা রয়েছেন, তাঁরা সুরক্ষিত রয়েছেন। আবহাওয়া ঠিক থাকলে শনি বা রবিবার থেকে তাঁদের উদ্ধারকাজ শুরু করা হবে। জখম ও বয়স্কদের অগ্রাধিকার দিয়ে উদ্ধার করা শুরু হবে। সেই সঙ্গে সিকিম সরকার অনুরোধ করেছে হোটেল, হোম-স্টে যেখানে সম্ভব হবে পর্যটকদের বিনা খরচে রাখা এবং পরিষেবা দেওয়ার। উত্তর সিকিম ছাড়াও সিকিমের নানা প্রান্তে এখনও অন্তত আড়াই হাজারের ওপরে পর্যটক আটকে রয়েছেন। বেসরকারি হিসেবে, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা আটকে থাকা পর্যটকের সংখ্যা অনেকটাই বেশি। যে সব পর্যটকেরা আটকে পড়েছেন তাঁরা বাড়ি না ফেরায় উৎকন্ঠায় রয়েছে বহু পরিবার। লাচেন এবং লাচুংয়ে যাঁরা আটকে পড়েছেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সেনার তরফে একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দেওয়া হয়েছে। সেটি হল – ৯৯০৬২০০২০৫। যাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি, তাঁদের ছবি, মোবাইল নম্বর সিকিমের আধিকারিকদের জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
তবে এখন প্রশাসনের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ— উত্তর সিকিমে যাঁরা আটকে রয়েছেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনা। কারণ, উত্তর সিকিম থেকে তাঁদের প্রথমে পৌঁছতে হবে গ্যাংটকে। সেখান থেকে তাঁরা কালিম্পং হয়ে নামতে পারবেন। কিন্তু তিস্তার হড়পা বানের তাণ্ডবে গ্যাংটক থেকে উত্তর সিকিমের যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। সেখানে রাস্তা এখন জলের তলায়। উড়ে গিয়েছে সেতু। অন্য দিকে, বাকি রাস্তাগুলিও যাতায়াতের অযোগ্য। গ্যাংটকের প্রধান সড়কেই জমে রয়েছে কয়েক ফুটের পলি। যার জেরে যান চলাচল কার্যত বন্ধ। সে ক্ষেত্রে অনেকটা ঘুরে ছোট ছোট পকেট রুট ধরে সিংথাম, ডুঙ্গা বস্তি, রংপো হয়ে কালিম্পঙে ঢুকছেন অনেকে। কালিম্পঙের রাস্তাতেও ছোটখাটো ধস হচ্ছে। সেগুলো দ্রুত সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হচ্ছে। বহু গাড়ি সিকিম থেকে কালিম্পং হয়ে নেমেছে। দার্জিলিঙের সিংলা বাজার এলাকা পর্যন্ত রাস্তায় কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু সিকিমের দিকে কী পরিস্থিতি, তা জানা নেই। তবে বেশ কিছু গাড়ি সিংলা বাজার হয়ে নামছে। তাতে বোঝা যাচ্ছে, রাস্তা ঠিক রয়েছে।
এদিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পর্যটকদের সিকিমে যেতে একরকমের নিষেধাজ্ঞা জারি করে দিয়েছে সেখানকার রাজ্যে সরকার। কার্যত পর্যটন অর্থনীতির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা সিকিমের বাসিন্দাদের কাছে এই সিদ্ধান্ত এক বড়সড় ধাক্কা হয়ে নেমে এসেছে। ধাক্কা লেগেছে এ রাজ্যের পর্যটন ব্যবসায়ী ও সংস্থাগুলিতেও। সিকিমের পর্যটন দফতরের তরফে জারি করা নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, এই মুহূর্তে যাঁরা সিকিমে বেড়াতে আসার পরিকল্পনা করছেন, তাঁরা বাতিল করুন। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। একটু গুছিয়ে নেওয়ার পরই ফের পর্যটকদের সিকিমে আসার আহ্বান জানানো হবে। একই সঙ্গে ছাংগু ও নাথুলায় যাওয়ার ক্ষেত্রেও অনির্দিষ্টকালের জন্য জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। সিকিম সরকারের এই বিজ্ঞপ্তিতে মাথায় হাত পড়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের। তাঁদের বক্তব্য, পুজোয় এবার প্রচুর বুকিং ছিল। কিন্তু সরকারের এই বিজ্ঞপ্তির পর বুকিং বাতিল আর ঠেকানো যাবে না।