নিজস্ব প্রতিনিধি: বাড়িওয়ালাকে জানিয়েছিলেন পরিবার সহ কয়েকদিনের জন্য বাড়ি যাবেন। সেই মতো বুধবার রাতে তাঁদের সেখানে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাঁরা সেখানে যানকি। রাতভর তাই বাড়ি থেকে এসেছিল ফোন। কিন্তু তা কেউ তোলেনি। সকাল হতেই বাড়ি থেকে তাই লোক এসেছিল কী হয়েছে তা দেখার জন্য। কিন্তু ভাড়া বাড়িতে হাজার ডেকেও কোনও সাড়া না মেলায় শেষ দরজা ভাঙেন বাড়ির লোকেরা। আর তখনই দেখেন হাতে হেডফোনের তার বাঁধা অবস্থায় ঝুলছেন কলেজের অধ্যাপক। ঘরের ভিতরে পড়ে রয়েছে স্ত্রী ও পুত্রের রক্তাক্ত দেহ। বৃহস্পতিবার সকালের এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরবঙ্গের কোচবিহার শহরের গুঞ্জবাড়ি এলাকায়। মৃত অধ্যাপক উৎপল বর্মন কোচবিহার এ বি এন শীল কলেজের স্থায়ী শিক্ষক। তবে তিনি স্ত্রী-পুত্রকে খুন করে আত্মঘাতী হয়েছেন নাকি ঘটনাটি খুনের তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
উৎপল বর্মনের বাড়ি কোচবিহার জেলারই গোঁসানিমারিতে। কিন্তু কোচবিহার শহরের গুঞ্জবাড়ি এলাকায় স্ত্রী অঞ্জলি বর্মন ও ৮ বছরের ছেলে অদ্রীশ বর্মনকে সঙ্গে নিয়েই ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। মঙ্গলবার ভাড়া বাড়ির মালিককে উৎপলবাবু জানিয়েছিলেন তিনি দিন কয়েকের জন্য পরিবারকে নিয়ে দেশের বাড়িতে যাচ্ছেন। বুধবার বিকালেই তাঁদের সেখানে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাঁরা তা না যাওয়ায় গ্রামের বাড়ি থেকে একাধিকবার বুধবার রাতেই ফোন করে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় তাঁদের সঙ্গে। কিন্তু ফোন কেউ না ধরায় সেখানে চিন্তা শুরু হয়। তার জেরেই এদিন সকালে গোঁসানিমারি থেকে উৎপলবাবুর এক আত্মীয় কোচবিহার শহরের গুঞ্জাবাড়ি এলাকার ভাড়া বাড়িতে এসে ডাকাডাকি শুরু করেন। কিন্তু অনেক ডাকার পরেও দরজা না খোলায় বাড়ির মালিককে সঙ্গে নিয়ে এসে তাঁরা বাড়ির দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। আর তখনই সেখানে উৎপলবাবু সহ তাঁর স্ত্রী ও পুত্রের দেহ দেখেন তাঁরা। সঙ্গে ১২ পাতার সুইসাইড নোট।
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, উৎপলবাবু একটি অনলাইন অ্যাপসের মাধ্যমে ঋন নিয়েছিলেন। কিন্তু সুদে আসলে তা অনেক বেড়ে যাওয়ায় আর তা শোধ করতে পারেননি। তার জেরেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। এরপরেই সম্ভবত স্ত্রী-পুত্রকে খুন করে নিজে আত্মঘাতী হন। পুলিশ ৩জনেরই দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। কিন্তু উৎপলবাবুর পরিবারের দাবি, গোটা ঘটনাটি একটি বড় চক্রান্ত। কার্যত সপরিবারে খুনই হ্যেছেন ওই অধ্যাপক। তাঁদের বক্তব্য, উৎপলবাবুর হাত মোবাইলের হেডফোনের তার দিয়ে বাঁধা ছিল। হাত বাঁধা অবস্থায় কেউ আত্মঘাতী হয় কীভাবে? আর সব থেকে বড় কথা যে সুইসাইড লেটার পাওয়া গিয়েছে তা ১২ পাতা লম্বা। অত বড় সুইসাইড লেটার লেখার সময় কখন পেলেন উৎপলবাবু? সেই মানসিকতাই বা এল কী করে? ১২ পাতার সুইসাইড নোট লিখে কে আত্মহত্যা করে? আর একই সঙ্গে সেই সুইসাইড লেটারে লেখা হয়েছে উৎপলবাবু কীভাবে স্ত্রীকে খুন করলেন, কীভাবে ছেলেকে খুন করলেন, এইসব। কে এভাবে খুনখারাপি করে তা বিস্তারিত লিখে আত্মহত্যা করেন? এইসব প্রশ্নের জেরেই উৎপলবাবুর পরিবারের সদস্যরা ঘটনাটিকে খুনের ঘটনা বলেই দাবি করেছেন।